নতুন চাকরিতে যোগদান করেই কলিগদের সাথে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে এমণ লোকের অভাব নেই বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে। এটা ভেবেই নিয়েছে কিছু লোক সরকারি চাকরি একবার হলে আর যাবার নয়-সরকারি কর্মচারীর ঘুষ বানিজ্য ২০২৪
এটি একটি ভূল ধারণা। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ রকম ধারণা তারাই পোষণ করে যারা মামা, খালু বা কোন খুটির জোরে চাকরি পায়। তবে সব কিছুরই একটি সীমা থাকে, সব কিছুরই শেষ বলে একটি কথা আছে।
ঘুষ কি?
আপনার দপ্তারিক দায়িত্ব পালন করেই কোন কর্মচারী বা অন্য কোন দপ্তরের কর্মচারী বা কোন সেবা গ্রহীতার নিকট হতে অতিরিক্ত যে অর্থ বা বস্তু বা খাদ্য ব্যক্তিগত গ্রহণই ঘুষ। আমরা অনেকেই এরকম ট্রিট বা বকশিষকে সাদরে গ্রহণ করি এই বলে যে, “এটা আমার প্রাপ্য” অনেক পরিশ্রম করছি আপনার কাজ নিয়ে। আরে বাবু এটাতো আপনার দায়িত্ব ছিল, সরকার এ দায়িত্ব বা কষ্ট বা পরিশ্রম করার জন্য আপনাকে মাসে মাসে বেতন দিয়ে রেখেছি।
নীতি কথা:
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষই অন্যায় করে তার পক্ষে একটি যুক্তি দাড় করায় যে ” আমি ভুল করিনি” এটা আমার প্রাপ্য ছিল। আজব ব্যাপার চোরও তো চুরি করে একটা যুক্তি দেখায় যে ” তার এত কিছু আছে আমার কেন একটিও নেই, এটা আমার প্রাপ্য ছিল, আমি চুরি করে ভুল করিনি। তাই বলে কি চোর যদি ধরা খেতো তাহলে কি মালিক ওকে আদর করে ছেড়ে দিতো? না দিতো না চরম শাস্তি হতো তার।
যা হোক আজকে আমি আপনাদের একজন ঘুষ খোরের অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে জানাবো।
০৭ মে ২০১৭ সালের ৪৬.০৬৭.০০৩.০০.০০.০০২.২০১৬-৩৮৯ নম্বর প্রজ্ঞাপন মোতাবেক জনাব মো: শাহিনুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়, এলজিইডি, বগুড়া অঞ্চল, বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলায় উপজেলা প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে
যে সকল অপরাধ করেছেন:
(ক) তারঁ উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন নি।
(খ) বিভাগীয় মামলার তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন এবং বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে তর্ক করেছেন।
(গ) শাজাহানপুরের উপজেলা পরিষদের ২১-১২-২০১৫ খ্রি: তারিখের সভার কার্যবিবরণীর ১৫ নং অনুচ্ছেদের বিবিধ আলোচনা ও সিদ্ধান্তের অংশ বাদ দিয়ে জারিয়াতির মাধ্যমে কার্যবিবরণী তৈরিীপূর্বক তদন্ত কর্মকর্তার নিকট দাখিল করে প্রতারণা করেছেন।
(ঘ) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির কাছ থেকে ৫% অর্থ ঘুষ হিসেবে দাবী করেছেন এবং ফাইল আটকে ঘুষ গ্রহণ করেছেন;
(ঙ) উপজেলা পরিষদের অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোন ধরণের প্রতিবাদ করেননি, এত তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়;
(চ) উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে পারস্পরিক সন্বয়ের মাধ্যমে তিনি দায়িত্ব পালন করেন নি।
(ছ) স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্য দাপ্তিরিক কাজে প্রভাব বিস্তার করেন।
(জ) অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অফিসে আগত লোকজনের সাথে শিষ্টচার বর্হিভূকত অশালীন ও ঔদ্ধাত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং অফিস শৃংখলা ও চাকুরি বিধি পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকেন;
(ঝ) তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবে অফিসে বিশৃংখলা পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
(ঞ) তাঁর অশালীন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ফলে দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়; এবং
(ট) বিভিন্ন সময়ে তাকেঁ লিখিত ও মৌখিকভাবে সতর্ক করা সত্ত্বেও তাঁর আচরণের কোন পরিবর্তণ হয়নি।
পরবর্তীতে সরকার কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৮৫ মোতাবেক কর্তব্যে অবহেলা, অসদাচরণ ও দূর্নীতির দায়ে বিভাগী মামলা রুজু করা হয়।
জনাব মো: শাহিনুজ্জামানের প্রদত্ত লিখিত জবাব ও আনুষাংঙ্গিক রেকর্ডপত্র ও তার বক্তব্য পর্যালোচনা করে সন্তোষজনক মনে না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়;
তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী পদ হতে স্থায়ীন সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (কর্মকর্তা এবং কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৯ এর ৮ (২) (ক) ধারা মোতাবেক তাঁর চাকুরীর অবসান ঘটানো হয়।
সার সংক্ষেপ:
চাকরিতে যোগদানের শুরুতেই দেখা যাচ্ছিল তর্ক বিতর্কে জড়ানো বা ঘুষ গ্রহণ সহ অন্যান্য অসদাচারণে জড়িয়ে পড়া।
- দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি।
- জালিয়াতির মাধ্যমে কার্যবিবরণী তৈরীপূর্বক তদন্ত কর্মকর্তার নিকট দাখিল।
- তদন্ত কর্মকর্তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।
- ফাইল আটকে ঘুষ গ্রহণ করেছেন।
- চাকরি স্থায়ী হওয়ার পূর্বেই এ সব কাজে জড়িয়ে পড়ায় চাকরিচ্যূত হয়েছেন।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটির JPG করি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন: ডাউনলোড