বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

জাতীয় বেতন কাঠামো বৈষম্য ১৯৭৭-২০১৫ । আজকের বৈষম্যমূলক পে-স্কেলের পেছনের ইতিহাস কি?

বর্তমান পে স্কেল-২০১৫ কার্যকর রয়েছে। জাতীয় পে স্কেল ২০১৫ একটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৈষম্যমূলক পে স্কেল-যেখানে ১১-২০ তম গ্রেডে প্রতিটি স্কেলের ধাপ দূরত্ব গড়ে ৪% অপর দিকে ১-১০ নম্বর গ্রেডে প্রতিটি স্কেলে ধাপ দূরত্ব গড়ে ২০% । যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন দেশে এ চরম বৈষম্য দেখা যায় না।

কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে এত ফারাক পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের পে স্কেল ঘাটলে এমন বৈষম্য খুজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ বলেই এ বৈষম্য সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের বর্তমান পে স্কেলে রয়েছে মোট ২০টি গ্রেড, যেখানে সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৮২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৭৮০০০ টাকা নির্ধারিত। সে হিসাবে এ পে স্কেল কে ১:১০ মাত্রার পে স্কেল বলা যায়। যেখানে আন্তর্জাতিক মান ১:৪ নির্ধারিত রয়েছে।

আরও দেখুন: বাংলাদেশের পে স্কেলে যেভাবে ১১-২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের ঠকানো হয়েছে।

কেমন ছিল স্বাধীনতার পরবর্তী পে -স্কেল?

স্বাধীনতার পরবর্তী পে স্কেল ১৯৭৩ বাংলাদেশের প্রথম পে স্কেল নামে পরিচিত। এটি প্রণয়ন করেছিলেন তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ হিসাবে পাকিস্তান আমলের পে স্কেল ভেঙ্গে একটি আদর্শ পে স্কেল তৈরি করা হয়। যেখানে ১০ টি গ্রেড রাখা হয়েছে। ১ নং গ্রেডে বেতন ধরা হয় ২০০০ টাকা এবং ১০ নং গ্রেডে বেতন ধরা হয় ১৩০ টাকা। পাকিস্তান আমলের চেয়ে খানিকটা কম বেতন ধরায় সচিব বা আমলারা ১-৪ নং গ্রেডের পে স্কেল কে প্রত্যাখ্যান করে কার্যকর করেনি। তারা পাকিস্তান আমলের পে স্কেলেই বেতন গ্রহণ করেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু তাদের মানাতে পারেনি। ১৯৭৩ সালের পে স্কেল দেখলেই বুঝতে পারবেন * চিহ্ন দেওয়া রয়েছে অর্থাৎ তা কার্যকর হয়নি।

আরও দেখুন: বাংলাদেশসহ ৫টি দেশের পে-স্কেলের তুলনামূলক আলোচনা।

পে স্কেল ১৯৭৭

জিয়াউর রহমানের সরকার এসে ১০টি পে স্কেল ভেঙ্গে ২১টি পে স্কেল প্রনয়ন করেন সৃষ্টি হয় বৈষম্য। আজও কর্মচারী ১৯৭৭ সালের পে স্কেল ধাক্কা পোহাচ্ছে। এত পিছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ১৯৭৭ সালের পে স্কেল দিয়ে যে এরশাদের আমলে সিলেকশন গ্রেড টাইম স্কেল দিয়েও এ বৈষম্য কাটানো যায়নি। যেখানে শুধু নিচের গ্রেডের গুলোকে ভেঙ্গে ১১টি গ্রেড বাড়ানো হয়েছে। ১৩,১৪,১৫,১৬ মোট চারটি গ্রেড বানানো হয় একটি গ্রেড ভেঙ্গে। কর্মকর্তাদের দেওয়া হলো Conditions for full pay of post যেখানে কর্মচারীদের এ সংক্রান্ত কোন সুযোগ সুবিধা রাখা হলো না। তৈরি হলো বৈষম্যের পাহাড়। মেজর জিয়াউর রহমান কর্মকর্তা শ্রেণী থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ায় ঢেলে দেওয়া হলো সকল সুযোগ সুবিধা তাদের। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান কর্মচারীদের সারা জনমের জন্য বঞ্চিত করে গেলেন।

জাতীয় বেতন স্কেল ১৯৮৫

সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনকে পাত্তা দিয়ে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এসে কর্মচারীদের জন্য চালু করলেন সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল তাতে কিছুটা হলেও স্বস্ত্বি পেল বঞ্চিত কর্মচারীগণ। তিনি এসে অফেরতযোগ্য ঈদ/ উৎসব ভাতা/বোনাস চালু করলেন। গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ২০টিতে নিয়ে আসলেন। তৎপরবর্তীতে আর বেতন বৈষম্য নিরসন করা হয়নি।

জাতীয় বেতন স্কেল ১৯৯১, ১৯৯৭, ২০০৫, ২০০৯

তারপর যে সব সরকার এসেছেন প্রত্যেকেই পে স্কেলের সময়ে শুধুমাত্র শতকরা হার বৃদ্ধি করে গেছেন। এতে দূর হয়নি কোন বেতন বৈষম্য। এ পারসেন্টেন্স এ শুধু বেতন বৃদ্ধি পেয়ে তৎসময়ের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সমন্বয় হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছিল অসংঙ্গতি। বড় ধরনের কোন পরিবর্তন ছাড়াই গড়পরতা এসব বৈষম্যযুক্ত পে স্কেল জারি করা হয়। পে স্কেল কমিটিতে কর্মচারীদের কোন প্রতিনিধি না থাকায় আমরাগণ তাদের সুবিধা ইচ্ছামত প্রয়োগ করেছে।

পে স্কেল ২০১৫

সর্ব কালের একটি জগন্য জাতীয় পে স্কেল এটি। একের পর এক নিউজ আসতে থাকল ফরাস উদ্দিন এই দিবে সেই দিবে। শেষ পর্যন্ত ফরাস উদ্দিন তিনটি পে স্কেল তৈরি করে উপস্থাপন করেছিলেন কিন্তু আমলারা সেটা হুবহু উপস্থাপন না করে কাটছাট করে এমন একটি বৈষম্য মূলক পে স্কেল তৈরি করে কার্যকর করে দিল যে আমরা তাদের বৈমাত্রেয় ভাই বোন। টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড বন্ধ করে দিয়ে সমতা, নিম্নমানের উচ্চতর গ্রেড দিয়ে ভরাডুবি করা হলো পে স্কেল ২০১৫ এর। লাভবান হয়েছে কর্মকর্তাগণ, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নিম্ন বেতনভূক্ত কর্মচারীগণ। নামে মাত্র বহাল করা হয়েছে ১০ বছর এবং ১৬ পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড তাতে কারও বেতন ৫০-১০০ টাকা বাড়ে। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে কারও বেতন কমেও যাচ্ছে। উচ্চতর গ্রেড প্রদানের ক্ষেত্রে এমণ পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে মামলা হয় তাতে উচ্চতর গ্রেড মঞ্জুরীতে বিরতি টানা হয়েছে।

ইতিকথা:

বাকিটা সবারই জানা সরকার বলছে বারবারই বেতন শতগুন বাড়ানো হয়েছে তবে কেন এত হৈইচই। কেন এত কথা-সরকারি কর্মচারিদের সর্বোচ্চ বেতন বাড়ানো হয়েছে বলে নামে মাত্র একটি বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত একটি কমিটি ২০১৭ সালে গঠন করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় পে স্কেল ২০১৫ পুন:গঠন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কর্মচারীদের জন্য টাইমস্কেল ও সিলেকশনগ্রেড পুন:বহালও অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে।

সকল জাতীয় পে স্কেল গেজেট (১৯৭৩-২০১৫) ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারেন: ডাউনলোড

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *