শিক্ষানবীশকালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তির বিধান ২০২৫ । সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ?
কর্তব্যে অবহেলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে নোটিশ জারি- নোয়াখালী, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫: নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস (ডিপিইও) জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি অফিস স্মারকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা ও সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।
🚨 মূল অভিযোগসমূহ
জারি করা নোটিশ অনুযায়ী, গত ২১.১১.২০২৫ থেকে শুরু হওয়া জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য চলমান একটি ‘উপজেলা ভিত্তিক বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে’ অংশগ্রহণকারী কয়েকজন শিক্ষক প্রশিক্ষণে যোগদানের পরেও দায়িত্বশীলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষক বিধিমালা-২০২৩-এর নির্দেশনাবলী এবং প্রশিক্ষণের ১ নং ক্রমিকে (ক) উল্লিখিত কর্তব্যগুলো সুষ্ঠুভাবে পালন না করে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি শিক্ষক বিধিমালা-২০২৩ এর ২ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলাকালীন তাঁদের চাকরি দুই বছরের জন্য অযোগ্য হিসেবে গণ্য করার ক্ষমতা কর্মকর্তাদের হাতে রয়েছে।
⏳ কারণ দর্শানোর সময়সীমা
নোটিশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাঁদের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ সরকারি চাকরি বিধিমালা এবং শিক্ষক বিধিমালা-২০২৩, ২ (খ) ও ৩ (খ) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তাঁদেরকে কেন বিভাগীয়/শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সেই মর্মে নোটিশ প্রাপ্তির ০৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত নিশ্চয়তাকারীর মাধ্যমে জবাব দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
▶️ কর্তৃপক্ষের কঠোর মনোভাব
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব), ইফফাতুন নাসীমা রাহীর, সাক্ষরিত এই অফিস আদেশটি থেকে স্পষ্ট যে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে শিক্ষকদের ঢিলেমি বা অনুপস্থিতি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, জেলার অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে একটি সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে, সরকারি দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের গাফিলতি বা বিধি লঙ্ঘন গ্রহণযোগ্য হবে না।

সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২৩ এর নিয়োগ পত্রের ২ নং ক্রমিকের ঘ অনুযায়ী চাকরি যেতে পারে?
- অসদুপায় অবলম্বন: যদি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রার্থী অসদুপায় অবলম্বন করে (যেমন – পরীক্ষায় অসদুপায়, জাল সার্টিফিকেট জমা দেওয়া ইত্যাদি) ধরা পড়ে, তাহলে তার নিয়োগ বাতিল হতে পারে এবং চাকরিও হারাতে হতে পারে।
- নিয়োগের শর্তাবলী লঙ্ঘন: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত কোনো শর্তাবলী যদি কেউ লঙ্ঘন করে (যেমন – প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাব থাকা সত্ত্বেও চাকরি গ্রহণ করা), তাহলে তার নিয়োগও বাতিল হতে পারে।
- গুরুতর অসদাচরণ: নিয়োগের পর কোনো শিক্ষক যদি গুরুতর অসদাচরণ করে বা সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর পরিপন্থী কাজ করে, তাহলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে।
শিক্ষানবীশ কাল কি?
হ্যাঁ, শিক্ষানবীশকাল বলতে সাধারণত প্রবেশন পিরিয়ড (Probation Period)-কে বোঝানো হয়। এটি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মচারীর জন্য চাকরি জীবনের একটি পরীক্ষামূলক সময়কাল। এই সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ কর্মচারীর কাজ, আচরণ, দক্ষতা এবং পদটির জন্য তাঁর সার্বিক উপযোগিতা পর্যবেক্ষণ করে।
🧐 শিক্ষানবীশকাল (Probation Period) কী?
শিক্ষানবীশকাল হলো কর্মজীবনের সেই নির্দিষ্ট সময়সীমা যখন একজন নতুন কর্মচারী বা কর্মকর্তাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
উদ্দেশ্য: এই সময়কালে কর্মীকে তাঁর পদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দেখে নেয় যে তিনি সেই পদে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য উপযুক্ত কিনা।
সময়কাল: এর সময়সীমা সাধারণত সরকারি চাকুরিতে ১ বছর থেকে ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে পদ বা প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী এটি ভিন্ন হতে পারে (যেমন শ্রম আইনে ক্লার্কদের জন্য ৬ মাস, অন্যদের জন্য ৩ মাস বলা আছে, যা বর্ধিত হতে পারে)।
পর্যবেক্ষণ: কর্তৃপক্ষ এই সময়কালে কর্মীর পারফরম্যান্স (Performance) বা কাজের মান এবং আচরণ সন্তোষজনক কি না তা নিরূপণ করে।
🏛️ সরকারি চাকরিতে শিক্ষানবীশকাল
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষানবীশকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্থায়ীত্ব লাভ: শিক্ষানবীশকাল সন্তোষজনকভাবে শেষ করার পরই একজন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী হয় এবং তিনি সরকারি চাকরির সকল সুবিধা ও নিরাপত্তা লাভ করেন।
চাকরির অবসান: যদি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ মনে করে যে শিক্ষানবীশকালে কোনো কর্মচারী চাকরির জন্য অনুপযোগী বা তাঁর পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়, তবে কারণ দর্শানো ছাড়াই শিক্ষানবীশকাল শেষে তাঁর চাকরির অবসান ঘটাতে পারে অথবা পদোন্নতির ক্ষেত্রে পূর্বের পদে প্রত্যাবর্তন করাতে পারে।
বিধি-বিধান: সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৯ ধারা অনুযায়ী, শিক্ষানবীশকাল ও চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পর্কিত বিষয় ও শর্তাদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হয়।
মোটকথা, শিক্ষানবীশকাল হলো একজন কর্মচারীর জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণের সময় এবং নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন কর্মচারীর যোগ্যতা যাচাই করার প্রক্রিয়া।



