নবম পে-স্কেল ২০২৫ । গেজেট প্রকাশের আলটিমেটাম, বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা!
নবম পে-স্কেলের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করে জানুয়ারি ২০২৬ সাল থেকে তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংগঠনগুলোও এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
🚨 কর্মচারীদের কঠোর আলটিমেটাম
গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি চাকরিজীবীদের এক মহাসমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। মূলত, জুলাই মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পে কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হলেও (যা শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি), কর্মচারীরা ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সুপারিশ চেয়ে আসছিল। সেই সময়ের মধ্যে সুপারিশ জমা না পড়ায় অসন্তোষের সূত্রপাত হয়। এই প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকারী সরকারি চাকরিজীবীরা এখন ১৫ ডিসেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
❓ পে-কমিশনের অবস্থান: ‘দ্রুত সুপারিশ জমা’র আশ্বাস
কর্মচারীদের এই আন্দোলনের মুখে নতুন বেতন কাঠামোর চূড়ান্ত ঘোষণা সময়মতো আসবে কি না, সেই প্রশ্ন এখন তীব্র। তবে কমিশন এই আন্দোলন নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে দ্রুত সুপারিশ চূড়ান্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
কমিশনের এক সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ ও লেখালিখি চলমান এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই সুপারিশ দাখিল করা হবে। তবে তিনি ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ সম্ভব কি না, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি।
📉 গেজেট প্রকাশের সম্ভাবনা কম
কমিশন এবং সরকারি একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, কর্মচারীদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে গেজেট প্রকাশের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
সুপারিশ জমা: কমিশন ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাদের সুপারিশ জমা দিতে পারে।
সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া: কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষকে তা যাচাই-বাছাই করে নতুন বেতন কাঠামো তৈরিতেও সময় লাগবে।
ফলে, কর্মচারীদের বেঁধে দেওয়া ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের সম্ভাবনা কার্যত নেই। কমিশন দ্রুত সুপারিশ দিলেও সরকারের যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন হবে। এমতাবস্থায়, ১৭ ডিসেম্বর থেকে সরকারি কর্মচারীরা তাদের ঘোষিত কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
মহাসমাবেশ কি কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারলো না?
সরকারি চাকরিজীবীদের মহাসমাবেশ পে-কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ার ওপর তাৎক্ষণিক ও সরাসরি কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
🎯 প্রভাব বিস্তারের বিশ্লেষণ
কমিশনের প্রতিক্রিয়াহীনতা: কমিশন স্পষ্টত জানিয়েছে যে তারা কর্মচারীদের আন্দোলনের বিষয়ে ‘মাথা না ঘামিয়ে’ দ্রুত সুপারিশ চূড়ান্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর অর্থ হলো, আন্দোলন কমিশনের কাজের গতি বা সময়সীমা পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে পারেনি।
সময়সীমা নিয়ে অনড় কমিশন: কর্মচারীরা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ চেয়েছিল এবং এখন ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের আলটিমেটাম দিয়েছে। কিন্তু কমিশনের এক সদস্যের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তারা তাদের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ দিকে সুপারিশ জমা দিতে পারে। এতে বোঝা যায়, কমিশনের কাজ তাদের নির্ধারিত সময়সীমা (যা ফেব্রুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত) বা তাদের নিজস্ব গতিতেই চলছে, আন্দোলনের চাপে তা ত্বরান্বিত হয়নি।
গেজেট প্রকাশে অনিশ্চয়তা: সরকারি সূত্রগুলোও নিশ্চিত করেছে যে, কমিশন সুপারিশ জমা দিলেও যাচাই-বাছাই ও নতুন কাঠামো প্রণয়নে সময় লাগবে, ফলে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ, আন্দোলনের মূল দাবি এই সময়ের মধ্যে পূরণ হচ্ছে না।
⚖️ তবে আন্দোলনের দূরবর্তী প্রভাব
যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কমিশন নতি স্বীকার করেনি, তবুও মহাসমাবেশের কিছু দূরবর্তী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব রয়েছে:
চাপ সৃষ্টি: কর্মচারীদের এই সমাবেশ সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক মহলে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নিতে নৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।
গণসচেতনতা: এই আন্দোলন পে-স্কেল ইস্যুটিকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে।
ঐক্যবদ্ধতা প্রদর্শন: এটি বিভিন্ন সরকারি ও শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে ব্যাপক ঐক্যবদ্ধতা প্রমাণ করেছে, যা ১৭ ডিসেম্বরের পরবর্তী কঠোর কর্মসূচির ভিত্তি তৈরি করবে।
সংক্ষেপে, মহাসমাবেশ কমিশনের কাজের গতি পরিবর্তন করতে না পারলেও, সরকারের ওপর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং পে-স্কেল প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়ার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ বজায় রাখতে সফল হয়েছে।



