বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের নবম পে স্কেলের প্রস্তাব ২০২৫ । সর্বনিম্ন বেতন ৩২ হাজার, সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকার প্রস্তাব?

সরকারি ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীদের সংগঠন ‘১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম’ নবম পে কমিশনের জন্য তাদের প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামো পেশ করেছে। বর্তমান বাজারদর এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায্য ও বৈষম্যহীন বেতন স্কেলের দাবিতে তারা এই প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবিত কাঠামোতে গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৩টি করা হয়েছে এবং সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩২,০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ মূল বেতন ১,২৮,০০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর মূল বিষয়গুলি:

  • গ্রেড সংখ্যা হ্রাস: বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩টি গ্রেডে।
  • সর্বনিম্ন বেতন: নতুন কাঠামোর সর্বনিম্ন গ্রেডে (২০তম গ্রেড, যা প্রস্তাবিত কাঠামোতে ১৩তম গ্রেড) মূল বেতন হবে ৩২,০০০ টাকা
  • সর্বোচ্চ বেতন: প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর সর্বোচ্চ গ্রেডে (১ম গ্রেড) মূল বেতন হবে ১,২৮,০০০ টাকা

ঘরভাড়া ভাতায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন:

প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে বাড়িভাড়া ভাতায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য মূল বেতনের শতাংশ হিসেবে এই ভাতা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে:

  • ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা: মূল বেতনের ৮০ শতাংশ
  • চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা এলাকা: মূল বেতনের ৭০ শতাংশ
  • অন্যান্য এলাকা: মূল বেতনের ৬০ শতাংশ

অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব:

সংগঠনটি চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ইউটিলিটি ভাতা, টিফিন ভাতা, বৈশাখী ভাতা, ঝুঁকি ভাতা এবং পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলের কর্মচারীদের জন্য অতিরিক্ত ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এছাড়াও পেনশন সুবিধা বৃদ্ধি, আনুতোষিকের হার বাড়ানো, পুরোনো নিয়মে তিনটি টাইমস্কেল ও দুটি সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল এবং বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান লিখিত বক্তব্যে জানান, ২০১৫ সালের পে স্কেলে ব্যাপক বৈষম্য ছিল এবং গত ১০ বছরে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা দুটি পে স্কেল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি নবম পে কমিশন গঠনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রশংসা করে একটি বৈষম্যমুক্ত, বাস্তবসম্মত ও ন্যায্য বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

সংগঠনের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান সরকারের প্রতি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈষম্যমুক্ত নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের আহ্বান জানান, অন্যথায় কর্মচারীরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে ঘোষণা দেন।

গ্রেড সংখ্যা কমানো এবং সর্বনিম্ন বেতন নিয়ে সরকার কি বলছে?

১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সংগঠন তাদের প্রস্তাব পেশ করলেও, গ্রেড সংখ্যা কমানো এবং সর্বনিম্ন বেতন নিয়ে সরকার বা জাতীয় বেতন কমিশন এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে কমিশনের কার্যক্রমে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে, যা সরকারের অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে:


গ্রেড সংখ্যা কমানোর বিষয়ে কমিশনের আলোচনা

  • প্রাথমিক চিন্তাভাবনা: জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫ বর্তমানে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে ১২টি, ১৫টি বা ১৬টি করার প্রাথমিক আলোচনা করছে।
  • উদ্দেশ্য: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য দূর করা এবং বিদ্যমান পে স্কেলে যে গ্রেডগুলোতে বেতনের ব্যবধান খুব কম (যেমন: ৮ম ও ৯ম গ্রেড, বা ১৭তম ও ১৮তম গ্রেড) সেগুলোকে ভেঙে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে আনা।
  • মতামত গ্রহণ: কমিশন তাদের উন্মুক্ত প্রশ্নমালায় সরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ জনগণের কাছে ২০ গ্রেড কাঠামোর পক্ষে কিনা এবং পছন্দের গ্রেড সংখ্যা কত হওয়া উচিত, সে বিষয়ে মতামত চেয়েছে।

সর্বনিম্ন বেতন নিয়ে কমিশনের অবস্থান

  • অনুপাত বজায় রাখা: কমিশন সর্বোচ্চ (গ্রেড-১) এবং সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) বেতনের অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে বজায় রাখার চিন্তা করছে। বর্তমানে এই অনুপাত প্রায় ১০:১।
  • সর্বনিম্ন বেতনের চূড়ান্ত সংখ্যা: কমিশন এখনো সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ মূল বেতনের কোনো চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণ করেনি।
  • ১১-২০ গ্রেডের প্রস্তাব প্রসঙ্গে: ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম সর্বনিম্ন বেতন ৩২,০০০ টাকা করার প্রস্তাব করলেও, কমিশন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সমর্থন বা অসমর্থন জানায়নি। তবে বাজারদর ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে ন্যায্য বেতন কাঠামো দেওয়ার বিষয়টি কমিশনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে।
  • বাস্তবায়নের সময়সীমা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের মেয়াদেই গেজেটের মাধ্যমে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন করে যেতে চায় এবং এটি ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে বলে অর্থ উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, গ্রেড কমানোর বিষয়টি কমিশনের সক্রিয় চিন্তাভাবনায় রয়েছে এবং তারা বৈষম্যমুক্ত কাঠামো তৈরির পক্ষে, কিন্তু ১১-২০ গ্রেডের প্রস্তাবিত ৩২,০০০ টাকার সর্বনিম্ন বেতন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সংগঠন ‘১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম’ নবম পে কমিশনে যে ১৩ গ্রেডের বেতন কাঠামো প্রস্তাব করেছে, তার মূল বেতন নিম্নরূপ (৩২,০০০ টাকা থেকে ১,২৮,০০০ টাকা):

প্রস্তাবিত গ্রেড (মোট ১৩টি)প্রস্তাবিত মূল বেতন (টাকা)
১ম গ্রেড (সর্বোচ্চ)১,২৮,০০০
২য় গ্রেড১,১০,০০০
৩য় গ্রেড৯৫,০০০
৪র্থ গ্রেড৮২,০০০
৫ম গ্রেড৭৩,০০০
৬ষ্ঠ গ্রেড৬৫,০০০
৭ম গ্রেড৫৮,০০০
৮ম গ্রেড৫২,০০০
৯ম গ্রেড৪৭,০০০
১০ম গ্রেড৪৩,০০০
১১তম গ্রেড৩৯,০০০
১২তম গ্রেড৩৫,০০০
১৩তম গ্রেড (সর্বনিম্ন)৩২,০০০

বি.দ্র.: এটি কেবল ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো, যা নবম পে কমিশনের কাছে পেশ করা হয়েছে। এটি এখনও সরকার কর্তৃক চূড়ান্ত বা অনুমোদিত কাঠামো নয়।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *