আমার বাড়ি আমার খামার (একটি বাড়ি একটি খামার) প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২১ তারিখে শেষ হয়েছে, যার বর্তমান স্থায়ী রূপ হচ্ছে- পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক– একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ম্যানুয়াল ২০১৫
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের আওতায় সমিতি গঠন হয়েছে- ০১ লক্ষ ২০ হাজার ৩২৫ টি, উপকারভোগী সদস্য পরিবার- ৫৬ লক্ষ ৭৭ হাজার, সদস্য সঞ্চয়- ২০৮৬ কোটি টাকা, সরকার প্রদত্ত বোনাস- ২০০০ কোটি টাকা, ঘূর্ণায়মান তহবিল- ৩২০০ কোটি টাকা, মোট ঋণ গ্রহণকারী উপকারভোগীর সংখ্যা- ৪৫ লক্ষ ৯৩ হাজার জন, মোট ঋণ বিতরণ- ১১০৪১ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন ঋণ বিতরণ- ৪৯০ কোটি টাকা, প্রকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়বর্ধক খামারের সংখ্যা- ৩৩ লক্ষ ৭৩ হাজার, মোট তহবিল- ৭৬০৯ কোটি টাকা। (তথ্য: ৩০ জুন, ২০২১ পর্যন্ত)।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত সমবায় সমিতি ভিত্তিক একটি দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক পরিকল্পনা।[১] এই প্রকল্পটির আওতায় গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে তৈরি করার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়; কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদকাল এক বছর কমিয়ে আনা হয়। ২০২০ সালের মধ্যে দেশে দারিদ্রতার হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।[২] সমন্বিত গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কার্যাবলির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গড়ে তোলার প্রয়াসে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পে প্রাথমিক জরিপের ভিত্তিতে গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য সমবায় ভিত্তিক ‘গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন’ সৃষ্টি করে সদস্যদের দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, ঋণ, অনুদান ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয় এবং সেই সাথে দরিদ্রদের মধ্যে দুগ্ধবতী গাভি, মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও ফসলের বীজ বিতরণ করা হয়।
এই প্রকল্পটি ৬৪ জেলার ৪৯০ উপজেলার ৪,৫০৩টি ইউনিয়নের ৪০,৯৫০টি গ্রামে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় এই প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও প্রথম সংশোধনীতে তা পুনরায় ১, ৪৯৩ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়; যেটি বর্তমানে চলমান দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৩,১৬৩ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পের বর্তমান মূলধন ৮,০০০ কোটি টাকা এবং গঠিত সমিতির সংখ্যা ৮০,০০০।[১] প্রথম সংশোধিত প্রকল্পটির কার্যক্রম দেশের মোট ১,৯৩২টি ইউনিয়নে চলমান আছে; যেটি পুনরায় সংশোধন করে দেশের সকল ইউনিয়নে (৪,৫০৩টি ইউনিয়ন) বিস্তৃত করা হয়েছে।
বিনা সুদে লোন প্রদান করা হয় এবং মেয়াদ বা কার্যকাল শেষে ১০% সার্ভিস চার্জ নেয়া হয় / এক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে স্বনির্ভরের চেষ্টা করা হয়।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকেরও এখন একই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
Caption: ekti bari ekti khamar project Loan Manual
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। পুঁজি গঠন প্রক্রিয়া যা অনুসৃত হয়েছিল
- প্রথমেই ৮৫,০০০ গ্রামে গ্রাম প্রতি ৬০টি দরিদ্র পরিবারের পুঁজি গঠন করা হবে ।
- দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গঠিত পুঁজিতে তাদের অংশীদারিত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের সাপ্তাহিক/মাসিক সঞ্চয়ের বিপরীতে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হতে সমপরিমাণ (তবে মাসে ২০০ টাকার অধিক নয়) অর্থ প্রদান করা হবে ।
- অর্থাৎ রহিম বা রহিমা সপ্তাহে ৫০/- (পঞ্চাশ) বা মাসে ২০০/- (দুইশত) টাকা জমা দিলে বছরে তার জমা হবে ২৪০০/- টাকা এবং সরকার বছরে তিন কিস্তিতে তার একাউন্টে জমা দিবে ২৪০০/- টাকা ।
- অর্থাৎ রহিমার বছরে পুঁজি গঠিত হবে ৪৮০০/- টাকা এবং প্রকল্প কালীন ২ বছরে তার পুঁজি হবে ৯,৬০০/-, যা ব্যাংক সুদসহ দাঁড়াবে ১০,০০০/- টাকায় ।
- অন্য দিকে প্রতি গ্রামে গঠিত উক্ত ৬০ সদস্যের সমিতিতে প্রকল্প থেকে বছরে তিন কিস্তিতে ১,৫০,০০০/- টাকা প্রদান করা হবে সমিতির নিজস্ব মূলধন হিসেবে।
- অর্থাৎ সমিতিভুক্ত ৬০টি দরিদ্র পরিবারের বাৎসরিক মূলধন দাঁড়াবে (৬০ জন x ৫,০০০ = ৩,০০,০০০ + সমিতিতে দেয় ১,৫০০০০) ৪,৫০০০০/- টাকায়, দুই বছরে এ মূলধন হবে ৯,০০,০০০/- টাকা ।
এ প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য কি ছিল?
দেশের সকল (৮৫০০০) গ্রামের ৫১ লক্ষ দরিদ্র/অতিদরিদ্র (প্রতি গ্রামে ৬০টি) পরিবারসহ সমিতিভূক্ত সকল পরিবারকে গ্রাম সংগঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। ২০১৩ সালের মধ্যে গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে কৃষি, মৎস্য চাষ, পশু পালন ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে একটি কার্যকর “খামার বাড়ি” হিসেবে গড়ে তোলা। ২০১১ সালের মধ্যে প্রতি গ্রাম থেকে ৫ জন করে (কৃষি, পশু পালন, হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ বৃক্ষ নার্সারী ও হর্টি কালচার ট্রেডের প্রতি বিষয়ে একজন) মোট ৪,২৫,০০০ সদস্যকে জীবিকাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে খামার স্বেচ্ছাসেবী গঠন করা এবং অন্যান্য বিষয়ে গ্রামকর্মী সৃজন করা। ২০১২ সালের জুনের মধ্যে ঋণ সহায়তার মাধ্যমে নিজে/সদস্যদের নিয়ে প্রতি গ্রামে ৫টি করে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষিত কর্মীদের বাড়ীতে মোট ৪,২৫,০০০ টি প্রদর্শণী খামার গড়ে তোলা । খামার স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে অবশিষ্ট সরাসরি উপকারভোগী ৪৬,৬৭,০০০ পরিবারসহ গ্রামের অন্যান পরিবারে অনুরূপ খামার ব জীবিকাভিত্তিক কার্যক্রম নির্মিত করা ।২০১৩ সালের মধ্যে অনিবা। ভূমি মালিকদের ভূমিসহ গ্রামীণ সকল সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিত করা। ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্প থেকে গ্রাম সংগঠনের অতিদরিদ্র / দরিদ্র সদস্যদের মাসিক সঞ্চয়ের বিপরীতে সমপরিমান কন্ট্রিবিউটরি মাইক্রোসেভিংস প্রদানের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের বছরে ব্যক্তি সঞ্চয় ন্যূনতম ৫,০০০/= টাকায় উন্নীত করা যা ২ বছরে ১০ হাজার এবং ৫ বছরে ৪০ হাজার টাকায় উন্নীত হবে । ব্যক্তি তহবিলে কন্ট্রিবিউটরি অর্থের অতিরিক্ত প্রতিটি সংগঠনকে বছরে তাদের নিজস্ব সঞ্চয়ের সমপরিমাণ প্রকল্প থেকে মূলধন সহায়তার মাধ্যমে দু’বছরে মোট ৯,০০,০০০/= টাকা গ্রাম সংগঠন তহবিল গড়ে তোলা। প্রধান কৃষি ফসলের পাশাপাশি আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, মসলা, বিভিন্ন ফল এবং অন্যান্য অপ্রধান কৃষি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রতিটি বাড়ি সংশ্লিষ্ট জমি ব্যবহার করা । * মাছ চাষের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগণের মাধ্যমে অন্যান্য aqua _culture কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা । উপজেলা পর্যায়ে বর্তমান সুবিধা (বিআরডিবি/বিএডিসি’র গোডাউন) ব্যবহার করে একটি করে সমবায়ভিত্তিক বাজার ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ (হিমাগারসহ) ব্যবস্থা গড়ে তোলা।