৯ম পে স্কেল ২০২৫ । গ্রেড বিভাজনই মূল বিতর্ক, কর্মচারীদের কৌশল পরিবর্তনের আহ্বান
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে যখন জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ কাজ শুরু করেছে, তখন কমিশনের অনলাইন মতামত পোর্টালে (paycommission2025.gov.bd) মতামত দেওয়ার সময়সীমা ঘনিয়ে আসছে। এরই মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন স্তরে নতুন স্কেলের কাঠামো নিয়ে গভীর কৌশলগত বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মূল আলোচনা ২০টি গ্রেড বহাল রাখা হবে নাকি এর সংখ্যা কমিয়ে ১০ থেকে ১২-এর মধ্যে আনা হবে—এই বিষয়টি নিয়ে।
কর্মচারীদের নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের একটি বড় অংশ মনে করছে, যদি ২০টি গ্রেড বহাল থাকে, তবে তা পূর্বের বৈষম্যকেই জিইয়ে রাখবে এবং নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা তুলনামূলকভাবে কম লাভবান হবেন। তাদের দাবি, “যতো গ্রেড বিভাজন, ততো বেতন পরিধি ক্ষুদ্রতর—প্রকারান্তরে বড় কর্তারা লাভবান।”
২০ গ্রেডের ‘ষড়যন্ত্র’ রুখে দেওয়ার ডাক
অনেক কর্মচারী সোশ্যাল মিডিয়া এবং আলোচনা ফোরামে জোরালোভাবে এই মত প্রকাশ করছেন যে, ২০টি গ্রেড বহাল রাখার জন্য প্রচারণা চালানো উচিত নয়। তাদের মতে, এটি আমলাতন্ত্রের সুবিধাভোগী অংশের একটি সুচিন্তিত ‘ষড়যন্ত্র’। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গ্রেডের সংখ্যা বেশি থাকলে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত (যেমন বর্তমানের প্রায় ১:১০) অক্ষুণ্ণ রাখা বা কমানো হলেও, প্রতিটি ধাপে বেতনের পার্থক্য সামান্য থাকে। ফলস্বরূপ, নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর মূল বেতনে কার্যকর বৃদ্ধি নগণ্য হয়, কিন্তু সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন আনুপাতিক হারে বহুগুণ বেড়ে যায়।
একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের মূল ফোকাস হওয়া উচিত গ্রেড বিভাজন কমাতে সরকারকে বাধ্য করা। আমরা যদি নিজেরাই কাল্পনিক ২০ ধাপের কাঠামো এবং ১:৪ অনুপাত নিয়ে বেশি মাতামাতি করি, তাহলে সরকার কেন গ্রেড কমানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে? তাদের জন্য তো ২০ গ্রেড বহাল রাখাই সহজ।”
‘বেতন অনুপাতের চেয়ে গ্রেড কমানো জরুরি’
কর্মচারীদের কৌশলগত বার্তা স্পষ্ট— “বেতন অনুপাত ১:৪ যত বেশি প্রয়োজন, তার চেয়ে জরুরি গ্রেড বিভাজন কমানো।”
একাধিক কর্মচারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, ১০ বা ১২টি গ্রেডের একটি কাঠামো প্রণয়ন করা গেলে, প্রতিটি গ্রেডের মধ্যে বেতনের একটি যৌক্তিক এবং সম্মানজনক পার্থক্য তৈরি হবে। এতে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নিশ্চিত করা সহজ হবে এবং বেতন কাঠামোতে বিদ্যমান বৈষম্য বহুলাংশে দূর হবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০ গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে ১৫ বা ১২টি করার প্রাথমিক আলোচনা চলছে। তবে কর্মচারীরা মনে করছেন, জোরালো জনমত ছাড়া এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা কঠিন হবে। তাই, কমিশনের কাছে মতামত দেওয়ার শেষ দিন ১৫ অক্টোবর, ২০২৫-এর আগে সবাই যেন সচেতনভাবে গ্রেড কমানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন, সেই আহ্বান জানানো হচ্ছে।
কর্মচারীদের এই কৌশলগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নবম পে স্কেলে একটি ন্যায্য, মানবিক ও বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো আসবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বর্তমান গ্রেড কাঠামো বনাম প্রস্তাবিত পরিবর্তন কি?
গ্রেড কমানোর পক্ষের মূল আলোচনা
- বৈষম্য হ্রাস: বর্তমানে বিশেষ করে निचले দিকের গ্রেডগুলোর মধ্যে বেতনের পার্থক্য সামান্য, কিন্তু গ্রেডের কারণে মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার তারতম্য অনেক বেশি মনে হয়। গ্রেড কমলে এই বৈষম্য কিছুটা কমতে পারে।
- কর্মচারী অসন্তোষ: গ্রেডের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক সময় পদোন্নতি আটকে থাকা বা দ্রুত কাঙ্ক্ষিত গ্রেডে না পৌঁছানোর কারণে অসন্তোষ দেখা দেয়।
- প্রশাসনিক সুবিধা: একটি সহজ ও সংক্ষিপ্ত গ্রেড কাঠামো বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করা সহজ।
আপনার প্রস্তাব নিয়ে ভাবনা
১২টি গ্রেড করার পক্ষে যারা যুক্তি দেন, তারা প্রায়শই উন্নত দেশের সিভিল সার্ভিসের কাঠামোকে উদাহরণ হিসেবে দেখান। তাদের মতে, এটি কাঠামোকে আরও গতিশীল ও যৌক্তিক করে তুলবে। তবে, এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে কোটি কোটি সরকারি কর্মচারীর বেতন-ভাতা, পদমর্যাদা, এবং পদোন্নতির ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে এবং এর জন্য একটি ব্যাপক প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন হবে।
বর্তমানে এই বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও, গ্রেড কমানোর আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া।




আগামী নতুন বেতন কাঠামোয় বেতন ফিক্সশনের ক্ষেত্রে কি ইনক্রিমেন্ট ফ্যাক্টর পদ্ধতি অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ করা হবে? সবিনয়ে জানতে চাই।
জি। অতীতে তাই হয়েছে।