সরকারি চাকরি মানেই সোনার হরিণ, প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলে মেয়ে এই সোনার হরিণটির পিছনে ছুটে চলেছে। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের আধিক্য থাকায় অনার্স-মাস্টার্স পাশ করা মেধাবী ছেলে মেয়েরা চাকরি না পেয়ে অফিস সহায়ক বা নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি নিচ্ছে। একজন অফিস সহায়ক বা নিরাপত্তা প্রহরীর প্রারম্ভিক বেতন ৮২৫০ টাকা।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে বসবাস করলে তার বাড়ি ভাড়া ধরা হবে ৫,৬০০ টাকা। যা দিয়ে কোন ভাবেই পরিবার সহ বসবাসের জন্য একটি বেসরকারি বাসা ভাড়া পাওয়া সম্ভব না। ঢাকা শহরে সরকারি কোয়ার্টারগুলোর সংখ্যা সীমিত। ওখানে নতুনদের জায়গা করে নেয়া সে এক মহা ব্যাপার। আসুন দেখে নিই শুধুমাত্র গ্রেড বৈষম্যের কারণে মূল বেতনের সাথে বাড়ি ভাড়াও কিভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈষম্য তীব্র আকার ধারণ করেছে।
১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারী: বর্তমান সময়ে একটি বেসরকারি বাসা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে নিতে চাইলে আপনাকে কমপক্ষে ৯০০০ টাকা গুনতে হবে। ছোট পরিবার হলেও ৯০০০ টাকার কমে আপনি কোন ভাবেই বাসা ভাড়া নিতে পারবেন না। অনার্স -মাস্টার্স পাশ করা একজন অফিস সহায়ক বা নিরাপত্তা কর্মীকে আপনি বস্তীতে থাকার পরামর্শ দিতে পারেন না। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে একজন অফিস সহায়ক বা নিরাপত্তা কর্মীকে অফিস সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। যদি তাকে ৫৬০০ টাকা বাসা ভাড়া দেওয়া হয়, ৯০০০ টাকা বাসা ভাড়া যোগাতে তাকে বিভিন্ন পথে মাসে ন্যূনতম ৩৪০০ টাকা উৎকোচ সংগ্রহ করতে হয় শুধুমাত্র ঢাকা শহরে বসবাসের জন্য।
একটি আদর্শ পে স্কেল যদি দেয়া হত অন্তত মাথা গোজার ঠাই নিয়ে তাদের দু:চিন্তায় দিন অতিবাহিত করতে হতো না। অপর দিকে দেখুন ১১ গ্রেডের একজন কর্মচারী বাসা ভাড়া ৭৫০০ টাকা, এখানে বাসা ভাড়া ঘাটতি, কিভাবে মেটাবে এসব কর্মচারী তাদের বাসা ভাড়া?, কর্তৃপক্ষ একটু সদয় হয়ে শুধুমাত্র ১-২০ গ্রেডের প্রতিটি গ্রেডের পার্থক্য বা ব্যবধান সমান করে দিলে এ সমস্যার আশু সমাধান করা যায়।বর্তমানে দেশে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী।
এবার আসুন ১-১০ গ্রেডের কর্মকর্তা: একজন কর্মকর্তার বেসিক বেশি হওয়ার কারণে যোগদান কাল থেকেই ১২১০০ টাকা বাসা ভাড়া পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে তিনি ১১০০০ টাকায় একটি টাইলস করা বাসা ভাড়া পেতে পারে। থাকার সু-ব্যবস্থা হলে মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি পূরণ হয়ে গেল। একজন কর্মকর্তা চাইলে শতভাগ মনোযোগ দিয়ে অথবা কোন প্রকার উৎকোচ গ্রহণ না করেই পরিবার নিয়ে মাথা গোজার ঠাই করে নিতে পারে। মৌলিক চাহিদা পূরণে আমরা কত কিছুই না করি, অথচ একজন সরকারি কর্মকর্তা চাকরির শুরুতেই ভাল মানের বাসস্থান পেতে পারে। একজন সর্বোচ্চ গ্রেডে কর্মকর্তার বাড়ি ভাড়া ৩৯,০০০ টাকা । তিনি চাইলে প্রতি মাসে ১৬,৫০০ টাকা করে দুটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে পারেন।
সরকারি চাকরিজীদের বাড়ি ভাড়ায় এ কেমন বৈষম্য যে, একজন প্রতি মাসে ৩৯০০০ টাকা শুধু বাসা ভাড়া হিসাব পান অন্যজন ৫৬০০ টাকা বাসা ভাড়া পেয়ে বাসা-ই নিতে পারছেন না! কর্মস্থল একই তাই কাছাকাছিই বাসা নিয়ে থাকতে হয়। ঢাকা সিটিকর্পোরেশনের আওতায় কোন ভাবেই পরিবার পরিজন নিয়ে ৫৬০০ টাকায় বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না। প্রজাতন্ত্রের একজন সেবক হয়ে কিভাবে একটু বাসস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে একজন কর্মচারী।
যদি এভাবেই বলেন যে, কর্মকর্তা মানেই কর্মকর্তা, সুতরাং তাদের বাড়ি ভাড়া তো কয়েকগুন বেশি হওয়া দরকার, তারা অনেক ভাল, আলীশান ও বড়সড় বাসায় থাকবে এটাইতো স্বাভাবিক!
উত্তরে বলবো তাহলে চিকিৎসা ভাতাও কর্মকর্তাদের অনেক বেশি হওয়া দরকার, তারা তো বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নেবে, অ্যাপোলো, স্কয়ার হসপিটালে চিকিৎসা নিবে, তবে কিছুতেই তাদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ টাকা হতে পারে না। কর্মচারীদের সেক্ষেত্রে সরকারি হসপিটাল বা হাতুরে ডাক্তার দেখানোর জন্য ৩০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা করা উচিৎ ছিল।
অনেক কর্মকর্তারই প্রশ্ন কেন আপনি সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বাড়ি ভাড়ায় তুলনা করছেন? এটি আসলে কোন তুলনা নয়। এটি মূলত মৌলিক অধিকার রক্ষা করে একই কর্মস্থল অসম বাড়ি ভাড়া নিয়ে কর্মরত থাকা প্রসঙ্গে আলোচনা টানা হয়েছে। একজনে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার অর্ধেক পান অন্যজন প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার দ্বিগুন বা তিনগুন পান এটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
অনেকেই বলছেন এট্রি লেভেল তুলনা করতে, আসুন আমরা কর্মকর্তা এন্ট্রি লেভেল ৯ম গ্রেড ও কর্মচারী এন্ট্রি লেভেল ২০ গ্রেড এটি নিয়ে আলোচনায় আসি, ৯ম গ্রেডে ঢাকা সিটিকর্পোরেশনে বাড়ি ভাড়া ১২,১০০ টাকা অপরদিকে ৫,৬০০ টাকা মাত্র। আমি বলবো ১২,১০০ টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া পাবেন কিন্তু ৫৬০০ টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে থাকার মত বাসা কি একজন কর্মচারী ভাড়া পাবেন? না কখনই না। মূলত চাকরির শুরু থেকে ই তাকে বাসস্থান ব্যবস্থার চাপে পড়তে হচ্ছে।
একজন সরকারি কর্মচারী চাকরির শুরুতে তাকে বস্তি টাইপের একটি বাসা নিয়ে থাকতে হচ্ছে। হাজারো বিশ গ্রেডের কর্মচারী ঢাকা শহরে একটিমাত্র কক্ষ ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছে। এমনটি হওয়া একটি সরকারি পোষ্যের জন্য হওয়া কি সাধারণত বা উচিৎ একটি কাজ হতে পারে? কিভাবে একজন নীতি নির্ধারক প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে থেকে মাত্র ৫৬০০ টাকায় ঢাকা শহরের বাসা ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেন? এটি প্রতিটি কর্মচারীর প্রশ্ন।
আবার, আসুন চাকরি শেষ পেনশনে যাবেন এমন দুটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বাসা ভাড়ার চিত্র দেখি, ধরি ৭৮০০০ টাকা নিয়ে একজন কর্মকর্তা পেনশনে যাচ্ছেন শেষ বছর তার বাসা ভাড়া দাড়াবে ৩৯০০০ টাকা অপর দিকে ১১ তম গ্রেডে কোন কর্মচারী ৮ বছরের বেশি থাকতে পারবে না। ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি পেয়ে এসে তার মূল বেতন অনুসারে ৮ম বছরে বাড়ি ভাড়া দাড়াবে ৯,৬৯১ টাকা মাত্র। অর্থাৎ চাকরির শেষ দিনে একজন কর্মকর্তা ৩টি বাসা বাড়ার সমান বাড়ি ভাড়া পাবেন উল্টোদিকে চাকরির শেষ বছরে এসেও ৯,৬৯১ টাকা দিকে একটি ভাল একটি টাইলস করা বাসায় থাকতে পারবে না।
এখানে দেখা যাচ্ছে একজন কর্মকর্তা চাকরির শুরুতে ১২১০০ টাকা বাড়ি ভাড়া পান অন্য দিকে একজন কর্মচারী চাকরির শেষে ৯৬৯১ টাকা বাড়ি ভাড়া পান। মৌলিক চাহিদা পূরণে কিভাবে জাতীয় পে স্কেল ২০১৫ একটি আদর্শ ভূমিকা পালন করে বলে আপনারা মনে করছেন আমার বোধগম্য নয়। শুধুমাত্র অন্ধ, স্বার্থপর ও বিবেক বর্জিত একজন মানুষ বলতে পারে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ ঠিক ও উপর্যুক্ত!
কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বাসা ভাড়ায় পার্থক্য ৩৩,৪০০ টাকা এ সংক্রান্ত সিডিউল দেখে নিন: ডাউনলোড
Great article!
আস্সালাম আলাইকুম, এক সহকর্মীর জুন/২০ মাসে মূল বেতন ছিল ১৫,৮৮০ টাকা ৪৫% হারে বাড়ী ভাড়া ভাতা উত্তোলন করতেন ৭১৪৬ টাকা। জুলাই/২০ মাসে ইন্ক্রিমেন্ট পেয়ে মূল বেতন হলো ১৬৬৮০ টাকা ৪০% হরে বাড়ী ভাড়া ভাতা হলো ৭,০০০টাকা সিলিং। এখন তিনি বাড়ী ভাড়া ভাতা কত পাবেন ৭১৪৬ টাকা নাকি ৭,০০০ টাকা?
দয়া করে বেতন ভাতাদি কম না পাওয়া সংক্রান্ত পরিপত্রসহ প্রেরণের জন্য অনুরোধ করছি।
৭০০০/-
সহকর্মী জুন 2020 মাসের মূল বেতন ছিল 15 হাজার 880 টাকা 45 শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা উত্তোলন করতেন 7140 টাকা জুলাই 2020 মাসে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে মূল বেতন হল ১৬৬৮০ টাকা 40 শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা 7000 টাকা সিলিং এখন তিনি বাড়ি ভাড়া ভাতা কত পাবেন৭১৪০ টাকা নাকি 7000 টাকা ? বেতন ভাতাদি কম না পাওয়া সংক্রান্ত পরিপত্র টি দরকার
৭০০০ টাকা