বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরিজীবী ফোরামের বেতন স্কেল প্রস্তাবনা ২০২৫ । বৈষম্য দূরীকরণ ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের নিরিখে নতুন স্কেলের দাবি?

সরকারি চাকরিজীবীদের সর্ববৃহৎ সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরিজীবী ফোরাম জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫-এর কাছে নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের বিস্তারিত প্রস্তাবনা পেশ করেছে গত ৭ বছর ধরে কর্মচারীদের সাধারণ দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করে আসা এই সংগঠনটি 2তাদের প্রস্তাবে ২০১৫ সালের ‘বৈষম্যযুক্ত পে স্কেলের চরম বৈষম্য দূরীকরণ’ এবং গত ১০ বছরে দুটি পে-স্কেল থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় এনেছে


প্রস্তাবিত নতুন বেতন স্কেল ও মূল বেতনের চিত্র

সংগঠনটি বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থা এবং ছয় সদস্যের একটি পরিবারের জীবনধারণের ন্যূনতম ব্যয় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাস্তবতার নিরিখে নতুন একটি বেতন স্কেলের প্রস্তাব দিয়েছেতাদের প্রস্তাবিত কাঠামোতে বর্তমান ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে ১৩টি গ্রেডে রূপান্তর করার দাবি জানানো হয়েছে 5

বর্তমান গ্রেডপ্রস্তাবিত গ্রেডগ্রেড অনুযায়ী প্রস্তাবিত মূল বেতন
১ম১ম১২৮,০০০.০০ টাকা
২য়২য়১১৫,০০০.০০ টাকা
৩য়৩য়১০৫,০০০.০০ টাকা
৪র্থ৪র্থ৯৮,০০০.০০ টাকা
৫ম৫ম৯০,০০০.০০ টাকা
৬ষ্ঠ ও ৭ম৬ষ্ঠ৮০,০০০.০০ টাকা
৮ম ও ৯ম৭ম৭০,০০০.০০ টাকা
১০ম৮ম৬০,০০০.০০ টাকা
১১তম, ১২তম ও ১৩তম৯ম৫৩,০০০.০০ টাকা
১৪তম ও ১৫তম১০ম৪৭,০০০.০০ টাকা
১৬তম১১তম৪২,০০০.০০ টাকা
১৭তম, ১৮তম ও ১৯তম১২তম৩৭,০০০.০০ টাকা
২০তম১৩তম৩২,০০০.০০ টাকা

খাদ্য ব্যয়ের যুক্তি

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর জন্য দৈনিক শুধুমাত্র খাদ্য ও পথ্য বাবদ ১৭৫/- টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় 8এই যুক্তিতে একজন সর্বনিম্ন বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারীর ছয় সদস্যের পরিবারের শুধুমাত্র খাদ্য বাবদ মাসিক ন্যূনতম ব্যয় হওয়া উচিত: ১৭৫ টাকা x ৬ জন x ৩০ দিন = ৩১,৫০০/- টাকা 


ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব

ফোরামটি বাড়ি ভাড়া ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে:

  • বাড়ি ভাড়া ভাতা: প্রস্তাবিত ৯ থেকে ১৩ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মূল বেতনের ৮০%, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ৭০%, এবং অন্যান্য এলাকায় ৬০% হারে মাসিক বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবি করা হয়েছে 10
  • চিকিৎসা ভাতা: ৬,০০০ টাকা 
  • শিক্ষা ভাতা (সন্তান প্রতি): ৩,০০০ টাকা 
  • যাতায়াত ভাতা: ঢাকা শহরে ৩,০০০ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ২,০০০ টাকা 
  • টিফিন ভাতা: ২,২০০ টাকা (দৈনিক ১০০ টাকা হারে)
  • পেনশন ও গ্রাচ্যুইটি: পেনশন বিদ্যমান ৯০% এর পরিবর্তে ১০০% এবং আনুতোষিকের হার ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকায় বৃদ্ধি করার দাবি জানানো হয়েছে 15

এছাড়াও, ৫% এর পরিবর্তে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ১০% করার দাবি জানানো হয়েছে প্রস্তাবিত ০৯ থেকে ১৩ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য 


প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত দাবি

ফোরাম তাদের প্রস্তাবনায় বেশ কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনেরও দাবি জানিয়েছে:

  • টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড: পূর্বের ন্যায় ৩টি টাইমস্কেল ও ২টি সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল 
  • স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সুবিধা: সকল স্বায়ত্তশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় পেনশন সুবিধা, গ্রাচ্যুইটি এবং গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদানের দাবি 
  • পদোন্নতি: সকল প্রকার ব্লক পদ বাতিল করে পদোন্নতির বিধান চালু অথবা গ্রেড পরিবর্তন করার দাবি 19
  • রেশন ব্যবস্থা: প্রস্তাবিত ০৯ থেকে ১৩ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে রেশন পদ্ধতি চালু করার দাবি করা হয়েছে 
  • অন্যান্য: শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছরের পরিবর্তে প্রতি ২ বছরে প্রদান 21এবং প্রস্তাবিত ০৯ থেকে ১৩ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ডিউটি/অতিরিক্ত কাজ করালে ওভার টাইম দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে 

ফোরামের পক্ষে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহমুদুল হাসান, ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এই প্রস্তাবনায় আগামী ৫ বছরের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত ও বৈষম্যমুক্ত পে-স্কেলের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য জাতীয় বেতন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে

পূর্নাঙ্গ প্রস্তাব পিডিএফ দেখুন

শিক্ষা ভাতা ও চিকিৎসা ভাতার ব্যাপারে কি প্রস্তাব এসেছে?

শিক্ষা ভাতা ও চিকিৎসা ভাতার ব্যাপারে “১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরিজীবী ফোরাম” এর প্রস্তাবনা নিম্নরূপ: চিকিৎসা ভাতা: ৬,০০০ টাকা । শিক্ষা ভাতা (সন্তান প্রতি): ৩,০০০ টাকা । ই প্রস্তাবিত ভাতাগুলো যথেষ্ট কিনা তা নির্ভর করে কর্মচারীদের বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এবং চিকিৎসা ও শিক্ষার প্রকৃত ব্যয়ের ওপর। এই প্রস্তাবনাটি “১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরিজীবী ফোরাম” উত্থাপন করেছে কর্মচারীদের মতামতের ভিত্তিতে এবং গত ১০ বছরে পে-স্কেল বঞ্চিত হওয়া ও বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাস্তবতার নিরিখে ।তবে প্রস্তাবিত ৬,০০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং সন্তান প্রতি ৩,০০০ টাকা শিক্ষা ভাতা (যা মোট ৯,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে), বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্মচারীদের জন্য যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত কিনা—এই বিষয়ে নথিতে কোনো মন্তব্য বা বিশ্লেষণ দেওয়া হয়নি। নথিতে শুধু প্রস্তাবিত অংকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *