বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

এমপিও শিক্ষকদের ভাতাদি পুন: নির্ধারণ ২০২৫ । মাসিক বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দ্বিগুণ করা হচ্ছে?

এমপিও ভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা ও বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দ্বিগুন করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে-গতকাল আন্দোলন ও সমাবেশের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার–এমপিও শিক্ষকদের ভাতাদি পুন: নির্ধারণ ২০২৫

মাসিক বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা কত পান? এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেলেও মে মাসে বাড়িয়ে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ করা হয়। এর বাইরে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী উৎসব ভাতা পান।

ভাতাদি কত টাকা বাড়বে? সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, শিক্ষকদের মাসিক বাড়ি ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,০০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। তবে, আন্দোলনরত শিক্ষকেরা এই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের দাবি, সরকারি কর্মচারীদের মতো তাঁদেরকেও মূল বেতনের ওপর ভিত্তি করে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হোক। বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৪০% থেকে ৭০% পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া পান, যা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রস্তাবিত ভাতার চেয়ে অনেক বেশি।

সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে কি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে? না। এমপিওভুক্ত শিক্ষক সংগঠনগুলো তাঁদের দাবি আদায়ে সরকারকে এক মাসের সময়সীমা দিয়েছে। তাঁরা হুমকি দিয়েছেন যে, এই সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। সুতরাং, মাসিক বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাব থাকলেও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

এমপিও শিক্ষক বলতে মূলত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেইসব শিক্ষক-কর্মচারীদের বোঝানো হয়, যাদের বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকার থেকে Monthly Pay Order বা MPO এর মাধ্যমে মাসিক অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়। এটি মূলত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সরকারি অংশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী মূল বেতন পান। তবে, সরকারি শিক্ষকদের মতো তারা পূর্ণাঙ্গ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। তাদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় অনেক কম। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নিয়মকানুন মেনে পরিচালিত হয়। সরকার তাদের জনবল ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে এই সহায়তা দেয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের শতভাগ সরকারি অংশ হিসেবে পান। এছাড়া, তারা কিছু নির্দিষ্ট ভাতা যেমন – বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা এবং উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন।

Caption: MPO Teacher Salary

শিক্ষক বেতন ২০২৫ । এমপিওভূক্ত একজন শিক্ষক কত টাকা বেতন ভাতাদি পান? এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন ও ভাতা পেয়ে থাকেন, তবে সরকারি কর্মকর্তাদের তুলনায় তাদের কিছু সুবিধা কম। তাদের বেতন-ভাতা সাধারণত নিম্নলিখিত কাঠামো অনুযায়ী নির্ধারিত হয়

  1. মূল বেতন: জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নির্ধারিত। যেমন, একজন প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষক যোগদানকালে ১২,৫০০ টাকা মূল বেতন পান। 
  2. বাড়ি ভাড়া ভাতা: বর্তমানে ১,০০০ টাকা। 
  3. চিকিৎসা ভাতা: বর্তমানে ৫০০ টাকা। 
  4. শিক্ষা ভাতা: দুই সন্তানের জন্য ১,০০০ টাকা। 
  5. বিশেষ সুবিধা: মূল বেতনের ১৫% হারে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। 
  6. উৎসব ভাতা: শিক্ষকরা মূল বেতনের ৫০% হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পান। কর্মচারীরা পান ৫০% হারে। 
  7. বৈশাখী ভাতা: মূল বেতনের ২০% হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা পান। 
  8. পেনশন: এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পেনশন পান না। তবে, অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে কিছু আর্থিক সুবিধা পান।

শিক্ষকদের অন্যান্য ভাতাদি কি বাড়বে?

সম্প্রতি, শিক্ষকদের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, তাদের মাসিক বাড়ি ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,০০০ টাকা করার একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে, এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষকদের দাবি, সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদেরকেও মূল বেতনের ওপর ভিত্তি করে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হোক, যা বর্তমানে প্রস্তাবিত ভাতার চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং, একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের মোট বেতন-ভাতা তার মূল বেতন গ্রেড ও অন্যান্য সুবিধার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

এখন এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের দাবী কি? এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্তমান দাবির মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ। দীর্ঘ দিন ধরে তারা এই দাবি করে আসছেন এবং এর পাশাপাশি তাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি রয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রধান দাবিগুলো হলো:

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ: এটি শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় দাবি। তারা মনে করেন, এটি কার্যকর হলে এমপিওভুক্ত এবং সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য দূর হবে। জাতীয়করণ হলে শিক্ষকেরা সরকারি শিক্ষকদের মতো পূর্ণাঙ্গ বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা: এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা তাদের মূল বেতনের ২৫% উৎসব ভাতা পান, যেখানে সরকারি শিক্ষকেরা পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। তারা সরকারি শিক্ষকদের মতো দুটি পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতার দাবি করছেন।

বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি: তারা বর্তমানে বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসে ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৫০০ টাকা পান, যা বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা এই দুটি ভাতাও সরকারি শিক্ষকদের সমপরিমাণ হারে বৃদ্ধির দাবি করছেন।

বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট এবং টাইম স্কেল/সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল: শিক্ষকেরা নিয়মিত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের পুনর্বহালেরও দাবি করে আসছেন। এই দাবিগুলো নিয়ে শিক্ষকেরা বিভিন্ন সময় সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন এবং অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তারা আশা করছেন, সরকার তাদের এই দীর্ঘদিনের দাবিগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *