সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ ২০২৫ । ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে কৃচ্ছ্র সাধনের নির্দেশ?
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট পরিপত্র জারি; ভবন ও যানবাহন ক্রয়, এবং বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধের ঘোষণা- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়নের জন্য ‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে একটি বাজেট পরিপত্র জারি করেছে। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় বাজেট সুষ্ঠু ও সময়মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই সংশোধিত বাজেট প্রস্তুত করা জরুরি বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে । এই প্রক্রিয়ায় ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধন নিশ্চিত করতে কতিপয় কঠোর নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে ।
মূল নির্দেশনা: ব্যয়সীমা ও বরাদ্দ
সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সংকুলানযোগ্য হতে হবে । স্পষ্টত, কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না । তবে, মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ তাদের মূল বাজেটের মোট ব্যয়সীমার মধ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিট বা অর্থনৈতিক কোডের বরাদ্দ হ্রাস/বৃদ্ধি করতে পারবে ।
গুরুত্বপূর্ণভাবে, অনুমোদিত মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে যদি কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকার অনুমান করা হয়, তাহলে উক্ত অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না ।
কৃচ্ছ্র সাধনের জন্য কঠোর পদক্ষেপ
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে:
- ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা: পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ব্যতীত নতুন ‘আবাসিক ভবন’, ‘অনাবাসিক ভবন’ এবং ‘অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা’ খাতে শুধুমাত্র ইতোমধ্যে Work Order দেওয়া অর্থের সমপরিমাণ বরাদ্দ রাখা যাবে ।
- যানবাহন ক্রয় বন্ধ: সকল ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে । তবে, পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের অধিক পুরোনো টিওএন্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করা যাবে ।
- ভূমি অধিগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা: পরিচালন বাজেটে ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে । তবে, উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালনপূর্বক অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ব্যয় করা যেতে পারে ।
- বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ: সরকারের নিজস্ব অর্থে সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে । কেবল অত্যাবশ্যকীয় বিবেচিত হলে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ও অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে ।
- উপরে উল্লিখিত (ভবন, যানবাহন ক্রয়, ভূমি অধিগ্রহণ, বৈদেশিক ভ্রমণ) খাতসমূহে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না এবং অন্য খাত হতে এসব খাতেও অর্থ পুনঃউপযোজন করা যাবে না ।
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অগ্রাধিকার
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত খাত ও প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে:
- অগ্রাধিকার খাত: দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক ও মানবসম্পদ উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত খাতসমূহকে গুরুত্ব দিতে হবে ।
- নির্দিষ্ট প্রকল্প: বৈদেশিক ঋণ/অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্প এবং চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
- অর্থ বরাদ্দ: ধীর গতিসম্পন্ন প্রকল্প হতে বরাদ্দ হ্রাস করে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ প্রদান করতে হবে । বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং দুর্যোগ মোকাবেলা ও পুনর্বাসন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
- নতুন প্রকল্প: চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় স্থানীয় মুদ্রার বরাদ্দ নিশ্চিতকরণসাপেক্ষেই শুধু অপরিহার্য নতুন প্রকল্পের জন্য স্থানীয় মুদ্রার বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে ।
এছাড়াও, আরএডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে এবং সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার ঠিক করে প্রয়োজনে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে ।
বাজেট প্রাক্কলন দাখিলের সময়সীমা
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের পরিচালন বাজেটের সংশোধিত প্রাক্কলনসমূহসহ সংশোধিত নন-এডিপি স্কিমসমূহের প্রাক্কলন আগামী ০৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১/২-এ প্রেরণ করতে হবে । সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি/প্রকল্পসমূহের প্রাক্কলনসমূহ অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১/২, পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সেক্টর ডিভিশনেও একই সময়ের মধ্যে এক প্রস্থ করে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ।

পরিপত্রটি জারির তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০২৫
কোন কোন ব্যয়গুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে?
সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে নিম্নলিখিত ব্যয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে বা ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে:
১. ভবন নির্মাণ:
- আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন: পরিচালন বাজেটের আওতায় নতুন ‘আবাসিক ভবন’, ‘অনাবাসিক ভবন’ এবং ‘অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা’ নির্মাণ বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা এবং যেসব ভবনের জন্য ইতোমধ্যে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা যাবে।
২. যানবাহন ক্রয়:
- সকল প্রকার যানবাহন: মোটরযান, জলযান ও আকাশযানসহ সকল ধরনের যানবাহন ক্রয় বন্ধ থাকবে।
- ব্যতিক্রম: শুধুমাত্র পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের অধিক পুরোনো টিওএন্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করা যাবে।
৩. ভূমি অধিগ্রহণ:
- পরিচালন বাজেটে ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
- ব্যতিক্রম: উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালনপূর্বক অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ব্যয় করা যেতে পারে।
৪. বৈদেশিক ভ্রমণ:
- সরকারের নিজস্ব অর্থে সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে।
- ব্যতিক্রম: কেবল অত্যাবশ্যকীয় বিবেচিত হলে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ও অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে।
৫. অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি:
- সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সংকুলানযোগ্য হতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না।
৬. খাত পরিবর্তন:
- উপরিউক্ত (ভবন, যানবাহন ক্রয়, ভূমি অধিগ্রহণ, বৈদেশিক ভ্রমণ) খাতসমূহে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না এবং অন্য খাত হতে এসব খাতেও অর্থ পুনঃউপযোজন করা যাবে না।
৭. অব্যয়িত উন্নয়ন বাজেট:
- অনুমোদিত মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে যদি কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকার অনুমান করা হয়, তাহলে উক্ত অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এই নির্দেশনাগুলোর মূল লক্ষ্য হলো সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধন নিশ্চিত করা এবং সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করা।


