সার্ভিস রুলস । নীতি । পদ্ধতি । বিধি

APA Change into GPMS 2025 । সরকারি কাজে গতি ও স্বচ্ছতা আনতে ‘এপিএ’ বাতিল, চালু হচ্ছে নতুন পদ্ধতি ‘জিপিএমএস’?

সহজভাবে সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (GPMS) সংক্রান্ত পরিপত্র জারি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মসম্পাদন মূল্যায়নের পুরোনো পদ্ধতি ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ – APA)’ বাতিল করে নতুন পদ্ধতি ‘সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস – GPMS)’ চালু করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হয়েছে।

পরিবর্তনের মূল কারণ: সরকারি কর্মকাণ্ডে আরও বেশি গতিশীলতা, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতদিন সরকারি দপ্তরগুলো বার্ষিক চুক্তির মাধ্যমে তাদের কর্মপরিকল্পনা ও অর্জন মূল্যায়ন করত।

নতুন পদ্ধতিতে কী থাকছে? নতুন ‘সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (GPMS)’ বা গভর্নেন্স পারফর্মেন্স মনিটরিং সিস্টেম-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো: ১. বহু-বছরের পরিকল্পনা: এখন থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কেবল এক বছরের নয়, বরং একটি বহু-বছরের (যেমন তিন বছর বা পাঁচ বছর মেয়াদি) কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. মান ও ফলাফলের উপর জোর: কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে শুধু কাজের পরিমাণ বা আউটপুট নয়, কাজের মান (Quality) এবং সুদূরপ্রসারী ফলাফলের ওপর জোর দেওয়া হবে। ৩. নিয়মিত পরিবীক্ষণ: এই নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রতিটি দপ্তরের কাজের অগ্রগতি নিয়মিত এবং আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৪. নতুন সফটওয়্যার: জিপিএমএস কার্যকর করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি নতুন সফটওয়্যারও তৈরি করেছে। এখন থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাদের কর্মসম্পাদন পরিকল্পনা তৈরি ও দাখিল করতে হবে।

সরকার মনে করছে, নতুন এই ব্যবস্থা সরকারি সেবার মান উন্নয়ন এবং জনগণের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (APA) এবং সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (GPMS) হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের দুটি পদ্ধতি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এপিএ-এর পরিবর্তে জিপিএমএস চালু করেছে।

এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো নিচে সহজভাবে তুলে ধরা হলো:

বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রএপিএ (APA – Annual Performance Agreement)জিপিএমএস (GPMS – Governance Performance Monitoring System)
নামের পূর্ণরূপAnnual Performance Agreement (বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি)Governance Performance Monitoring System (সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি)
মূল ভিত্তিবার্ষিক (এক বছরের) লক্ষ্য নির্ধারণ ও চুক্তি।বহু-বার্ষিক (যেমন ৩ বা ৫ বছরের) কৌশলগত পরিকল্পনা এবং তার ভিত্তিতে বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন।
সময়কালসাধারণত এক অর্থবছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হতো।দীর্ঘমেয়াদী (৩ বা ৫ বছর) পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছরের জন্য কর্মসম্পাদন পরিকল্পনা তৈরি হবে।
লক্ষ্যের প্রকৃতিমূলত বছরভিত্তিক কার্যক্রম ও ফলাফলের (Output) উপর জোর দেওয়া হতো।কাজের ফলাফল (Output) এবং গুণগত মান (Quality) – উভয় দিকের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সংস্কারের উদ্দেশ্যসরকারি কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি।সরকারি কার্যক্রমকে অধিক দক্ষ, জবাবদিহিমূলক, জনকল্যাণমুখী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কাঠামোগত সংস্কার।
প্রবর্তনকারী২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে চালু হয়।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের আলোকে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে।
পরিমাপের দিকমূলত চুক্তিতে উল্লেখিত কর্মসম্পাদন সূচকের অর্জন পরিমাপ করা হতো।বহুবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সামগ্রিক কর্মক্ষমতা এবং সুশাসনের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করা হবে।

বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (APA) এবং সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (GPMS) হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের দুটি পদ্ধতি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এপিএ-এর পরিবর্তে জিপিএমএস চালু করেছে।

এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো নিচে সহজভাবে তুলে ধরা হলো:

বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রএপিএ (APA – Annual Performance Agreement)জিপিএমএস (GPMS – Governance Performance Monitoring System)
নামের পূর্ণরূপAnnual Performance Agreement (বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি)Governance Performance Monitoring System (সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি)
মূল ভিত্তিবার্ষিক (এক বছরের) লক্ষ্য নির্ধারণ ও চুক্তি।বহু-বার্ষিক (যেমন ৩ বা ৫ বছরের) কৌশলগত পরিকল্পনা এবং তার ভিত্তিতে বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন।
সময়কালসাধারণত এক অর্থবছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হতো।দীর্ঘমেয়াদী (৩ বা ৫ বছর) পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছরের জন্য কর্মসম্পাদন পরিকল্পনা তৈরি হবে।
লক্ষ্যের প্রকৃতিমূলত বছরভিত্তিক কার্যক্রম ও ফলাফলের (Output) উপর জোর দেওয়া হতো।কাজের ফলাফল (Output) এবং গুণগত মান (Quality) – উভয় দিকের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সংস্কারের উদ্দেশ্যসরকারি কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি।সরকারি কার্যক্রমকে অধিক দক্ষ, জবাবদিহিমূলক, জনকল্যাণমুখী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কাঠামোগত সংস্কার।
প্রবর্তনকারী২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে চালু হয়।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের আলোকে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে।
পরিমাপের দিকমূলত চুক্তিতে উল্লেখিত কর্মসম্পাদন সূচকের অর্জন পরিমাপ করা হতো।বহুবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সামগ্রিক কর্মক্ষমতা এবং সুশাসনের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করা হবে।

সহজ কথায় মূল তফাৎ:

এপিএ ছিল মূলত এক বছরের চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি। এটি একটি অর্থ বছরে কী কাজ হবে, তার একটি কাঠামো দিত। অন্যদিকে, জিপিএমএস হল একটি দীর্ঘমেয়াদী (৩/৫ বছর) পরিকল্পনানির্ভর এবং কাঠামোগতভাবে সংস্কারকৃত নতুন পদ্ধতি। এর লক্ষ্য শুধু এক বছরে কাজ শেষ করা নয়, বরং একটি বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজগুলোকে আরও উন্নত গুণগত মান নিশ্চিত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

জিপিএমএস কি এপিএ এর চেয়ে সহজ হবে?

উদ্দেশ্য ও কাঠামোগত দিক থেকে জিপিএমএস (GPMS) পদ্ধতিকে সহজ এবং বাস্তবমুখী করার চেষ্টা করা হলেও, এর আওতা বিস্তৃত হওয়ায় এটি আরও গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদী কাজ দাবি করবে।

সংক্ষেপে বলা যায়:

১. কাঠামোগতভাবে সহজ এবং বাস্তবমুখী

  • এপিএ-এর সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ: এপিএ কাঠামোতে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল যা সরকারি কাজে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা ও জবাবদিহিতা আনতে পারেনি। জিপিএমএস আনার মূল উদ্দেশ্যই ছিল এপিএ-এর চেয়ে ‘অধিকতর বাস্তবমুখী ও ফলাফলভিত্তিক’ একটি ব্যবস্থা তৈরি করা।
  • দ্বৈততা পরিহার: নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যে সকল বিষয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ বা পরিকল্পনা কমিশন (আইএমইডি) সরাসরি তদারকি করে থাকে, দ্বৈততা পরিহারের লক্ষ্যে সেগুলো জিপিএমএস-এর আওতায় আনা হয়নি। এটি কাজকে কিছুটা সরল করতে পারে।
  • সফটওয়্যার-ভিত্তিক ও কাগজবিহীন: জিপিএমএস কাঠামো সম্পূর্ণরূপে সফটওয়্যার-ভিত্তিক এবং কাগজবিহীন (পেপারলেস) করার কথা বলা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াগত জটিলতা কমাতে সাহায্য করবে।

২. কাজের ধরনে আরও গভীর ও বিস্তৃত (কমপ্লেক্স)

যদিও কাঠামোকে সরল করা হয়েছে, কাজের ধরনে এটি আরও বিস্তৃত।

  • দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (Long-term Plan): এপিএ ছিল কেবল এক বছরের চুক্তি। কিন্তু জিপিএমএস-এ প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগকে ৩ বা ৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রতি বছর এটিকে হালনাগাদ করার কাজটি এপিএ-এর তুলনায় বেশি সময়সাপেক্ষ ও জটিল।
  • ফলাফল ও গুণগত মানের উপর জোর: জিপিএমএস-এ শুধু কাজের সংখ্যা (Output) নয়, বরং কাজের গুণগত মান (Quality) এবং তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল (Outcome/Impact) এর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। গুণগত মান পরিমাপ করার জন্য সূচক নির্ধারণ এবং তা মূল্যায়ন করা সংখ্যা পরিমাপের চেয়ে বেশি কঠিন।
  • থার্ড পার্টি মূল্যায়ন: জিপিএমএস-এ পৃথক বিশেষজ্ঞ দল (থার্ড পার্টি) দ্বারা প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের কৌশলগত প্রতিবেদন মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই বহুমাত্রিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া কাজকে আরও কঠোর ও গভীর করবে।

সিদ্ধান্ত:

প্রক্রিয়াগত দিক (Documentation/Software) থেকে জিপিএমএস হয়তো এপিএ-এর চেয়ে সরল হবে। কিন্তু কৌশলগত দিক (Strategic Planning) এবং ফলাফল ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণের চ্যালেঞ্জের কারণে এটি সামগ্রিকভাবে অধিকতর বিস্তৃত, গভীর এবং ফলাফল-নির্ভর একটি পদ্ধতি হবে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *