গার্মেন্টস সুপারভাইজার বেতন ২০২৫ । ওভারটাইম সহ একজন গার্মেন্টস কর্মীর মোট বেতন কত?
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, বিভিন্ন গ্রেডের মোট বেতন, মূল বেতন, বাড়িভাড়া এবং ওভারটাইম কীভাবে হিসাব করা হয়, তার একটি সহজ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো শ্রমিক এবং সংশ্লিষ্ট সবাই যেন স্বচ্ছভাবে নিজেদের পাওনা সম্পর্কে জানতে পারেন। ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত এই কাঠামোতে মোট বেতন, বিভিন্ন ভাতা এবং ওভারটাইম (OT) গণনার পদ্ধতি নিয়ে অনেক শ্রমিকের মনে প্রশ্ন ছিল। এই প্রতিবেদন সেই বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরছে। – গার্মেন্টস সুপারভাইজার বেতন ২০২৫
সব মিলিয়ে মোট বেতন কত? নতুন বেতন কাঠামো (২০২৫) এক নজরে- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী, শ্রমিকদের মোট বেতন গ্রেড-ভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান গ্রেডের মোট বেতন উল্লেখ করা হলো:
- গ্রেড-১: ১৫,০৩৫ টাকা (মোট বেতন)
- গ্রেড-২: ১৪,২৭৩ টাকা (মোট বেতন)
- গ্রেড-৩: ১৩,৫৫০ টাকা (মোট বেতন)
- গ্রেড-৪: ১২,৫০০ টাকা (মোট বেতন)
এই মোট বেতন-এর মধ্যে মূল বেতন (Basic Salary) এবং অন্যান্য ভাতা যেমন—বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ও খাদ্য ভাতা অন্তর্ভুক্ত।
বেতন ও ভাতার হিসাব পদ্ধতি কি? ধরা যাক, একজন হেল্পারের মোট বেতন ১২,৫০০ টাকা। এই মোট বেতন থেকে মূল বেতন এবং বাড়িভাড়া কীভাবে আলাদা করা হয়, তার একটি বিস্তারিত হিসাব নিচে দেওয়া হলো:
মোট ভাতা বাদ দেওয়া: প্রথমে মোট বেতন থেকে সরকার-নির্ধারিত নির্দিষ্ট ভাতাগুলো বাদ দিতে হবে। এই ভাতাগুলো সব গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য সমান।
* খাদ্য ভাতা = ১,২৫০ টাকা
* চিকিৎসা ভাতা = ৭৫০ টাকা
* যাতায়াত ভাতা = ৪৫০ টাকা
* মোট ভাতা = ১,২৫০ + ৭৫০ + ৪৫০ = ২,৪৫০ টাকা
২. মূল বেতন ও বাড়িভাড়া বের করা: মোট বেতন থেকে ভাতা বাদ দিলে যে অঙ্ক থাকে (১২,৫০০ – ২,৪৫০ = ১০,০৫০ টাকা), সেটাই হলো মূল বেতন এবং বাড়িভাড়ার যোগফল। সরকার-নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৫০% (অর্ধেক)। এই নিয়ম অনুসরণ করে: * মূল বেতন = ১০,০৫০ টাকা ÷ ১.৫ = ৬,৭০০ টাকা এবং * বাড়িভাড়া = ৬,৭০০ টাকা ÷ ২ = ৩,৩৫০ টাকা।
এই হিসাব থেকে সহজেই বোঝা যায়, মূল বেতন এবং বাড়িভাড়া যোগ করলে ১০,০৫০ টাকা হয় (৬,৭০০ + ৩,৩৫০)।
ওভারটাইম (OT) হিসাব করার নিয়ম কি? ওভারটাইম (OT) হিসাবের জন্য মূল বেতনের পরিমাণ জানা জরুরি। ওভারটাইম রেট সাধারণত প্রতি ঘণ্টার মূল বেতনের দ্বিগুণ হয়ে থাকে।
১. মাসিক কর্মদিবস: এক মাসে ৩০ দিন থাকলেও সাধারণত ৪টি শুক্রবারের সরকারি ছুটি বাদ দিয়ে ২৬ কর্মদিবস ধরা হয়।
* মোট কর্মঘণ্টা = ২৬ দিন × ৮ ঘণ্টা = ২০৮ ঘণ্টা।
২. প্রতি ঘণ্টার মূল বেতন: মাসিক মূল বেতনকে মোট কর্মঘণ্টা দিয়ে ভাগ করলে প্রতি ঘণ্টার মূল বেতন পাওয়া যায়।
* প্রতি ঘণ্টার মূল বেতন = ৬,৭০০ টাকা ÷ ২০৮ ঘণ্টা = ৩২.২১ টাকা।
৩. ওভারটাইম রেট: প্রতি ঘণ্টার মূল বেতনের দ্বিগুণ হলো ওভারটাইম রেট।
* ওভারটাইম রেট = ৩২.২১ টাকা × ২ = ৬৪.৪২ টাকা (প্রতি ঘণ্টা)।
ন্যূনতম মজুরি কাঠামো অনুযায়ী, একজন পোশাক শ্রমিক গ্রেড-১ এর জন্য মোট বেতন ১৬১৭৯ টাকা, যা বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতাদি নিয়ে গঠিত। ওভারটাইমসহ একজন শ্রমিকের চূড়ান্ত বেতন তার গ্রেড এবং কাজের সময় ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।
গার্মেন্টস ওয়ার্কার কে? গার্মেন্টস ওয়ার্কার বা পোশাক শ্রমিক বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি পোশাক শিল্পে কাজ করেন। এই শিল্পে পোশাক এবং টেক্সটাইল বা কাপড় উৎপাদন করা হয়। গার্মেন্টস কর্মীরা পোশাক তৈরির বিভিন্ন ধাপে কাজ করে থাকেন।
তাদের কাজের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:
কাপড় কাটা (Cutting): পোশাক তৈরির জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুযায়ী বড় রোল থেকে কাপড় কাটা হয়।
সেলাই (Sewing): কাটা কাপড়গুলোকে সেলাই মেশিনের সাহায্যে একত্রিত করে পোশাকের আকার দেওয়া হয়। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি।
সুইং অপারেটর (Sewing Operator): যারা সেলাই মেশিনে কাজ করেন, তাদের অপারেটর বলা হয়। তারা বিভিন্ন ধরনের সেলাই যেমন—সোজা সেলাই, ওভারলক সেলাই ইত্যাদি করে থাকেন।
ফিনিশিং (Finishing): সেলাইয়ের পর পোশাকের অতিরিক্ত সুতো কাটা, বোতাম লাগানো, ইস্ত্রি করা এবং অন্যান্য ছোটখাটো কাজগুলো করা হয়।
প্যাকেজিং (Packaging): সব কাজ শেষ হলে পোশাকগুলোকে ভাঁজ করে প্যাকেজিং করা হয়, যাতে সেগুলো রপ্তানির জন্য প্রস্তুত হয়।
হেল্পার (Helper): এরা সাধারণত অপারেটর বা অন্য কর্মীদের সাহায্য করেন, যেমন—কাপড় এগিয়ে দেওয়া, জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করা ইত্যাদি।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল (Quality Control): পোশাকের মান পরীক্ষা করা এবং নিশ্চিত করা যে সবগুলো পোশাক নিখুঁতভাবে তৈরি হয়েছে।
সংক্ষেপে, একজন গার্মেন্টস ওয়ার্কার হলেন সেইসব কর্মী যারা কাঁচামাল থেকে শুরু করে একটি সম্পূর্ণ পোশাক তৈরি ও প্যাকেজিংয়ের পুরো প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত থাকেন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে গার্মেন্টস শিল্প অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখে এবং এই খাতের অধিকাংশ কর্মীই নারী।
Caption: Garments Supervisor Salary Bangladesh
বাংলাদেশর গার্মেন্টস শ্রমিকের সুপারভাইজার বেতন ২০২৫ । সুপারভাইজার মোঃ মিনহাজুল আবাদিন মুরাদ-এর জুন-২০২৫ মাসের মোট বেতন হলো ১৬,১৭৯ টাকা।
- মূল বেতন: ৯০৫১ টাকা
- বাড়ি ভাড়া: ৪৯৭৮টাকা
- চিকিৎসা: ৭৫০ টাকা
- যাতায়াত: ৪০০ টাকা
- খাদ্য ভাতা: ৮৫০ টাকা
- নৈশভোজ: ১৫০ টাকা
- মোট বেতন: ১৬,১৭৯ টাকা
একজন গামেন্টস শ্রমিকের বেতন কত?
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হয়েছে। নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী, একজন পোশাক শ্রমিকের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন হলো ১২,৫০০ টাকা।
এই কাঠামোতে বিভিন্ন গ্রেডের জন্য বেতন আলাদা:
সর্বনিম্ন গ্রেড (গ্রেড-৫): ১২,৫০০ টাকা (মূল মজুরি ৬,৭০০ টাকা)
গ্রেড-৪: ১৩,০২৫ টাকা
গ্রেড-৩: ১৩,৫৫০ টাকা
গ্রেড-২: ১৪,২৭৩ টাকা
গ্রেড-১: ১৬,১৭৯ টাকা
এই মজুরি প্রতি বছর ৫% হারে বৃদ্ধি পাবে।
সব হিসাব একত্র করে একজন ১২,৫০০ টাকা মোট বেতনের শ্রমিকের আয়ের বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলো:
গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন গ্রেড তালিকা ২০২৫ পিডিএফ । গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন কত?