সার্ভিস রুলস । নীতি । পদ্ধতি । বিধি

সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ও প্রবেশের নতুন নিয়ম: একনজরে বর্তমান নীতিমালা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের বয়সসীমা নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশী ও বর্তমান কর্মকর্তাদের আগ্রহ সবসময়েই তুঙ্গে। সাধারণ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অবসরের বয়সসীমা নির্দিষ্ট থাকলেও, সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম। একইসঙ্গে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাতেও সম্প্রতি এসেছে বড় পরিবর্তন। বর্তমান প্রচলিত বিধিমালা ও সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের আলোকে বিস্তারিত প্রতিবেদন।

সাধারণ সরকারি চাকরিতে অবসর ও স্বেচ্ছায় অবসর প্রচলিত সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, সাধারণ সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। অর্থাৎ, একজন কর্মী ৫৯ বছর বয়সে পৌঁছালে তিনি পিআরএল (PRL) বা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যান।

তবে চাকরির মেয়াদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কোনো সরকারি কর্মচারী যদি তার চাকরির ২৫ বছর পূর্ণ করেন, তবে তিনি চাইলে স্বেচ্ছায় অবসরে (Voluntary Retirement) যেতে পারেন। যদিও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো বা স্বেচ্ছায় অবসরের নিয়ম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রস্তাবনা প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা হয়, বর্তমানে এই নিয়মই কার্যকর রয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনীতে ভিন্ন নিয়ম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর মতো সশস্ত্র বাহিনীগুলোতে অবসরের নিয়ম সাধারণ সরকারি চাকরির মতো নির্দিষ্ট বয়সে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে পদমর্যাদা (Rank) এবং চাকরির মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে অবসরের সময় নির্ধারিত হয়।

  • সেনাবাহিনী: সাধারণ সৈনিকরা সাধারণত ২১ বছর এবং সার্জেন্ট পদে কর্মরতরা ২৪ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ পান।

  • বিমান বাহিনী: বিমান বাহিনীতেও পদের ওপর ভিত্তি করে চাকরির মেয়াদ ভিন্ন হয়। যেমন—একজন স্কোয়াড্রন লিডার ২৪ বছর এবং বাহিনীর সর্বোচ্চ পদ বা এয়ার চিফ মার্শাল ৩৫ বছর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকতে পারেন।

প্রবেশের বয়সে বড় পরিবর্তন অবসরের নিয়মের পাশাপাশি চাকরিতে প্রবেশের বয়সেও সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ প্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ৩০ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তা ছিল ৩২ বছর। তবে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাধারণ প্রার্থীদের জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি লাখো চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন।

পর্যবেক্ষণ চাকরির মেয়াদ বাড়ানো বা কমানো নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন বা প্রস্তাবনা থাকলেও, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বর্তমানে উল্লেখিত বয়সসীমা ও নিয়মগুলোই কার্যকর। সিভিল সার্ভিস এবং সশস্ত্র বাহিনীর কাঠামোগত পার্থক্যের কারণেই এই ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে।

অবসরের বয়সসীমা ও প্রবেশের নতুন নিয়ম

নব্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির বয়স ১৮-১৯ বছর হলে কত বছর চাকরি করতে পারবে?

সাধারণ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অবসরের বয়সসীমা যেহেতু ৫৯ বছর, তাই ১৮ বা ১৯ বছর বয়সে চাকরিতে যোগদান করলে একজন কর্মী কত বছর চাকরি করতে পারবেন, তার হিসাবটি নিম্নরূপ:

হিসাব:

  • ১৮ বছর বয়সে যোগ দিলে: ৫৯ (অবসরের বয়স) – ১৮ (যোগদানের বয়স) = ৪১ বছর

  • ১৯ বছর বয়সে যোগ দিলে: ৫৯ (অবসরের বয়স) – ১৯ (যোগদানের বয়স) = ৪০ বছর

সারসংক্ষেপ: একজন নব্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি ১৮-১৯ বছর বয়সে সাধারণ সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, তবে তিনি সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪১ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ পাবেন।

সুবিধা: চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলেই পূর্ণ পেনশনের যোগ্যতা অর্জিত হয়। যেহেতু ১৮-১৯ বছরে যোগদানকারী ব্যক্তি ৪০-৪১ বছর চাকরি করার সুযোগ পান, তাই তিনি অবসরের সময় সর্বোচ্চ হারে গ্রাচুইটি ও পেনশন সুবিধা এবং ছুটি পাওনা (Leave Preparatory to Retirement – LPR) ভোগ করতে পারবেন।

দ্রষ্টব্য: এটি সাধারণ সরকারি চাকরির (সিভিল সার্ভিস) জন্য প্রযোজ্য। সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে নিয়মটি পদমর্যাদা ও নির্দিষ্ট চাকরির মেয়াদের ওপর নির্ভর করে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *