শিক্ষকদের সাথে ‘তামাশা’ ২০২৫ । ২০% বাড়িভাড়ার দাবির বিপরীতে ৫% এর প্রহসন মানবেন না শিক্ষকরা, দেশজুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি?
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতার ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে সরকার ৫% বা নির্দিষ্ট অঙ্কের সামান্য বৃদ্ধির ‘প্রহসন’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক নেতারা। শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত তাদের স-সম্মানে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা না করলে দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত জবাব দেবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
দীর্ঘদিন ধরে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। বর্তমানে তাঁরা ১,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সম্প্রতি ১,৫০০ টাকা বাড়িভাড়া পাচ্ছেন, যা তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের কাছ থেকেই শতাংশ হারে বাড়িভাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক হিসাব সংগ্রহ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। সেই হিসাবে ২০ শতাংশ হারে বছরে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু এখন সেই হিসাবকে পাশ কাটিয়ে ৫ শতাংশ বা নির্দিষ্ট অঙ্কের সামান্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা বলছেন, মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়ার দাবি একটি যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি, যা দেশের ৯৮ শতাংশ সাধারণ মানুষ সমর্থন করে। যেখানে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িভাড়া পান, সেখানে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের সামান্য বৃদ্ধি বা ৫% এর প্রস্তাব শিক্ষকদের সাথে ‘তামাশা’ ছাড়া আর কিছু নয়।
শিক্ষক নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের দাবির যৌক্তিকতা দেশের সাধারণ মানুষও বুঝতে পারছে। টাকা তো সরকারের পকেট থেকে যাচ্ছে না, যাচ্ছে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে। সেই জনগণও আমাদের যৌক্তিক দাবির সমর্থন করছে। তাহলে শিক্ষকদের এই দাবি মেনে নিতে আপনাদের সমস্যা কোথায়?”
তাঁরা সরকারের প্রতি দ্রুত কালবিলম্ব না করে ২০% বাড়িভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। হুঁশিয়ারি দিয়ে শিক্ষক নেতারা বলেন, “আর তামাশা নয়, ৫% এর প্রহসন বন্ধ করুন। শিক্ষকদের স-সম্মানে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুন। না হলে দেশের ৯৭% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এই প্রহসনের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত।”
শিক্ষক নেতারা আরও জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হলে পূর্বঘোষিত লাগাতার অবস্থান ও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সরকারের এই ঔদাসীন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
৫% বাড়ি ভাড়ার বেশি দেওয়ার সক্ষমতা কি সরকারের নেই?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়ে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপদেষ্টা এই বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী:
- আর্থিক সীমাবদ্ধতা: অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেছেন, সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমান বাজেটের যে অবস্থা, তাতে এই মুহূর্তে ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।
- ৫ শতাংশের প্রস্তাব: তিনি জানিয়েছেন, সরকারের আর্থিক বাস্তবতা অনুযায়ী বর্তমানে শিক্ষকদের জন্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি (ন্যূনতম ২,০০০ টাকা) আলোচনাধীন। শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী ২০ শতাংশে রাজি হওয়া সরকারের এখতিয়ারের বাইরে।
- ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি: শিক্ষা উপদেষ্টা বিশ্বাস করেন, নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশে আগামী অর্থ বছরে আরও সম্মানজনক একটি কাঠামোর দিকে যাওয়া সম্ভব হতে পারে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উন্নত হলে শতাংশের হার আরও বাড়ানো যেতে পারে।
- বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা: তিনি এও বলেছেন যে, সরকার এমন কোনো আশ্বাস দিতে চায় না যা পরবর্তীতে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। শিক্ষকরা রাজি হলে ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
শিক্ষকদের দাবি ও ব্যয়ের হিসাব:
- ২০% দাবির ব্যয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, শুধুমাত্র স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিতে বছরে প্রায় ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। সমগ্র এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য এই ব্যয় আরও বেশি (প্রায় ৩ হাজার ২৫২ কোটি টাকা)।
- ৫% দাবির ব্যয়: অন্যদিকে, ৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিতে বছরে প্রায় ৯৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা (মাসে ৮১ কোটি ৩০ লাখ টাকা) প্রয়োজন।
- শিক্ষকদের অবস্থান: শিক্ষকরা এই ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা বলছেন, সরকার শিক্ষকদের কাছ থেকে হিসাব নেওয়ার পরও কেন এখন আর্থিক সক্ষমতার দোহাই দিচ্ছে। তাঁরা মনে করছেন, এই অজুহাত একটি ‘প্রহসন’।
সরকারের বর্তমান বক্তব্য অনুযায়ী, হ্যাঁ, সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে এবং সে কারণেই তারা এই মুহূর্তে ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া দিতে পারছে না, বরং ৫ শতাংশ দিতে চাইছে। তবে শিক্ষকরা এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ এবং তাদের যৌক্তিক দাবি পূরণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য আর্থিক সক্ষমতা অনুসারে ৫% থেকে ২০% পর্যন্ত বিভিন্ন হারের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে রেখেছে বলে জানা যায়।




