সুখবর! সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন সুবিধা বাড়াতে নতুন প্রস্তাবনা ২০২৫ । ১৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছরে পেনশন পুনঃস্থাপন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীকেও পারিবারিক পেনশন
সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন-সংক্রান্ত সুবিধা বৃদ্ধি ও দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনে একগুচ্ছ নতুন প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে। এসব প্রস্তাবে পেনশন পুনঃস্থাপনের অপেক্ষাকাল কমানো, পারিবারিক পেনশন ও চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী পেনশনভোগীদের বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতা তুলে ধরেন।
✅ মূল প্রস্তাবনা ও সুবিধাগুলো:
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে যাচ্ছেন:
পেনশন পুনঃস্থাপনের সময় হ্রাস: শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের জন্য বর্তমানে পেনশন পুনঃস্থাপনের অপেক্ষাকাল ১৫ বছর। নতুন প্রস্তাবে এই সময় কমিয়ে ১০ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় স্ত্রী/স্বামীর জন্য পারিবারিক পেনশন: বর্তমানে পেনশনভোগীর মৃত্যুর পর কেবল প্রথম স্ত্রী বা স্বামী আজীবন পেনশন পেয়ে থাকেন। নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে—পেনশনভোগী মৃত্যুর পর যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে দ্বিতীয় স্ত্রী বা স্বামীকেও নিয়ম অনুযায়ী পারিবারিক পেনশন প্রদানের প্রস্তাব করা হবে।
শতভাগ সমর্পণকারীদের জন্য সুবিধা: শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্তদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধি এবং পেনশন পুনঃস্থাপন হলে পুরোদমে ভাতাসংক্রান্ত সুবিধা যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাসিক পেনশন পুনর্বিবেচনা: যারা অবসরগ্রহণের সময় পুরো পেনশন একবারে উত্তোলন করেছেন, তাদের মাসিক পেনশন প্রাপ্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা পুনরায় মাসিক উপার্জন ও সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পেতে পারেন।
জটিল রোগে চিকিৎসা সহায়তা: অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগী যদি জটিল রোগে আক্রান্ত হন, তবে তাকে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হবে।
পরিবারিক পেনশনারদের পেনশন পুনঃস্থাপন: কম বয়সে মৃত্যুর কারণে যারা পেনশন পুনঃস্থাপনের সুবিধা পান না, তাদের সংশ্লিষ্ট পরিবারকে পেনশন মঞ্জুর করার বিষয়টি অর্থ বিভাগ খতিয়ে দেখবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
🌎 প্রবাসীদের জন্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ
প্রবাসে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র ও আনুষ্ঠানিকতার জন্য স্বাক্ষরদানসহ অন্যান্য বিষয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে।
অর্থ বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পেনশন অ্যান্ড ফান্ড ম্যানেজমেন্টের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির প্রশাসককে সভার এই সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেনশন-সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতাগুলো নিরসন এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে।
১০০% পেনশন সমর্পণকারী পারিবারিক পেনশনারদের পেনশন পুন:স্থাপনের গেজেট হয়েছে কি?
না। ১০০% পেনশন সমর্পণকারী মূল পেনশনারদের পেনশন পুনঃস্থাপনের বিষয়ে গেজেট হয়েছে। তবে আপনার প্রশ্নটি ছিল ১০০% পেনশন সমর্পণকারী পারিবারিক পেনশনারদের পেনশন পুনঃস্থাপন সংক্রান্ত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই বিষয়ে কিছু প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যা মূলত দুটি বিষয়কে নির্দেশ করে:
১. মূল পেনশনারের ক্ষেত্রে:
গেজেট: অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ২০১৮ সালের ০৮ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপন (নং-০৭.০০.০০০০.১৭১.১৩.০১৩.১৪-১১৮) জারি করে, যেখানে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
শর্ত: এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পেনশন পুনঃস্থাপনের জন্য অবসর গ্রহণের তারিখ হতে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্ত হতে হবে এবং সুবিধাটি ০১-০৭-২০১৭ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
২. মূল পেনশনারের মৃত্যুর পর পারিবারিক পেনশন:
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভিন্ন প্রজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় যে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী পেনশনার পেনশন পুনঃস্থাপন সুবিধা ভোগরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে, তাঁর বিধবা স্ত্রী/বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তানগণ পুনঃস্থাপনকৃত মাসিক পেনশন, চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসব ভাতা প্রাপ্য হবেন। এই বিষয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসেও (৩১ অক্টোবর, ২০১৯) অর্থ বিভাগ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি রয়েছে।
⚠️ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
নতুন প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে (যেমন, ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করা বা কম বয়সে মৃত্যুর কারণে পরিবারকে পেনশন), এই প্রস্তাবগুলো এখনো সিদ্ধান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
অতএব, বর্তমানে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী পারিবারিক পেনশনারদের পেনশন পুনঃস্থাপনের সুবিধা চালু আছে, তবে তা মূল পেনশনারের ১৫ বছর অপেক্ষাকাল শেষে পেনশন পুনঃস্থাপিত হওয়ার পরেই প্রযোজ্য হবে। প্রস্তাবিত ‘১০ বছর’ বা ‘কম বয়সে মৃত্যুর কারণে পরিবারের সরাসরি পেনশন’ সংক্রান্ত কোনো গেজেট এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।



