ই-বুক I এস্টাব্লিশমেন্ট ম্যানুয়েল

বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সহযোগীগণের কল্যাণে নতুন নীতিমালা ২০২৫ । হাট-বাজারের ইজারালব্ধ আয়ের ৪% ব্যয় হবে কিভাবে?

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীগণের কল্যাণে একটি যুগান্তকারী নীতিমালা প্রণয়ন করেছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীগণের কল্যাণে হাট ও বাজারের ইজারালব্ধ আয়ের ৪% অর্থ ব্যয় নীতিমালা, ২০২৫’ শিরোনামের এই নীতিমালাটি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে

এই নীতিমালার মাধ্যমে হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ এবং সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত হাট ও বাজারের ইজারালব্ধ আয়ের শতকরা ৪ (চার) ভাগ অর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার বিধান কার্যকর হলো প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে

🏥 যে সকল খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হবে:

বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীগণের কল্যাণে নিম্নলিখিত খাতসমূহে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে:

  • চিকিৎসা

  • প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত

  • মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সংশ্লিষ্ট বিবিধ কার্যক্রম

  • জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্যদের ভাতা

🩺 চিকিৎসা সুবিধার বিস্তারিত:

নীতিমালায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীগণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে:

  • বার্ষিক চিকিৎসা সুবিধা: জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরিশিষ্ট-ক তে উল্লিখিত বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীগণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয় বাৎসরিক অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করতে পারবে

  • জটিল রোগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা: বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহে জটিল রোগ বা মুমূর্ষু রোগীর জরুরি অপারেশন ও চিকিৎসার জন্য ১ (এক) লক্ষ টাকার অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাৎসরিক অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে

  • স্ত্রী বা স্বামীর জন্য সুবিধা: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীগণের স্ত্রী বা স্বামীও এই সুবিধা প্রাপ্য হবেন

    • সাধারণ ও জটিল রোগের জন্য বাৎসরিক অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা

    • বিশেষায়িত হাসপাতালে জটিল রোগ বা জরুরি অপারেশনের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে বাৎসরিক অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা পর্যন্ত

    • কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর একাধিক স্ত্রী থাকলে, প্রদেয় চিকিৎসা সুবিধার পরিমাণ তাদের প্রত্যেকের মধ্যে সমহারে বিভাজিত হবে

  • চিকিৎসা সুবিধা নগদ বা চেকের মাধ্যমে প্রদান করা যাবে না

🏠 প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অনুদান:

জীবিত অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহ নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য জীবদ্দশায় একবার অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অনুদান মঞ্জুরি প্রাপ্য হবেন ‘বীর নিবাস’ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই অনুদান পাওয়া যাবে অনুদানের অর্থ সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করা হবে

🏦 ইজারালব্ধ অর্থ জমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট:

উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হাট ও বাজারের ইজারার অর্থ জমা হওয়ার ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে শতকরা ৪ (চার) ভাগ অর্থ নিম্নলিখিত দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা প্রদান করতে হবে:

  1. সোনালী ব্যাংক পিএলসি, রমনা কর্পোরেট শাখা, ঢাকা: সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর- ০৪৪২৬৩৪১৯১৫৫৪, অ্যাকাউন্টের নাম- Muktijuddhader Kalyane Jathajatha Babher

  2. অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্পোরেট শাখা, ঢাকা: সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর- ০২০০০০১২১১০৫২, অ্যাকাউন্টের নাম- Muktijuddhader Kalyane Hat Bazar

বড় পরিবর্তন কিসে?

এই নতুন নীতিমালায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলি হলো:

১. 💰 ইজারালব্ধ অর্থ ব্যয়ের খাত ও বিধান সুস্পষ্টকরণ:

  • উৎসের বিধান: হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩ এর অধীন প্রণীত বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ এবং সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত হাট ও বাজারের ইজারালব্ধ আয়ের ৪% অর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীগণের কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে

  • ব্যয়ের খাত: এই ৪% অর্থ ব্যয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট ৪টি খাত নির্ধারণ করা হয়েছে—চিকিৎসা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সংশ্লিষ্ট বিবিধ কার্যক্রম এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্যদের ভাতা

২. 🏥 চিকিৎসা সুবিধার ব্যাপক বৃদ্ধি:

চিকিৎসা সুবিধার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে এবং এর পরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে:

  • বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীগণ: জটিল ও সাধারণ চিকিৎসার জন্য বাৎসরিক অনধিক ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুবিধা

  • জটিল রোগের চিকিৎসা (বিশেষায়িত হাসপাতালে): ১ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত প্রয়োজন হলে বাৎসরিক অনধিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করার সুযোগ

  • স্ত্রী বা স্বামীর চিকিৎসা: তাঁদের স্ত্রী বা স্বামীও চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। সাধারণ/জটিল রোগের জন্য বাৎসরিক অনধিক ৫০ হাজার টাকাজটিল রোগের জন্য অতিরিক্ত প্রয়োজন হলে বিশেষায়িত হাসপাতালে বাৎসরিক অনধিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

  • নগদ প্রদান নিষিদ্ধ: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সহযোগী বা তাঁদের স্বামী/স্ত্রীকে নগদ বা চেকের মাধ্যমে কোনো অর্থ প্রদান করা যাবে না

৩. ⚖️ পুরোনো নীতিমালা রহিতকরণ:

  • এই নীতিমালা (বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীগণের কল্যাণে হাট ও বাজারের ইজারালব্ধ আয়ের ৪% অর্থ ব্যয় নীতিমালা, ২০২৫) কার্যকর হওয়ার ফলে পূর্বের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের কল্যাণে সরকারি হাট-বাজারসমূহের ইজারালব্ধ আয়ের ৪% অর্থ ব্যয় নীতিমালা, ২০২২’ রহিত করা হলো

সংক্ষেপে, এই নীতিমালা ইজারালব্ধ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্র ও পদ্ধতিকে আরও সুনির্দিষ্ট, স্বচ্ছ ও বর্ধিত সুবিধা সম্বলিত করেছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সহযোগীগণের কল্যাণে নতুন নীতিমালা ২০২৫

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *