১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের পে স্কেলের প্রস্তাব ২০২৫ । সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩২,০০০ টাকা করার দাবি সরকার কতটা শুনবে?
জাতীয় বেতন স্কেল-২০২৩ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের প্রতিনিধিত্বকারী ‘১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম’ বাংলাদেশ বেতন কমিশন-২০২৩-এর কাছে তাদের বেতন কাঠামো ও ভাতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেছে। মূল প্রস্তাবনায় গ্রেড সংখ্যা হ্রাস করে ১৩টি করা এবং সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩২,০০০ টাকা নির্ধারণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
📌 মূল প্রস্তাবনায় বেতনের রূপরেখা
ফোরামের দাখিল করা প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ১৩টি গ্রেডে নামিয়ে এনে নতুন মূল বেতন কাঠামো নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। নতুন কাঠামোতে সর্বনিম্ন (১৩তম গ্রেড) মূল বেতন ৩২,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ (১ম গ্রেড) মূল বেতন ১,৮৬,০০০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাব ২০১৫ সালের পে স্কেলকে সংশোধন এবং বর্তমান বাজারদর ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে ফোরাম উল্লেখ করেছে।
প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামোটি নিম্নরূপ:
| বিদ্যমান গ্রেড | প্রস্তাবিত গ্রেড | প্রস্তাবিত মূল বেতন |
| ১ম | ১ম | ১,২৮,০০০.০০ |
| ২য় | ২য় | ১,১৫,০০০.০০ |
| ৩য় | ৩য় | ১,০৫,০০০.০০ |
| ৪র্থ | ৪র্থ | ৯৮,০০০.০০ |
| ৫ম | ৫ম | ৯০,০০০.০০ |
| ৬ষ্ঠ ও ৭ম | ৬ষ্ঠ | ৮০,০০০.০০ |
| ৮বম ও ৯ম | ৭ম | ৭০০,০০০.০০ |
| ১০ম | ৮ম | ৬০২,০০০.০০ |
| ১১শ, ১২ ও ১৩ তম | ৯ম | ৫,০০০.০০ |
| ১৪শ ও ১৫ তম | ১০ম | ৪৭,০০০.০০ |
| ১৬শ ও ১৭ তম | ১১শ | ৪২,০০০.০০ |
| ১৮শ, ১৯শ ও ১৯ তম | ১২তম | ৩৭,০০০.০০ |
| ২০ তম | ১৩তম | ৩২,০০০.০০ |
🏥 স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ সুবিধা ও রেশন ভাতার দাবি
বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি ফোরাম সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন কর্মচারীদের জন্য দৈনিক খাদ্য ও পথ্য বাবদ বর্তমানে বরাদ্দকৃত ১৭৫ টাকা পরিবর্তনেরও সুপারিশ করেছে।
- বর্তমান বরাদ্দ: ১৭৫ টাকা (দৈনিক)।
- ফোরামের প্রস্তাব: যদি একজন সরকারি কর্মচারীর পরিবারে মোট ৬ জন সদস্য থাকেন এবং তারা শুধু খাদ্য বাবদ মাসিক সর্বনিম্ন ১৭৫ টাকা/প্রতিজন/প্রতিদিন হিসাবে খরচ করেন, তবে মাসে ন্যূনতম ব্যয় ১,৭৫,৩৫০/- টাকা। এই হিসাবের মাধ্যমে ফোরাম জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রেশনিং বা খাদ্য ভাতার পরিমাণ যুক্তিযুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
🗣️ পে স্কেল বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা
ফোরামের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন যে, সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘ ৯ বছর ধরে নতুন পে স্কেল থেকে বঞ্চিত। দেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বাদ দিয়ে অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই বৈষম্যমুক্ত নবম পে স্কেল দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাবের পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনও বেতন কমিশনের কাছে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার এবং গ্রেড সংখ্যা কমানোর মতো প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা, মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে জমা দেবে এবং ২০২৬ সালের শুরুতেই নতুন পে স্কেল কার্যকর হবে।

সরকার কি এমন দাবীর ধারের কাছের সিদ্ধান্ত নিবে?
সরকারি সিদ্ধান্ত সাধারণত কয়েকটি প্রধান বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যা ফোরামের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের প্রধান দাবি হলো সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩২,০০০ টাকা করা। ২০১৫ সালের পে স্কেলের সর্বনিম্ন মূল বেতন ছিল ৮,২৫০ টাকা। যদি এই দাবি পূরণ করা হয়, তবে বেতন বৃদ্ধি হবে প্রায় ৩.৮৭ গুণ। সরকারের আর্থিক বোঝা: এত বড় অঙ্কের বেতন বৃদ্ধি হলে সরকারের ওপর বিশাল আর্থিক বোঝা সৃষ্টি হবে। একটি নতুন পে স্কেলের মূল লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন বৃদ্ধি করা, সাধারণত যা ২০ থেকে ৪০% এর মধ্যে থাকে। সর্বনিম্ন বেতন: ৩২,০০০ বনাম প্রত্যাশিত: পে স্কেল ঘোষণার সময় সাধারণত সর্বনিম্ন মূল বেতনে ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার কাছাকাছি কিছু একটা করার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে ৩২,০০০ টাকার দাবিটি বাস্তবতার নিরিখে কিছুটা বেশি মনে হতে পারে।
গ্রেড সংখ্যা হ্রাসের প্রস্তাব গৃহীত হবে কি? ফোরাম ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে ১৩টি গ্রেডে আনার প্রস্তাব করেছে। গ্রহণযোগ্যতা গ্রেড সংখ্যা কমানোর বা গ্রেডগুলোর মধ্যে বৈষম্য দূর করার দাবিটি তুলনামূলকভাবে সরকারের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। বেতন কমিশন প্রায়ই এই ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দেয়। সুবিধা গ্রেড কমানো হলে পদোন্নতি ও গ্রেড আপগ্রেডেশন সংক্রান্ত জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস পেতে পারে। সরকারি কর্মচারীরা প্রায় ৯ বছর ধরে নতুন পে স্কেলের জন্য অপেক্ষা করছেন, এই সময়ে দেশে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
- দাবির ভিত্তি: ফোরাম এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়টিকেই তাদের দাবির মূল ভিত্তি হিসেবে দেখিয়েছে। সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে, কিন্তু সরাসরি ৩.৮৭ গুণ বেতন বৃদ্ধি নাও করতে পারে। সরকার সাধারণত একটি কমপ্রোমাইজড বা মধ্যবর্তী সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
সরকারি কর্মচারীরা একটি বড় ভোটব্যাংক। সামনে নির্বাচন বা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের সন্তুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিবেচ্য: জনগণের অসন্তোষ এড়াতে এবং কর্মচারীদের সন্তুষ্ট করতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ বেতন বৃদ্ধি ঘোষণা করতে পারে, কিন্তু এটি সম্ভবত দাবির কাছাকাছি না হয়ে একটি যুক্তিসঙ্গত বৃদ্ধি হবে (যেমন, ২২,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা সর্বনিম্ন মূল বেতন)।
সরকার সম্ভবত দাবির কাছাকাছি সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে না।
- বেতন: সর্বনিম্ন ৩২,০০০ টাকার পরিবর্তে, সরকার হয়তো একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে গিয়ে ২২,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা (বা তার আশেপাশে) সর্বনিম্ন মূল বেতন নির্ধারণ করতে পারে।
কাঠামো: গ্রেড কমানোর (যেমন ২০ থেকে ১৫/১৬ তে নামিয়ে আনা) এবং অন্যান্য ভাতাদি যুক্তিসঙ্গতভাবে বৃদ্ধির দাবিগুলো সরকার হয়তো গ্রহণ করতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি সরকারের বেতন কমিশন-২০২৩ এর সুপারিশ এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হবে।



