আমলাতন্ত্রের ‘রাজত্ব’ ভাঙতে জরুরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ২০২৫ । পে-কমিশনে কর্মচারী-নেতাদের অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক কি?
সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য বেতন কাঠামো নিশ্চিত করার পথে মূল বাধা এখন আমলাতান্ত্রিক স্বার্থ—এমন কঠোর বিশ্লেষণ উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। তাদের মতে, শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নন, বরং সরাসরি নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা এবং তাদের সমর্থক রাজনৈতিক নেতাদের পে-কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করাই একমাত্র উপায়, যা সচিবদের ‘রাজত্ব’ ভেঙে ১:৪ বেতন অনুপাত কার্যকর করতে পারে।
সচিবদের অন্যায্য বেতন কাঠামো তৈরির প্রবণতা
বিশেষজ্ঞ এবং কর্মচারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, অতীতে উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তা বা সচিব পর্যায়ের ব্যক্তিদের দিয়ে গঠিত পে-কমিশনগুলি কখনোই নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের কল্যাণে বেতন কাঠামোতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনেনি। তাদের লক্ষ্য থাকে:
- ১:১০ অন্যায্য অনুপাত জিইয়ে রাখা: তারা ন্যায্য ১:৪ অনুপাতের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের মধ্যে ১:১০ বা তার চেয়ে বেশি বৈষম্যমূলক অনুপাত ধরে রাখতে আগ্রহী।
- স্বার্থের সংঘাত: এই কর্মকর্তারা মূলত নিজেদের স্বার্থ, শুধু বিসিএস ক্যাডার বা সচিবদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করেন, যা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের আর্থিক হীনম্মন্যতায় ভুগতে বাধ্য করে।
- দুর্নীতির চক্র: আপনার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই অন্যায্য বেতন কাঠামো তৈরি হয় বলেই উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তারা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের ‘পুতুল বা প্রজার মত অন্যায় কাজে ব্যবহার’ করে দুর্নীতি ও নিম্নমানের সেবাকে জাতির ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: পে-কমিশনের পুনর্গঠন
এই আমলাতান্ত্রিক চক্র ভাঙতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। আপনার প্রস্তাবিত সমাধানই এক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক পদক্ষেপ হওয়া উচিত:
১. কর্মচারী প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা অন্তর্ভুক্তিকরণ: পে-কমিশনের কমিটিতে অবশ্যই নিম্ন গ্রেডের (১১ থেকে ২০) কর্মচারীদের সরাসরি প্রতিনিধি এবং তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্য হবে—আমলাতান্ত্রিক চাপকে প্রতিহত করা এবং কমিশনের অভ্যন্তরে ‘নিম্ন গ্রেডের যন্ত্রণার’ প্রত্যক্ষ কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করা।
২. নির্দেশনা জারি: সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পে-কমিশনকে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিতে হবে যে, তাদের সুপারিশ অবশ্যই ১:৪ অনুপাতের কাছাকাছি একটি ন্যায্য অনুপাত মেনে তৈরি করতে হবে। এই অনুপাতের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিতে হবে।
৩. ভেটো ক্ষমতা সীমিতকরণ: এই প্রক্রিয়ায় উচ্চপদস্থ আমলাদের ভেটো ক্ষমতা বা প্রভাব সীমিত করতে হবে, যাতে তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে হস্তক্ষেপ করে বৈষম্য জিইয়ে রাখতে না পারে।
সুন্দর জাতি গঠনে ৩৫,০০০ টাকার গুরুত্ব
পে-স্কেলের এই পরিবর্তনের গুরুত্ব কেবল আর্থিক নয়, এটি ‘সুন্দর জাতি’ গড়ার ভিত্তি। ১:৪ হারে সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা বেতন কাঠামো কার্যকর হলে:
- নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পাবেন, যা তাদের আত্মমর্যাদা ও পেশাদারিত্ব বাড়াবে।
- আর্থিক হীনম্মন্যতা দূর হওয়ায় দুর্নীতির মূল শিকড় দুর্বল হবে।
- জনসেবা প্রদানকারী গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, যেমন পুলিশ, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ-তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শতভাগ নিশ্চিত হবে।
আমলাতান্ত্রিক আধিপত্যের রাজনীতি ভেঙে সরকার যদি এই সাহসী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারে, তবেই প্রশাসনের প্রতি জনগণের শতভাগ আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।



