৯ম পে স্কেল ২০২৫ । জাতীয় পে-স্কেলে ১০ বছর পূর্তি, নতুন কাঠামো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি সরকারি কর্মচারীদের?
জাতীয় পে-স্কেলের বয়স দশ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে নতুন বেতন কাঠামো দ্রুত কার্যকর করার দাবি উঠেছে। তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৭-২০ গ্রেডের ন্যূনতম বেতন ৩৫,০০০ টাকা এবং ১ম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতন ১,৪০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে ১:৪ অনুপাতে বেতন বৈষম্য সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে।– ৯ম পে স্কেল ২০২৫
পে স্কেল বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ? হ্যাঁ। সরকারি কর্মচারীরা মনে করছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় বর্তমান বেতন কাঠামো অনেকটাই অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। এ কারণে তাঁরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন কর্মচারী জানান, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য বেতনের জন্য অপেক্ষা করছি। এখনই সময় সরকারকে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার।” এদিকে সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই বেতন কাঠামো নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সর্বনিম্ন বেতন কত হওয়ার উচিত? ০১৫ সালে ঘোষিত জাতীয় বেতন কাঠামোর এক দশক পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে একদিকে যেমন সরকারি কর্মচারীদের বেতন–ভাতা সামান্য বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও বাজার অস্থিরতা বেতন কাঠামোকে অপ্রতুল করে তুলেছে। ফলে সরকারি কর্মচারীরা নতুন কাঠামোর দাবি তুলেছেন। তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী, সর্বনিম্ন গ্রেড (১৭-২০) এর বেতন ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেড (১ম গ্রেড) এর বেতন ১,৪০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে ১:৪ অনুপাত প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত আরও বেশি বৈষম্যপূর্ণ হওয়ায় মাঠপর্যায়ের কর্মচারীরা হতাশা প্রকাশ করছেন। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো তৈরি না করলে কর্মদক্ষতা ও সেবার মানে প্রভাব পড়বে। একইসাথে সরকারি খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তবে তাঁদের মতে, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত না করলে দুর্নীতি ও অসন্তুষ্টি বাড়তে পারে। সরকারি কর্মচারীদের মতে, ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কাঠামো কার্যকর হলে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রশমিত হবে। তাঁদের ভাষায়, “আমরা শুধু ন্যায্য প্রাপ্য চাই, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করবে।” অন্যদিকে নীতিনির্ধারক মহল বলছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাজেটary চাপ থাকলেও, সবার জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে, জাতীয় পে-স্কেলের ১০ বছর পূর্তির প্রেক্ষাপটে বেতন কাঠামো সংস্কার এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু কর্মচারীদের প্রত্যাশা নয়, বরং সরকারি প্রশাসনের দক্ষতা ও কার্যকারিতা টিকিয়ে রাখার অন্যতম শর্ত বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জাতীয় বেতন কাঠামোতে ২০ গ্রেড থেকে ১২ গ্রেডে নামানোর প্রস্তাব কতটা জরুরি? ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন কাঠামোতে মোট ২০টি গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। এতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের বেতন ধাপে ধাপে সাজানো হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে যে, এত বেশি গ্রেড থাকার কারণে বৈষম্য ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো এখন ২০ গ্রেড কমিয়ে ১২ গ্রেড করার দাবি তুলেছে। তাঁদের মতে, এটি করলে—
- একই ধরনের কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডে বেতন বৈষম্য কমবে।
- পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্টের ধাপগুলো সহজ হবে।
- প্রশাসনিক কাঠামো হবে বেশি কার্যকর ও স্বচ্ছ।
কেন জরুরি হতে পারে? বেতন বৈষম্য কমানো বর্তমানে একাধিক গ্রেডে একই কাজের মানুষ ভিন্ন বেতন পাচ্ছেন। ১২ গ্রেড হলে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে। পদোন্নতি সংকট নিরসন ২০ গ্রেডে পদোন্নতির ধাপ বেশি হওয়ায় অনেক কর্মচারী সারাজীবন এক গ্রেডেই থেকে যান। গ্রেড কমলে পদোন্নতির সুযোগ বাড়তে পারে। সামঞ্জস্যপূর্ণ কাঠামো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সাধারণত কম গ্রেডে প্রশাসনিক কাঠামো সাজানো হয়। এতে দক্ষতা বাড়ে।আর্থিক চাপ ১২ গ্রেড করলে ন্যূনতম বেতন অনেকটাই বাড়াতে হবে। এতে সরকারের ব্যয় বাড়বে। নীতিগত সমন্বয় কোন কোন পদ বা চাকরিকে কোন গ্রেডে রাখা হবে, তা নিয়ে বড় ধরনের সমন্বয় দরকার। প্রতিরোধ উচ্চপদস্থ ও নিম্নপদস্থ উভয় পর্যায় থেকেই ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থের কারণে আপত্তি আসতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রেড সংখ্যা কমানো জরুরি হলেও হঠাৎ করে করা উচিত নয়। ধাপে ধাপে সংস্কারের মাধ্যমে ২০ গ্রেড থেকে কমিয়ে আনা হলে এটি কার্যকর ও টেকসই হবে। একই সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ না করলে কাঠামোগত পরিবর্তন অর্থহীন হয়ে যাবে।
৯ম পে স্কেল ২০২৫ । বেতন গ্রেড কমালে বৈষম্য কতটা কমবে, সেটি নির্ভর করে কাঠামো কীভাবে সাজানো হচ্ছে তার উপর।
বেতন গ্রেড কমালে কি বৈষম্য কমবে? এখন ২০ গ্রেডে অনুরূপ কাজ বা দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা আলাদা গ্রেডে পড়ে যান, ফলে বেতন পার্থক্য হয়। গ্রেড কমালে একই ধরনের কাজের জন্য এক বা কাছাকাছি গ্রেড থাকবে → পার্থক্য কমবে। যেমন আপনি বলেছিলেন, ১:৪ অনুপাতে করলে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য সীমিত থাকবে। এখনকার চেয়ে ব্যবধান কম হবে, তাই বৈষম্য কমবে। ২০ গ্রেডে অনেক সময় কর্মচারী সারাজীবন এক গ্রেডে পড়ে থাকেন। ১২ গ্রেড হলে ধাপ কমে যাওয়ায় পদোন্নতি তুলনামূলক দ্রুত হতে পারে, যা মানসিক বৈষম্যও কমাবে।

Caption: Proposed For Justice
৯ম পে স্কেল ২০২৫ । সর্বনিম্ন ৩৫০০০ টাকা ধরে ১২ গ্রেডে ১:৪ অনুপাতে একটি জাতীয় বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা যেতে পারে। বিশ্লেষণ ও প্রস্তাবিত ১২-গ্রেড জাতীয় বেতন কাঠামো (১:৪ অনুপাত ধরে, সর্বনিম্ন = ৳৩৫,০০০ — সর্বোচ্চ = ৳১,৪০,০০০)
(সর্বনিম্ন ৩৫,০০০; সর্বোচ্চ ১,৪০,০০০; মোট ১২ গ্রেড; অনুপাত ১:৪) অনুযায়ী আমি সমান অনুপাতে (geometric progression) গ্রেডগুলোর বেতন নির্ধারণ করলাম — এতে প্রতিটি ধাপে গতিবার্ধকী আনুমানিক সমান শতকরা বৃদ্ধির হার বজায় থাকে এবং নিচু থেকে উপরের অনুপাত মোট ৪:১ ঠিক থাকে। প্রতিটি ধাপ প্রায় ১৩.৪৩% বৃদ্ধির হার গ্রহণ করা হয়েছে। নিচে প্রস্তাবিত টেবিল (গ্রেড-১ = সবচেয়ে উচ্চ, গ্রেড ১২ = সবচেয়ে নীচ)।
- Grade 1 : (উর্দ্ধতন) ১,৪০,০০০
- Grade 2: ১,২৩,৪২৩
- Grade 3: ১,০৮,৮০৮
- Grade 4: ৯৫,৯২৫
- Grade 5: ৮৪,৫৬৬
- Grade 6: ৭৪,৫৫৩
- Grade 7: ৬৫,৭২৫
- Grade 8: ৫৭,৯৪৩
- Grade 9: ৫১,০৮২
- Grade 10: ৪৫,০৩৩
- Grade 11: ৩৯,৭০১
- Grade 12: (নীচ) ৩৫,০০০
এটি কীভাবে বের করা হয়েছে? সর্বনিম্ন L = ৩৫,০০০ এবং সর্বোচ্চ H = ১,৪০,০০০ এবং মোট n = ১২ ধাপ হলে প্রতিটি ধাপের গুণনীয়ক r = (H/L)^(1/(n-1)) ≈ ১.১৩৪৩১২৫ — অর্থাৎ প্রতিটি গ্রেডে আগের গ্রেডের তুলনায় প্রায় ১৩.৪৩১% বাড়তি বেতন।
উচ্চপদস্থ পর্যায় থেকে আপত্তি করবে কেন?
জাতীয় বেতন কাঠামো করলে উচ্চপদস্থ আর নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের স্বার্থ ভিন্নভাবে প্রভাবিত হবে। তাই আপত্তি আসতে পারে। উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের সম্ভাব্য আপত্তি কারণ অনুপাত কমে যাওয়া। যেমন- বর্তমানে তাঁদের বেতন অনেক বেশি ব্যবধান রেখে থাকে। ১:৪ অনুপাতে নামিয়ে আনলে নিচের গ্রেডের বেতন তুলনামূলক বেশি বেড়ে যাবে। এতে উঁচু পদমর্যাদার সঙ্গে আর্থিক ব্যবধান কমে যাবে, যা তাঁদের কাছে মর্যাদাহানির মতো মনে হতে পারে।অতিরিক্ত সুবিধা হারানোর আশঙ্কা উচ্চপদস্থদের অনেক সময় বেতন ছাড়া অন্যান্য আর্থিক সুবিধা (ভাতা, গাড়ি, বাসস্থান ইত্যাদি) থাকে। নতুন কাঠামোয় এগুলো পুনর্বিন্যাস হলে তাঁরা আশঙ্কা করতে পারেন যে সুবিধা কমে যাবে। সামাজিক মর্যাদা অনেকে মনে করেন, বেতন বৈষম্য মর্যাদা ও দায়িত্বের প্রতিফলন। বৈষম্য কমে গেলে তাঁদের মর্যাদা কম দেখাবে।
নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের সম্ভাব্য আপত্তি কি কারণে হতে পারে?
| বাস্তব বেতন না মেলার আশঙ্কা: যদি গ্রেড সংখ্যা কমানো হয় কিন্তু ন্যূনতম বেতন পর্যাপ্ত না হয় (যেমন ৩৫,০০০-এর নিচে রাখা হয়), তাঁরা মনে করবেন তাঁদের দাবি পূরণ হয়নি। | পদোন্নতি জটিলতা: ২০ গ্রেড থেকে ১২ গ্রেডে নামালে অনেক পদ একত্রিত হবে। এতে ছোট পদে থাকা কর্মচারীরা পদোন্নতির ধাপ হারাবে, আর মনে করবে যে তাঁদের ক্যারিয়ার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। | অসম বণ্টনের শঙ্কা: অনেকে ভাবতে পারেন, গ্রেড কমিয়ে দিলেও উচ্চপদস্থদের লাভ হবে বেশি, নিম্নপদস্থদের লাভ হবে কম। |
প্রশাসনিক বাস্তবতা কি? উচ্চপদস্থরা চান মর্যাদা বজায় থাকুক। নিম্নপদস্থরা চান ন্যায্য ও পর্যাপ্ত বেতন। সরকার চায় ব্যয় যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই তিন দিকের টানাপোড়েন থেকেই ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থের কারণে আপত্তি আসতে পারে।



