১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো : ইনক্রিমেন্ট ও বিশেষ প্রণোদনায় নীট বেতন কত?
০১ জুলাই ২০২৫ তারিখ থেকে সরকারি কর্মচারীদের (কর্মকর্তা ব্যতীত) ৮ম পে-স্কেল অনুযায়ী বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট এবং বিশেষ প্রণোদনা যুক্ত হয়ে নতুন বেতন কার্যকর হতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে সরকার গ্রেডভেদে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ সুবিধা (Special Benefit) প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে, যা জুলাই মাসের বেতন থেকে প্রতিফলিত হয়েছে।
গ্রেড ভিত্তিক বিশেষ সুবিধার হার সম্প্রতি জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৯ পর্যন্ত কর্মচারীরা তাদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে, গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। উল্লেখ্য যে, এই বিশেষ সুবিধা চাকরিরতদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১,০০০ টাকা এবং পেনশনারদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বেতন বিশ্লেষণে যা দেখা যাচ্ছে আপনার সরবরাহকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গ্রেড-৮ এর একজন কর্মচারী যার মূল বেতন ২৩,০০০ টাকা, তিনি বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ও ১০% বিশেষ প্রণোদনা (২,৩০০ টাকা) সহ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও টিফিন ভাতা মিলিয়ে মোট ৩৬,২০০ টাকা বেতন পাবেন। জিপিএফ ও অন্যান্য কর্তন বাদে তার নীট বেতন দাঁড়াবে ৩৬,০৪০ টাকা (শিক্ষা ভাতা ব্যতীত)। একইভাবে ইনক্রিমেন্ট পরবর্তী মূল বেতন ২৪,১৫০ টাকা হলে নীট বেতন হবে ৩৭,৭৬৫ টাকা।
অন্যান্য সুবিধা ও কর্তন – বাড়ি ভাড়া: সিটি কর্পোরেশন ও সাভার পৌরসভা ব্যতীত অন্যান্য এলাকার জন্য মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়ি ভাড়া হিসাব করা হয়েছে।
ভাতা: চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং টিফিন ভাতা ২০০ টাকা অপরিবর্তিত থাকছে।
শিক্ষা ভাতা: এক সন্তানের জন্য ৫০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য ১,০০০ টাকা অতিরিক্ত যুক্ত হবে।
কর্তন: কল্যাণ তহবিল ও রেভিনিউ বাবদ ১৬০ টাকা কর্তন করা হবে, তবে জিপিএফ কর্তন কর্মচারীর ব্যক্তিগত হিসাব অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা অর্থ বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী, এই বিশেষ সুবিধা ০১ জুলাই ২০২৫ তারিখ থেকে প্রতি বছর একই তারিখে প্রাপ্য মূল বেতনের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হবে। সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীরাও মূল বেতনের ৫০ শতাংশের ওপর এই সুবিধা পাবেন, তবে বিনাবেতনে ছুটিতে থাকা অবস্থায় কেউ এই সুবিধা পাবেন না।

০১.০৭.২০২৫ খ্রিঃ তারিখে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়ে বিশেষ প্রণোদনা সহ বেতন কত হলো দেখে নিন।
প্রকৃত পক্ষে নিম্নগ্রেডের কত বেড়েছে?
আপনার সরবরাহকৃত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ জুলাই ২০২৫ তারিখে ইনক্রিমেন্ট এবং বিশেষ প্রণোদনা যুক্ত হওয়ার ফলে নিম্নগ্রেডের (গ্রেড ১০ থেকে ১৩) কর্মচারীদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিচে বিভিন্ন গ্রেডের বেতন বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হলো:
১. গ্রেড-১০ (উচ্চ-নিম্ন পর্যায়): এই গ্রেডে একজন কর্মচারীর শুরুতে মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা থাকলে, ইনক্রিমেন্ট ও ১৫% বিশেষ প্রণোদনা (২,৪০০ টাকা) যুক্ত হয়ে মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ২৭,১০০ টাকা। বিএফ ও রেভিনিউ বাবদ ১৬০ টাকা কর্তনের পর নীট বেতন দাঁড়াবে ২৬,৯৪০ টাকা। অর্থাৎ, প্রণোদনা ও ইনক্রিমেন্ট মিলিয়ে তাদের হাতে আসা টাকার পরিমাণ বেশ বেড়েছে।
২. গ্রেড-১১: গ্রেড-১১ এর কর্মচারীদের শুরুতে মূল বেতন ১২,৫০০ টাকা। ইনক্রিমেন্ট ও ১৫% বিশেষ প্রণোদনা (১,৮৭৫ টাকা) সহ তাদের মোট বেতন হয়েছে ২১,৭০০ টাকা। ১৩৫ টাকা কর্তন শেষে তাদের নীট বেতন দাঁড়াবে ২১,৫৬৫ টাকা।
৩. গ্রেড-১২: এই গ্রেডে শুরুতে মূল বেতন ১১,৩০০ টাকা হলে, ইনক্রিমেন্ট ও ১৫% বিশেষ প্রণোদনা (১,৬৯৫ টাকা) যুক্ত হয়ে মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ১৯,৭৮০ টাকা। ১২৩ টাকা কর্তনের পর নীট বেতন হচ্ছে ১৯,৬৫৭ টাকা।
৪. গ্রেড-১৩: গ্রেড-১৩ এর ক্ষেত্রে শুরুতে মূল বেতন ১১,০০০ টাকা। ইনক্রিমেন্ট ও ১৫% বিশেষ প্রণোদনা (১,৬৫০ টাকা) সহ মোট বেতন হয়েছে ১৯,৩০০ টাকা। ১২০ টাকা কর্তন শেষে নীট বেতন দাঁড়াবে ১৯,১৮০ টাকা।
সারসংক্ষেপ: নিম্নগ্রেডের ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধির মূল কারণ হলো ১৫% হারে ‘বিশেষ প্রণোদনা’। আপনার তালিকা অনুযায়ী:
গ্রেড-১০: মূল বেতনের সাথে ২,৪০০ টাকা থেকে ৫,৭৯৬ টাকা পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা যুক্ত হয়েছে।
গ্রেড-১১: ১,৮৭৫ টাকা থেকে ৪,৫৩৪.৫০ টাকা পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা যোগ হয়েছে।
গ্রেড-১২: ১,৬৯৫ টাকা থেকে ৪,০৯৫ টাকা পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা যোগ হয়েছে।
গ্রেড-১৩: ১,৬৫০ টাকা থেকে ৩,৯৮৮.৫০ টাকা পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা যোগ হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সিটি কর্পোরেশন ও সাভার পৌরসভার বাইরের কর্মচারীদের জন্য এই হিসাব প্রযোজ্য এবং জিপিএফ কর্তনের পর প্রকৃত হাতে পাওয়া টাকার পরিমাণ ব্যক্তিভেদে কিছুটা কম হতে পারে। এছাড়া যাদের সন্তান রয়েছে, তারা সন্তান প্রতি অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা শিক্ষা ভাতা পাবেন।



