সরকারি ও বেসরকারি পেনশনের মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে- সর্বজনীন বা বেসরকারি পেনশন মূলত চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে প্রদান করা হয় – সরকারি পেনশন VS সর্বজনীন পেনশন
সরকারি পেনশন কেমন?– বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মূল বেতন বেইজড করে পেনশন নির্ধারণ হয়। প্রতিবছর মূল বেতন ৫% হারে বাড়তে থাকে এবং চাকরির বয়স বা সার্ভিস পিরিয়ড যত বাড়বে পেনশন কত বেশি পাওয়া যাবে। এছাড়াও এককালীন ও মাসিক পেনশন দুটি সুবিধা ছাড়াও জিপিএফ স্কিমে জমাকৃত অর্থের উপরও ১৩% মুনাফা পেয়ে থাকেন। ৫ বছরের পর যে কোন সময় মৃত্যুবরণ করলে পারিবারিক পেনশন মূল বেতন কত ছিল তার উপর নির্ভর করে হিসাব করা হয়। মাসিক পেনশনের উপর প্রতি বছর ৫% হারে পেনশন বৃদ্ধি পেতে থাকে যা মূল্যস্ফিতির সাথে সমন্বয় হয়। তাছাড়া সরকরি কর্মচারীদের পেনশন পেতে কোন চাঁদা পরিশোধ করতে হয় না।
সরকারি পেনশন হিসাব করার নিয়ম কি? ধরুন, আপনার শেষ Basic বা প্রত্যাশিত শেষ বেতন ২৮০০০/= টাকা। তাহলে লাম্পগ্র্যান্ট : শেষ Basic×১৮ হবে। মূল বেতনের ১৮ মাসের সমপরিমান। উদাহরণ: লাম্পগ্র্যান্ট, যা পেনশন/পিআরএল এর শুরুতে এককালীন পাবেন ২৮০০০ x ১৮=৫,০৪,০০০/=টাকা (তবে এটা নির্ভর করে ওই ব্যাক্তির ছুটি পাওনা থাকার উপর। যত মাস ছুটি পাওনা তাতো মাসের Basic একত্রে পাবেন, তবে সেটা সর্বোচ্চ ১৮ মাসের বেশি নয়)। এছাড়াও গ্রাচুইটি হিসাব: যা পিআরএল (PRL) শেষ হলে এককালীন পাবেন। ধরুন পি আর এল শেষে ইনক্রিমেন্টসহ আপনার শেষ বেসিক ২৮০০০+১২০০ (ইনক্রিমেন্ট)=২৯,২০০ টাকা বা, শেষ মূল বেতন বা ইএলপিসি অনুসারে (বেসিক×৯০%)÷২=( )×২৩০ । উদাহরণ: ২৯,২০০×৯০%)÷২=()×২৩০=( ) =(২৬২৮০÷২)×২৩০ =১৩১৪০×২৩০ =৩০,৩২,০০০/=টাকা। এখানে শেষ বেসিক এর সাথে পি আর এল এ থাকার সময়ের একটি ইনক্রিমেন্ট যোগ হবে এবং সেইভাবে হিসাব করতে হবে। পেনশন নির্ণয় সূত্র: (শেষ বেসিক x ৯০%)÷২ = ( )+১৫০০ (মাসিক চিকিৎসা ভাতা) উদাহরণ: (২৯,২০০×৯০%)÷২=()+১৫০০/=টাকা। =(২৬,২৮০÷২)=()+১৫০০/=টাকা। =১৩,১৪০+১৫০০/=টাকা =১৪,৬৪০/= টাকা যা আপনি প্রতি মাসে চিকিৎসা ভাতাসহ পেনশন পাবেন, আর প্রতি বছর দুইটি উৎসব ভাতা ও পহেলা বৈশাখে ২০%হারে একবার ভাতা পাবেন।
সর্বজনীন পেনশন কেমন? সরকারি পেনশন স্কীম হতে সম্পূর্ণ আলাদা। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরতগণ যে হারে প্রিমিয়াম দেবে সেই হারে নিয়োগকর্তাও প্রিমিয়াম দিয়ে এ স্কিম চালু করতে পারবেন। এখানে বেসরকারি চাকরিজীবীগণ কিছুটা আর্থিক সুবিধা ভোগ করলেও অন্য পেশায় সেই সুযোগ নেই। সর্বজনীন পেনশন অনেকটা ডিপিএস পেনশন স্কীমের মতনই। ধরুন আপনি ২০০০ টাকা হারে প্রগতি স্কিম চালু করলেন। ৩০ বছর অর্থাৎ ৩৬০ মাসে আপনি ৭,২০,০০০ টাকা জমা করবেন। এটি যদি আপনি কোন ব্যাংক স্কিমেও ৮-৯% সুদে জমা করেন তবে ৩০ বছর পর তা প্রায় ২৫-২৭ লক্ষ টাকার সমান হবে কারণ আপনারা জানেন প্রতি ১০ বছরে টাকার মান কমার সাথে সাথে সেটি দ্বিগুণ হয়। ৬০ বছর পূর্ণ হলে প্রগতি স্কিমে আপনি ২৪৯৩২ টাকা পেলে নিজের টাকাই প্রায় ৯ বছর ধরে ফেরত পাবেন। মোট কথা আপনার টাকায়ই সরকার আপনার শেষ বয়সটা নিশ্চিত করছে।
পেনশন স্কিমে মাসিক পেনশনে বার্ষিক বৃদ্ধি না থাকায় সেটি মূল্যস্ফিতির দৌড়ে পিছনে পড়ে যাবে / টাকার মান কমার সাথে সাথে আপনার প্রাপ্ত অর্থের পরিমানা বা পেনশন বৃদ্ধি পাবে না
ব্যাংক ডিপিএস আপনারকে ৭৫ বছর পর্যন্ত অথবা আজীবন পেনশন সুবিধার কোন স্কিম দিবে না। সেদিক থেকে সর্বজনীন পেনশন বেসরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষের একটি ভরশার স্থল হবে যদি অনলাইনে স্কিম পূর্তিতে অটোমেটিক পেনশন চালু হয় এবং কোথাও গিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে পেনশন বা মৃত দাবী পেতে না হয়। যেহেতু পেমেন্ট অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিং এ তাই মাসিক পেনশন বা টাকা ফেরতও অনলাইন বা অটোমেটিক হওয়াটা খুবই জরুরি।
সর্বজনীন পেনশন ২০২৪ । সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত পেনশন কি বাতিল হবে?
সর্বজনীন পেনশন ২০২৪ । যে বিষয়গুলো যোগ হওয়ার জরুরি বা আবশ্যকীয়
- মাসিক পেনশন মূল্যস্ফিতির সাথে বৃদ্ধির ব্যবস্থাকরণ।
- কোন অ্যাপের মাধ্যমে পেনশন স্কিম খোলার ব্যবস্থাকরণ।
- মাসিক চাঁদা প্রদানের ক্ষেত্রে আইডি ব্যবহার করে বিকাশ বা নগদ অ্যাপে পেমেন্ট ব্যবস্থাকরণ।
- মেয়াদ পূর্তিতে পেনশন অ্যাপের মাধ্যমে অটো পেনশন চালুকরণ।
- মৃতদাবী পরিশোধে অনলাইন আবেদন ও দাবী পরিশোধ চালুকরণ।
- পেনশন স্কীমকে বীমার আওতায় নিয়ে আসা।
- মাসিক পেনশন শুরুর পূর্বে পেনশন স্কীমের পূর্তিতে এককালীন অর্থ পাওয়ার ব্যবস্থাকরণ।
সর্বজনীন পেনশন মূলত কাদের জন্য?
দেশের বয়স্ক নাগরিকদের একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে দেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা (স্কিম) চালু করেছে সরকার। তবে পরবর্তীতে সরকারি ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও এ পেনশন স্কীমের আওতাভূক্ত করার চিন্তা সরকারের মাথায় আছে।