সরকারি চাকরি করলে প্রতিমাসেই ছুটি জমা হয়- চাকরি না করে ছুটিতে থাকলে ছুটি জমা হয় না- চলুন আজ ছুটির হিসাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই –সরকারি কর্মচারীদের ছুটির হিসাব ২০২৪
ছুটি হিসাব এর জন্য কর্মকাল কিভাবে গণনা করা হয়? ‘ছুটি হিসাব’ এর জন্য কর্মকাল গণনার ক্ষেত্রে কিছু কাল বা সময় গণনাযোগ্য যেমন- প্রকৃত কর্মকাল, যোগদানকাল, বাধ্যতামূলক অপেক্ষাকাল, শিক্ষানবিশকাল, প্রশিক্ষণ কোর্সে ব্যয়িত সময়কাল, প্রেষণকাল বিবেচনায় আনতে হবে। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে চাকরিকাল হিসাবে আসবে আর কোন কোন ক্ষেত্রে হিসাবে আসবে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেষণকাল কি ছুটির হিসাবে আসবে? না। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/কর্পোরেশন/ রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক/অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান/স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রেষণকাল । উল্লেখ্য পেনশন সহজীকরণ নীতিমালার ২.০৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে এইরূপ প্রেষণকালের জন্য লিভ সেলারী কন্ট্রিবিউশন জমা দিতে হইবে না । তবে বহির্বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদেশী সরকার বা সংস্থার অধীনে চাকরিকাল। তবে এইক্ষেত্রে লিভ সেলারী কন্ট্রিবিউশন জমা দিতে হইবে। স্মারক নং অম/অবি/প্রবিধি-৩/বিবিধ-২/২০০১/৪৭, তারিখ : ৮ মে, ২০০১ অনুসারে একজন সরকারী কর্মচারীর বৈদেশিক চাকরিকালের লিভ সেলারী কন্ট্রিবিউশন উক্ত কর্মচারী বৈদেশিক চাকরিতে যোগদানের পূর্বে সরকার হইতে প্রাপ্ত তাঁহার সর্বশেষ মাসিক মূল বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হইবে।
কোন কোন ছুটি ছুটির হিসাবে আসবে? কিছু ছুটি মূলত ছুটি নয় বরং চাকরিকাল হিসেবে গন্য হইবে। যেমন- নৈমিত্তিক ছুটিকাল, সংগনিরোধ ছুটিকাল, নৈমিত্তিক ছুটিকাল, সংগনিরোধ ছুটিকাল ইত্যাদি । উল্লেখ্য নৈমিত্তিক ছুটি এবং সংগনিরোধ ছুটিকাল ব্যতীত অন্য কোন প্রকার ছুটিকালই ‘ছুটি হিসাব’ এর জন্য কর্মকাল হিসাবে গণনা করা যাইবে না ।
উদাহরণ : একজন কর্মচারী ১৯ জুন, ১৯৯১ তারিখে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ১০ মে, ২০১১ তারিখ হইতে ৪ মাসের ছুটির আবেদন করে। ইতিপূর্বে তিনি ২ বৎসর অধ্যয়ন ছুটি, ৬ মাস প্রসূতি ছুটি, ৩ মাস গড় বেতনে অর্জিত ছুটি, ৩ মাস অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি, ২ বৎসর অসাধারণ ছুটি এবং ২১ দিন সংগনিরোধ ছুটি ভোগ করেন। এইক্ষেত্রে তাহার “ছুটি হিসাব” এর জন্য কর্মকাল হইবে
মোট চাকরিকাল বের করার নিয়ম কি? / কর্মকালই মূলত চাকরিকাল চলুন উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিস্কার হই
সার্ভিস বুক বা খতিয়ান বহিতে অসাধারণ ছুটি এন্ট্রি করতে হবে। কিন্তু মোট অর্জিত ছুটি তা গড় বেতনে বা অর্ধ গড় বেতনে যে ছুটিই থাকুক না কেন তা হতে এ ছুটি বিয়োগ হবে না। অর্জিত ছুটি মূলত জমা না থাকলে অসাধারণ ছুটি বা বিনা বেতনে ছুটির আবেদন করে মঞ্জুর করা যায়। অন্য দিকে শাস্তি স্বরপ অন্য ছুটি জমা থাকা সত্বেও নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে কর্তৃপক্ষ অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করতে পারে। অসাধারণ ছুটি অবশ্যই নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করবে। অসাধারণ ছুটির কারণে পেনশযোগ্য চাকরিকাল পিছিয়ে যায় কিন্তু এতে জেষ্ঠ্যতা ক্ষুন্ন হয় না। উপরের চিত্রে দেখুন অসাধারণ ছুটি এন্ট্রি করা হয়েছে কিন্তু কোন প্রকার ছুটি হতে বাদ যায়নি। এ ছুটি এন্ট্রি না করলেও চলবে।
Caption: Full pdf of service calculation rules
সার্ভিস বুক লেখার নিয়ম ২০২৪ । খতিয়ান বা চাকরির বইতে কোন কলামে কি লিখতে হয় জেনে নিন
ধাপ-১। কলাম ২ ও ৩ এ কর্মকাল লিখতে হবে। যেমন ৫-৪-২০১৩ হইতে ১৬-০৪-২০১৩ পর্যন্ত লেখা হয়েছে। ১৬-০৪-২০১৩ তারিখ হতে ৫-৪-২০১৩ তারিখ বিয়োগ করে ১১ দিন কর্মকাল পাওয়া গেছে যা ৪ নম্বর কলামে ব-ম-দি তে দিনের ঘরে লেখা হয়েছে।
ধাপ-২। কলম-৫ ও ৬ তে কলাম ৪ এ পাওয়া দিনকে ভাগ করে গড় বেতনে ছুটি ও অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বের করে লিখতে হবে। যেমন এখানে ১১ দিনকে ১১ দিয়ে ভাগ করে গড় বেতনে ছুটি এবং ১২ দিয়ে ভাগ করে অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বের করতে হবে। এখানে গড় বেতনে ছুটি ১ দিন পাওয়া গেছে যা ৫ নম্বর কলাম এবং ১২ দিয়ে ভাগ করে ১ এর কম পাওয়া গেছে তবু ১ লেখা হয়েছে। মনে রাখবেন ০.৫ বা অর্ধাংশ বা তার উপরে আসলে ১ দিন ধরার নিয়ম রয়েছে।
ধাপ-৩। কলাম ৯ ও ১০ এ পূর্বের জের বা ব্যালেন্স ছুটির সাথে ৫ ও ৬ কলামের ছুটি যোগ হয়ে দেখাতে হবে। যেমন ১ বছর ৯মাস ৫ দিনের সাথে ১ দিন যোগ হয়ে ১ বছর ৯ মাস ৬ দিন লেখা হয়েছে ৯ নম্বর কলামে এবং অর্ধ গড় বেতনে জমা ১ বছর ১০ মাস ২১ দিনের সাথে ১ দিন যোগ হয়ে ১ বছর ১০ মাস ২২ দিন লেখা হয়েছে ১০ নম্বর কলামে।
ধাপ-৪। কোন প্রকার ছুটি কাটিয়ে থাকলে তা ১১ নম্বর কলামে লিখতে হয়। যেমন-এখানে ১৭-০৪-২০১৩ তারিখ হতে ১২-০৫-২০১৩ তারিখ পর্যন্ত ২৬ দিন গড় বেতনে অর্জিত ছুটি কাটানো হয়েছে তা লিখে ১২ নম্বর কলামে ২৬ দিন দেখানো হয়েছে। যদি ৪০ দিন কাটানো হত তবে মাসের ঘরে ১ মাস দিনের ঘরে ১০ দিন লিখতে হতো। মোট কথা ১১ ও ১২ কলামে ছুটি দেখাতে হবে। যে প্রকার ছুটি এখানে দেখানো হবে সেই প্রকার ছুটি হতে এ ছুটি বাদ যাইবে।
ধাপ-৫। কলাম ১৪ থেকে ২০ কলামের আগ পর্যন্ত ছুটির ধরন বড় করে লিখবেন। যে সকল ছুটি (Leave) ছুটি হিসাবে ডেবিট হয় না।
ধাপ-৬। কলাম ২১ ও ২২ এ গড় বেতনে ছুটি ও অর্ধ গড় বেতনে ছুটির ব্যালেন্স দেখাতে হয়। এখানে ৯ ও ১০ নম্বর কলামে দেখনো ছুটির ব্যালেন্স হতে কাটানো ২৬ দিন ছুটি বাদ দিবো। যেহেতু গড় বেতনে ছুটি তাই ৯ নম্বর কলামে দেখানো ছুটি হতে বাদ দিবো। যে প্রকার ছুটি কাটানো হবে সেই প্রকার ছুটি হতে বাদ দেওয়া হবে। ৯ নম্বর কলাম হতে ২৬ দিন ছুটি বাদ দিয়ে ২১ নম্বর কলামে ১ বছর ৮ মাস ৯ দিন ছুটি দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ১০ নম্বর কলামের অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বা মেডিকেল ছুটি যেমন আছে ২২ নম্বর কলামে তেমনই বসানো হয়েছে অর্থাৎ ১ বছর ১০ মাস ২২ দিন।
সার্ভিস বই তৈরির নিয়ম কি?
সরকারি চাকরির খতিয়ান বই বা সার্ভিসবুক সেগুনবাগিচা, ঢাকায় বিভিন্ন বইয়ে দোকানে পাওয়া যায়। তবে মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ঢাকার সামনের দোকানগুলোতে এ সার্ভিস বুক মাত্র ২টি টাকায় পাওয়া যায়। তবে একাধিক বই একত্র করে খাতার মত বাধাই করে নিলে সুবিধা হয়। তাই একাধিক সার্ভিসবুক ক্রয় করে বাঁধাইয়ের দোকান থেকে বাঁধাই করে নিতে হবে। সার্ভিস বুক দু’কপি সংগ্রহ করতে হয়। একটি দপ্তরে জমা দিতে হবে যা দপ্তর প্রধানের তত্বাবধানে মেইনটেইন করা হবে এবং অপরটি কর্মচারীর নিজের কাছে জমা থাকবে। প্রতি বছর একই ভাবে দুটি সার্ভিস বই আপডেট করতে হবে।
https://bdservicerules.info/%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a7%ab-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0/