৯ম পে-স্কেল ২০২৬ । জাতীয় বেতন ভাতাদি আদেশ পেনশনারগণের প্রত্যাশা কি?
দীর্ঘদিন প্রতিক্ষার পর সরকারি (কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত) কর্মচারীরা তাদের কাংখিত বৈষম্যহীন ও সচ্ছল একটি বেতন কাঠামো পেতে যাচ্ছে মনে হয়। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার পে-কমিশন গঠন করে সদিচ্ছার বহিঃ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমরা আশা করি, পে-কমিশন একটি বৈষম্যহীন স্বচ্ছ বেতন কাঠামো উপহার দিয়ে কর্মচারীদের জন্য দুশ্চিন্তাহীন ও দুর্নীতিমুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবেন– ৯ম পে-স্কেল ২০২৬
ন্যায় সঙ্গত বেতন কাঠামো হতে হবে? হ্যাঁ। কথায় আছে, পেটে খেলে পিটে সয়। একটি বৈষম্যহীন ও সচ্ছল বেতন কাঠামো কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ ও শতভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। কর্মরত কর্মচারীদের জন্য একটি বৈষম্যহীন, সচ্ছল ও মানসম্মত বেতন কাঠামো নির্ণয়ে নুন্যতম বেতন স্কেল ৩০,০০০/- টাকা ও অন্যান্য ভাতা সমূহ যুক্তিসংগত হারে বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া কর্মচারীদের জন্য রেশনিং কিংবা রেশনিং ভাতা প্রবর্তন করা যেতে পারে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী সিনিয়র সিটিজেন মাথা গুজার ঠাই নাই? যারা আজীবন সরকারি দায়িত্বে থেকে দেশ জাতির জন্য সেবা দিয়ে পরবর্তীদের জন্য একটি সুদুরপ্রসারি ও সহজ পন্থায় কাজ করার পটভূমি তৈরী করে গিয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত (সিনিয়র সিটিজেন) কর্মচারীদের পেনশনের পরিমাণ এমনিতেই কম। অবসরে যাওয়ার সময় যে পরিমাণ আনুতোষিকের টাকা পাওয়া যায়, তা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ, সন্তানদের বিয়ে শাদী, দেনা কর্জ পরিশোধ, সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে, মাথা গুজার মত একটি বাড়ি তৈরী ইত্যাদি অপরিহার্য বিষয়ে ব্যয় হয়ে যায়। ফলে তাদের আয় দ্রুত কমে যায়। তদুপরি স্বামী স্ত্রী অবিবাহিত ও বেকার ছেলে মেয়েদের ব্যয় নির্বাহ সহ স্বামী স্ত্রী দু’জনের খাওয়া পরা, চিকিৎসা ইত্যাদি অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হয়।
একজন পেনশনার প্রতিমাসে কত টাকা পেনশন পায়? একজন পেনশনার প্রতিমাসে কত টাকা পেনশন পান, তা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। পেনশন গণনার জন্য একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অবসরের ঠিক আগে একজন কর্মচারীর মূল বেতন কত ছিল, তা পেনশন নির্ধারণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পেনশনযোগ্য চাকরির মোট সময়কাল (সাধারণত বছর হিসেবে) পেনশন নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। পেনশনের একটি সহজ সূত্র হলো মাসিক পেনশন = (সর্বশেষ মূল বেতন x পেনশনযোগ্য চাকরির হার) ÷ ২ + চিকিৎসা ভাতা এখানে, পেনশনযোগ্য চাকরির হার (%) চাকরির মেয়াদের উপর নির্ভর করে। যেমন:
৫ বছর চাকরি করলে ২১%
১০ বছর চাকরি করলে ৩৬%
২০ বছর চাকরি করলে ৭২%
২৫ বছর বা তার বেশি চাকরি করলে ৯০%
উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন সরকারি কর্মচারী ২৫ বছর চাকরি করে থাকেন এবং তার সর্বশেষ মূল বেতন ৩৪,০১০ টাকা হয়, তাহলে তার মাসিক পেনশন হবে: (৩৪,০১০ x ৯০%) ÷ ২ = ১৫,৩০৪.৫০ টাকা। এর সাথে চিকিৎসা ভাতা যোগ করা হয়। সাধারণত ৬৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য ১৫০০ টাকা এবং ৬৫ বছর ও তার বেশি বয়সীদের জন্য ২৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয়।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি খুবই কম ফলে ফলে চাকরি শেষে হাতে খুব একটা টাকা থাকে না / নিম্ন গ্রেডের কর্মচারী
সর্বনিম্ন পেনশন কত পায় জানেন? সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, একজন পেনশনারের মাসিক পেনশনের পরিমাণ যাই হোক না কেন, তিনি সর্বনিম্ন ৩,০০০ টাকা পেনশন পাবেন। তবে, সর্বোচ্চ পেনশনের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা নেই। এটি কেবল কর্মচারীর সর্বশেষ মূল বেতন এবং চাকরির মেয়াদের উপর নির্ভর করে। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সর্বশেষ মূল বেতন অনেক বেশি হওয়ায় তার পেনশনও একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারীর চেয়ে অনেক বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের অবসরের সময় সর্বোচ্চ ধাপে মূল বেতন ৭৪,৪০০ টাকা হলে, তার মাসিক পেনশন হতে পারে প্রায় ৩৭,২০০ টাকা, যার সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ হয়। সুতরাং, পেনশন কত হবে তা নির্ভর করে পেনশনারের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- তার শেষ মূল বেতন এবং চাকরির সময়কালের উপর।
Caption: Pension Family
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদেরও দিন দিন আয় কমে যাওয়ায় তাদের অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এঅবস্থায়, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বৈষম্যহীন ও সচ্ছল জীবন যাপনের প্রতিও সরকারের আবশ্যকীয় ও মানবিক দায়িত্ব রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত (সিনিয়র সিটিজেন) সরকারি কর্মচারীদের জন্য নিম্নোক্ত হারে ভাতাদি নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যা পেনশন ভোগরত কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে
- ক) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য অবসর ভাতা বর্তমান হারের দ্বিগুণকরন অথবা পি এল আর এ গমণের প্রাক্কালে সর্বশেষ মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ অবসর ভাতা হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে।
- খ) ৬০% হারে চিকিৎসা ভাতা নির্ধারণ করতে হবে।
- গ) মানুষ হিসেবে বয়স, দুশ্চিন্তা, রোগেশোকে শারিরীক ও মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত অবসরভোগীদের জন্য একটু বিনোদনের প্রয়োজনে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী মাসিক পেনশনের সম পরিমাণ অর্থ বিনোদন ভাতা হিসেবে প্রবর্তন করতে হবে।
- ঘ) ৮০% হারে রেশনিং ভাতা প্রবর্তন করতে হবে।
- চ) পেনশনভোগী ও স্ত্রী (বেঁচে থাকলে) পেনশনের সাথে ৬০% হারে পারিবারিক ভাতা নির্ধারণ করতে হবে।
- ছ) বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা ও নববর্ষ ভাতা প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বহাল রাখতে হবে।
- জ) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের উচ্চতর শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত সন্তানদের প্রতিজনের জন্য ন্যুনতম ৫০০০/- টাকা হারে শিক্ষা সহায়ক ভাতা নির্ধারণ করতে হবে।
- ঝ) পেনশনার সঞ্চয় পত্রের মুনাফা ন্যুনতম ২৫%-৩০% নির্ধারণ করতে হবে।
পেনশনের টাকায় সংসার চালে?
একজন মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের ক্ষেত্রে পেনশনের টাকায় শুধু সংসার চালানো কিছুটা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যদি পরিবারে কোনো নির্ভরশীল সদস্য থাকে। তবে, যারা অনেক উচ্চ পদে থেকে অবসর নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে পেনশনের টাকা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই সংসার চালানো সম্ভব। পেনশনের টাকায় সংসার চালানোর জন্য অনেকে যে পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করেন, সেগুলো হলো সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো লাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগ পেনশনের এককালীন প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটির টাকা দিয়ে অনেকে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখেন। এর থেকে প্রাপ্ত সুদ মাসিক পেনশনের সাথে যুক্ত হয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। মিতব্যয়ী জীবনযাপন অনেকেই অবসরের পর জীবনযাপনের ধরনে পরিবর্তন আনেন এবং মিতব্যয়ী জীবনযাপন বেছে নেন।অতিরিক্ত আয়ের উৎস খোঁজা কেউ কেউ অবসরের পর খণ্ডকালীন কাজ, পরামর্শক হিসেবে কাজ করা, অথবা কোনো ছোট ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করেন। সংক্ষেপে, পেনশনের টাকায় সংসার চালানো সম্ভব, তবে তা নির্ভর করে পেনশনের পরিমাণ, জীবনযাপনের ব্যয় এবং অন্যান্য আয়ের উৎসের উপর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পেনশনের টাকা অনেক পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অবলম্বন, কিন্তু সবসময় তা যথেষ্ট নাও হতে পারে।