বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

প্রত্যাশিত ৯ম পে-স্কেল ২০২৫ । সরকারি কর্মরত ও অবসর ভোগীদের বেতন কাঠামো নিয়ে প্রত্যাশা কি?

দীর্ঘদিন প্রতিক্ষার পর সরকারি (কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত) কর্মচারীরা তাদের কাংখিত বৈষম্যহীন ও সচ্ছল একটি বেতন কাঠামো পেতে যাচ্ছে মনে হয়। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার পে-কমিশন গঠন করে সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন-প্রত্যাশিত ৯ম পে-স্কেল ২০২৫

ন্যূনতম বেতন কত হওয়ার প্রয়োজন? পে-কমিশন একটি বৈষম্যহীন সচ্ছল বেতন কাঠামো উপহার দিয়ে কর্মচারীদের জন্য দুশ্চিন্তাহীন ও দুর্নীতিমুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবেন। কথায় আছে, পেটে খেলে পিটে সয়। একটি বৈষম্যহীন ও সচ্ছল বেতন কাঠামো কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ ও শতভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। কর্মরত কর্মচারীদের জন্য একটি বৈষম্যহীন, সচ্ছল ও মানসম্মত বেতন কাঠামো নির্ণয়ে নুন্যতম বেতন স্কেল ৩০,০০০/- টাকা ও অন্যান্য ভাতা সমূহ যুক্তিসংগত হারে বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া কর্মচারীদের জন্য রেশনিং কিংবা রেশনিং ভাতা প্রবর্তন করা যেতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী (সিনিয়র সিটিজেন) জন্য কি থাকা উচিত? যারা আজীবন সরকারি দায়িত্বে থেকে দেশ জাতির জন্য সেবা দিয়ে পরবর্তীদের জন্য একটি সুদুরপ্রসারি ও সহজ পন্থায় কাজ করার পটভূমি তৈরী করে গিয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত (সিনিয়র সিটিজেন) কর্মচারীদের পেনশনের পরিমাণ এমনিতেই কম। অবসরে যাওয়ার সময় যে পরিমাণ আনুতোষিকের টাকা পাওয়া যায়, তা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ, সন্তানদের বিয়ে শাদী, দেনা কর্জ পরিশোধ, সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে, মাথা গুজার মত একটি বাড়ি তৈরী ইত্যাদি অপরিহার্য বিষয়ে ব্যয় হয়ে যায়। ফলে তাদের আয় দ্রুত কমে যায়। তদুপরি স্বামী স্ত্রী অবিবাহিত ও বেকার ছেলে মেয়েদের ব্যয় নির্বাহ সহ স্বামী স্ত্রী দু’জনের খাওয়া পরা, চিকিৎসা ইত্যাদি অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হয়। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদেরও দিন দিন আয় কমে যাওয়ায় তাদের অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এঅবস্থায়, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বৈষম্যহীন ও সচ্ছল জীবন যাপনের প্রতিও সরকারের আবশ্যকীয় ও মানবিক দায়িত্ব রয়েছে।

গ্রেড সংখ্যা কমানো উচিত কি? হ্যাঁ। বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা এসেছে, যার ভিত্তিতে ধারণা করা যায় যে নতুন পে-স্কেল কেমন হতে পারে। গ্রেড সংখ্যা হ্রাস: ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১০ থেকে ১২টি গ্রেড করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বনিম্ন বেতন বৃদ্ধি: সর্বনিম্ন বেতন ৮,২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ বেতন বৃদ্ধি: সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,০০,০০০ টাকার ওপরে করার প্রস্তাব করা হয়েছে।বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও আলোচনা থেকে একটি সম্ভাব্য বেতন স্কেলের কাঠামো নিচে দেওয়া হলো। এটি কোনো চূড়ান্ত বা সরকারি সিদ্ধান্ত নয়।

তিন শ্রেণী ১০ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ ২০২৫ । শ্রেণী ভেঙ্গে গ্রেড বাড়িয়ে বৈষম্য আরও বাড়ানো হয়েছে

সরকার যখন নতুন পে-কমিশন গঠন করবে, তখন তারা বিভিন্ন বিষয় যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয়, এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচক বিবেচনা করে একটি নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত পে-স্কেল ঘোষণা করা হবে।

১০ গ্রেডে বেতন কাঠামো ২০২৫ । এটি কোন সরকারি সিদ্ধান্ত নয়। বিভিন্ন সংগঠনের দাবী অনুসারে প্রস্তুত করা হয়েছে।

  1. সিনিয়র সচিব / ১ম গ্রেড ১,০০,০০০ – ১,০৫,০০০
  2. সচিব / ২য় গ্রেড ৯০,০০০ – ৯৫,০০০
  3. অতিরিক্ত সচিব / ৩য় গ্রেড ৮৫,০০০ – ৯০,০০০
  4. যুগ্ম সচিব / ৪র্থ গ্রেড ৮০,০০০ – ৮৫,০০০
  5. উপসচিব / ৫ম গ্রেড ৭০,০০০ – ৭৫,০০০
  6. সিনিয়র সহকারী সচিব / ৬ষ্ঠ গ্রেড ৬০,০০০ – ৬৫,০০০
  7. সহকারী সচিব / ৭ম গ্রেড ৫০,০০০ – ৫৫,০০০
  8. প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ৪৫,০০০ – ৫০,০০০
  9. দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ৩৫,০০০ – ৪০,০০০
  10. তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ২৫,০০০ – ৩০,০০০

সিনিয়র সিটিজেনদের প্রত্যাশা কি?

অবসরপ্রাপ্ত (সিনিয়র সিটিজেন) সরকারি কর্মচারীদের কিছু চাহিদা রয়েছে যা মূল বেতনের হারে ভাতাদি নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যা পেনশন ভোগরত কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

  • ক) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য অবসর ভাতা বর্তমান হারের দ্বিগুণকরন অথবা পি এল আর এ গমণের প্রাক্কালে সর্বশেষ মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ অবসর ভাতা হিসেবে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
  • খ) ৬০% হারে চিকিৎসা ভাতা নির্ধারণ করা প্রযোজন।
  • গ) মানুষ হিসেবে বয়স, দুশ্চিন্তা, রোগেশোকে শারিরীক ও মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত অবসরভোগীদের জন্য একটু বিনোদনের প্রয়োজনে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী মাসিক পেনশনের সম পরিমাণ অর্থ বিনোদন ভাতা হিসেবে প্রবর্তন করতে হবে।
  • ঘ) ৮০% হারে রেশনিং ভাতা প্রবর্তন করতে হবে।
  • চ) পেনশনভোগী ও স্ত্রী (বেঁচে থাকলে) পেনশনের সাথে ৬০% হারে পারিবারিক ভাতা নির্ধারণ করতে হবে।
  • ছ) বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা ও নববর্ষ ভাতা প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বহাল রাখা প্রয়োজন।
  • জ) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের উচ্চতর শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত সন্তানদের প্রতিজনের জন্য ন্যুনতম ৫০০০/- টাকা হারে শিক্ষা সহায়ক ভাতা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

নতুন পে স্কেল কবে দিবে?

নতুন পে-স্কেল কবে নাগাদ কার্যকর হতে পারে, সে সম্পর্কে সরকারিভাবে এখনো চূড়ান্ত কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। গত ২৪ জুলাই, ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য একটি পে-কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের নবম পে-কমিশন। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে। সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনে এই পে-কমিশনকে তাদের প্রথম সভার তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে তারা বিদ্যমান বেতন, ভাতা, এবং অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে একটি নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ করবে। কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর, সরকার তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এবং গেজেট প্রকাশ করবে। বিভিন্ন আলোচনা ও অনুমান অনুযায়ী, নতুন পে-স্কেল ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এটি এখনো নিশ্চিত কোনো তারিখ নয়। নতুন পে-স্কেলের জন্য গঠিত পে-কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তাই, নতুন পে-স্কেল কার্যকর হতে ২০২৬ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

6 thoughts on “প্রত্যাশিত ৯ম পে-স্কেল ২০২৫ । সরকারি কর্মরত ও অবসর ভোগীদের বেতন কাঠামো নিয়ে প্রত্যাশা কি?

  • 2য় শ্রেণীর কর্মকর্তা পদটা একটা অবহেলিত পদ। নামেই কর্মকর্তা বাস্তবে কিছুই নাই।

  • ইশরাত জাহান

    আপনাদের সহযোগিতার জন্যে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি একজন বিধবা পেনশনভোগী মহিলা। আপনারা যদি চ ঘ পসতাবিত পেনশনের পাশাপাশি পারিবারিক ভাতা দেন রেশনিং দেন তাহলে বর উপকার হবে। চিকিৎসা ভাতা ৫০০০ দেননা। ঔশদ কুনতে পারিনা যে টাকা পাই। সব মিলিয়ে ১২০০০ টাকা পাই। কত কশট। নুন আনতে পসনতা পুরোয়। বর কশটে আছি দাদা।

  • মোঃ আব্দুল জব্বার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পিআরএল

    পেনশনারগণের মূল বেতনের পূর্ণ অর্থ প্রদান ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। দ্রব্য মূল্যের উদ্ধৃগতি ও মূল্য প্রীতির কারণে পেনশনারগণের মহার্ঘ ভাতাও বৃদ্ধির প্রয়োজন। Toপেনশনার গত দীর্ঘ ৫৯ বছর দেশের বিভিন্ন সেবা প্রদান করায় এ বিষয়ে ৯ম পেস্কেল কমিটির সভাপতি তথা সচিব মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

  • নতুন পেনশনে আশা আশা করছি ভাল কিছু আসবে আপনাদের জন্য।

  • গ্রেড সিস্টেমে বড় পরিবর্তন আসলে পদ পদবিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

  • Md.Monirul Islan

    ২০১৫ সালের পর ২০২৫ সাল পর্যন্ত (অদ্যাবধি)আর পে স্কেল না দেয়ায় আমার ও আমার মত যারা ২০২১ সালের পর যেমন আমি ২০২৪ সালে রিটায়ার্ড করেছি ৩০২৩০/ টাকা মূল বেসিকে,অথচ নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর নির্ধারিত সময়ে পে স্কেল দিলে আমার বেসিক থাকত কম করে হলেও ৫০,০০০/ হাজারের কাছাকাছি,হিসাব করে দেখুন যে আমরা পেনশনার রা কি পরিমান আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছি শুধু মাত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বৈষম্যের কারণে।তাই মাননীয় পে কমিশনের নিকট আবেদন এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের (যারা ২০২১ সালের পর পেনশনে গিয়েছি) কিছু একটা ব্যাবস্থা রাখা।যাতে এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *