সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ভাতাদি হিসাব ২০২৫ । কিভাবে ৫ বছরের বকেয়া বেতন বিল হিসাব করতে হয়?
সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা হিসাব করার পদ্ধতি বেশ জটিল এবং এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। বকেয়া বেতন মূলত পদোন্নতি, টাইমস্কেল, উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি, অথবা নতুন পে-স্কেল কার্যকর হওয়ার কারণে মূল বেতনের পরিবর্তনের ফলে তৈরি হয়। এখানে ৫ বছরের বকেয়া বেতন বিল হিসাব করার একটি সাধারণ প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো, তবে মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারি বিধিমালা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করা অপরিহার্য।– সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ভাতাদি হিসাব ২০২৫
উৎসব ভাতা কি বকেয়া বা এরিয়ার হয়? সরকারি কর্মচারীদের উৎসব ভাতা সাধারণত বকেয়া বা এরিয়ার হয় না। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারি নিয়ম। এই নিয়মটি বেশ কিছু সরকারি প্রজ্ঞাপন এবং বিধিমালায় উল্লেখ আছে। উৎসব ভাতা মূলত সংশ্লিষ্ট উৎসবের পূর্ববর্তী মাসে আহরিত মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ। এটি এমন একটি ভাতা যা উৎসবের ঠিক আগে কর্মচারীর হাতে পৌঁছানো হয় যাতে তিনি উৎসবটি ভালোভাবে উদযাপন করতে পারেন। সরকারের নীতি হলো, উৎসব ভাতা একবার উত্তোলন করা হলে পরবর্তীতে বেতন নির্ধারণজনিত (Pay Fixation) কারণে বেতনের কোনো পরিবর্তন হলেও এর জন্য কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না। অর্থাৎ, যদি আপনার মূল বেতন বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে বকেয়া তৈরি হয়, সেই বকেয়ার সাথে উৎসব ভাতার কোনো সম্পর্ক নেই।
অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম? হ্যাঁ। যারা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছেন, তারা যদি কোনো কারণে নতুন করে উৎসব ভাতা পাওয়ার যোগ্য হন, সেক্ষেত্রেও এই নীতি কার্যকর থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, এই ধরনের কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধি পেলেও তারা কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না। বকেয়া বেতন বা অন্যান্য ভাতার বিল দাখিলের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ফরম (যেমন TR Form) এবং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এই বিলগুলোতে বকেয়া হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ থাকে, যেমন- পদোন্নতি, টাইমস্কেল বা নতুন পে-স্কেল। উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে এমন কোনো কারণের ভিত্তিতে বকেয়া বিল তৈরি করা হয় না। এটি একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য প্রদেয়। কিছু বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া উৎসব ভাতা বকেয়া হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেমন, কোনো কর্মচারী যদি কোনো কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকেন এবং পরবর্তীতে তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়, তাহলে বরখাস্তকালীন সময়ের জন্য তার বেতন ও ভাতাদি বকেয়া হিসাবে প্রাপ্য হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে উৎসব ভাতাও বকেয়া হিসেবে পাওয়া যাবে কি না, তা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক আদেশের ওপর নির্ভরশীল। তবে সাধারণ নিয়মে, বেতন নির্ধারণ বা পে ফিক্সেশনের কারণে উৎসব ভাতার কোনো বকেয়া হয় না। সংক্ষেপে, সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন বিলের ক্ষেত্রে মূল বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হলেও উৎসব ভাতা এর আওতায় আসে না। এটি সংশ্লিষ্ট উৎসবের মাসে এককালীন প্রদান করা হয় এবং এর বকেয়া হয় না।
মূল বেতন ও বাড়ি ভাড়া ছাড়া আর কোন ভাতা বকেয়া নেয়া যায়? মূল বেতন এবং বাড়ি ভাড়ার পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীরা আরও বেশ কিছু ভাতা বকেয়া হিসেবে নিতে পারেন। এই ভাতাগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু কারণে প্রাপ্য হয়, যেমন: টাইম স্কেল/উচ্চতর গ্রেড/সিলেকশন গ্রেড: যখন কোনো কর্মচারী নির্দিষ্ট সময় পর পদোন্নতি না পেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড বা টাইম স্কেল পান, তখন নতুন স্কেলে বকেয়া বেতন ও অন্যান্য ভাতা প্রাপ্য হন। শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা এই ভাতা সাধারণত প্রতি তিন বছর পরপর প্রাপ্য হয়। যদি কোনো কারণে নির্দিষ্ট সময়ে এটি উত্তোলন করা না হয়, তবে পরবর্তীতে বকেয়া হিসেবে তা বিল করা যায়। চিকিৎসা ভাতা কিছু ক্ষেত্রে, যেমন হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসার জন্য প্রাপ্য ভাতা, যদি সময়মতো বিল করা না হয়, তাহলে তা বকেয়া হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে চিকিৎসকদের জন্য বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়ক ভাতা যদি কোনো কারণে এই ভাতা সময়মতো উত্তোলন না করা হয়, তবে এটিও বকেয়া হিসেবে পাওয়ার সুযোগ থাকে। যে কোনো বকেয়া বিল দাখিল করার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী ও ফর্ম (যেমন টিআর ফরম) অনুসরণ করতে হয় এবং বকেয়ার কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে হয়।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন বিল বকেয়া উত্তোলনের হিসাব / যদি সম্পূর্ণ বেতন বকেয়া থাকে বা কোন কারণে বেতন বৃদ্ধি পায় এবং ভূতাপেক্ষ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি উল্লেখ থাকে তবে তা এরিয়ার বা বকেয়া হিসাবে উত্তোলন করা যায়।
এরিয়ার বেতন কি? “এরিয়ার বেতন” (Arrear Salary) বলতে বকেয়া বেতনকে বোঝানো হয়। সহজ ভাষায়, যখন কোনো কর্মচারী তার প্রাপ্য বেতন বা ভাতার একটি অংশ সময়মতো পান না এবং পরে তা এককালীন অথবা কিস্তিতে তাকে পরিশোধ করা হয়, তখন সেই বকেয়া অর্থকে “এরিয়ার বেতন” বলা হয়।

Caption: Excel File Download Link
সরকারি কর্মচারীর বকেয়া বেতন বিল ২০২৫। উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি জনিত কারণে কিভাবে বাড়ি ভাড়া ও বেতন হিসাব করবেন?
- বকেয়া হওয়ার কারণ চিহ্নিতকরণ: প্রথমে আপনাকে জানতে হবে কেন বকেয়া বেতন তৈরি হয়েছে। যেমন: পদোন্নতি: পদোন্নতির কারণে যদি আপনার বেতন গ্রেড বা মূল বেতন বৃদ্ধি পায়, তাহলে নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী বকেয়া তৈরি হবে। উচ্চতর গ্রেড বা টাইমস্কেল: নির্দিষ্ট সময়সীমা পূরণের পর উচ্চতর গ্রেড বা টাইমস্কেল পেলে আপনার বেতন বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে বকেয়া তৈরি হয়। নতুন পে-স্কেল: যখন সরকার নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করে, তখন সাধারণত পূর্ববর্তী কোনো একটি তারিখ থেকে এটি কার্যকর হয়। ফলে ওই তারিখ থেকে নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী বকেয়া হিসাব করতে হয়।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ: বকেয়া বিল জমা দেওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সর্বশেষ বেতন নির্ধারণী আদেশ (Fixation Order)। যে আদেশের কারণে বেতন বৃদ্ধি হয়েছে, তার প্রশাসনিক অনুমোদন সম্বলিত অফিস আদেশ। বকেয়া বেতন বিলের ফরম (যেমন: টি, আর, ফরম নং ১৫ অথবা ১৩)। পূর্বে উত্তোলিত বেতন বিলের কপি। সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সার্ভিস বই। জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর।
- বকেয়া হিসাবের পদ্ধতি: বকেয়া হিসাব করার জন্য আপনাকে দুটি বিষয় তুলনা করতে হবে: নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী প্রাপ্য বেতন ও ভাতাদি: যে তারিখ থেকে আপনার বেতন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেই তারিখ থেকে প্রতি মাসের জন্য নতুন বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি (যেমন: বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি) কত হতো, তা হিসাব করুন। পূর্বে উত্তোলিত বেতন ও ভাতাদি: একই সময়ের জন্য আপনি পূর্বে কত বেতন ও ভাতাদি উত্তোলন করেছেন, তার হিসাব করুন। হিসাবের সূত্র: বকেয়া বেতন ও ভাতাদি = (নতুন বেতন ও ভাতাদির মোট পরিমাণ) – (পূর্বে উত্তোলিত বেতন ও ভাতাদির মোট পরিমাণ) উদাহরণস্বরূপ, ৫ বছরের বকেয়া হিসাব: ধরা যাক, একজন সরকারি কর্মচারী ১ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখ থেকে নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিলটি অনুমোদিত হয়েছে ১ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে। এই ক্ষেত্রে, ১ জানুয়ারি, ২০২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত ৫ বছরের বকেয়া হিসাব করতে হবে।
ধাপ ১: ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসের জন্য নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী তার মূল বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি হিসাব করতে হবে।
ধাপ ২: একই সময়ের জন্য, অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসের জন্য তিনি প্রকৃতপক্ষে যে বেতন ও ভাতা পেয়েছেন, তার হিসাব করতে হবে।
ধাপ ৩: প্রতি মাসের জন্য (ধাপ ১) থেকে (ধাপ ২) বিয়োগ করে মাসিক বকেয়ার পরিমাণ বের করতে হবে।
ধাপ ৪: এই মাসিক বকেয়াগুলো একসাথে যোগ করে ৫ বছরের মোট বকেয়া হিসাব করতে হবে।
- বিল দাখিল ও অনুমোদন:
বকেয়া হিসাব করার পর, তা সঠিক ফরমে (যেমন: TR Form) পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসে জমা দিতে হবে। হিসাবরক্ষণ অফিস আর্থিক বিধি-বিধান অনুযায়ী বিলটি যাচাই-বাছাই করবে এবং অনুমোদন করবে। অনুমোদনের পর, বিলটি EFT (Electronic Fund Transfer) এর মাধ্যমে কর্মচারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে।
সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ভাতাদি বিল কি ম্যানুয়ালী হয়?
হ্যাঁ। বকেয়া বেতনের উপর প্রযোজ্য আয়কর কেটে রাখা হবে অথবা ব্যক্তি আয়কর পরবর্তী পরিশোধ করতে হবে। আয়কর হিসাব করার সময় করমুক্ত আয়ের সীমা এবং প্রযোজ্য করের হার বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত সকল কাজ আইবাস++ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে করা হয়। বকেয়া বিলও এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি ও দাখিল করা হয়। বকেয়া বেতন হিসাব এবং বিল দাখিলের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিমালা, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জারি করা সর্বশেষ নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা আবশ্যক। যেহেতু বকেয়া বেতন হিসাবের পদ্ধতি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সামান্য ভিন্ন হতে পারে এবং সরকারি নিয়মনীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে, তাই আপনার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখা বা প্রশাসনিক দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো। তারা আপনাকে নির্দিষ্ট বিধি ও ফরম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে।
কেন এরিয়ার বেতন তৈরি হয়? এরিয়ার বেতন তৈরি হওয়ার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ থাকে: সংক্ষেপে, এরিয়ার বেতন হলো আপনার প্রাপ্য কিন্তু কোনো কারণে দেরিতে পাওয়া বেতন বা ভাতার অংশ। এটি এককালীন বা কয়েকটি কিস্তিতে পরিশোধ করা হতে পারে এবং এর সাথে প্রযোজ্য আয়কর কেটে রাখা হয়।
| নতুন পে-স্কেল বা বেতন কাঠামো: যখন সরকার নতুন কোনো বেতন কাঠামো বা পে-স্কেল ঘোষণা করে, তখন তা সাধারণত পূর্ববর্তী কোনো একটি তারিখ থেকে কার্যকর হয়। কিন্তু নতুন বেতন অনুযায়ী বেতন দেওয়া শুরু করতে কিছু সময় লাগে। এই মধ্যবর্তী সময়ের জন্য, অর্থাৎ নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে নতুন বেতন কার্যকর হওয়ার তারিখ পর্যন্ত যে বাড়তি বেতন ও ভাতা প্রাপ্য হয়, সেটিই এরিয়ার বেতন হিসেবে প্রদান করা হয়।
| পদোন্নতি, টাইমস্কেল বা উচ্চতর গ্রেড: কোনো কর্মচারীর পদোন্নতি, উচ্চতর গ্রেড বা টাইমস্কেল মঞ্জুর হলে, তার বেতন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই আদেশ কার্যকর হতে এবং বিল প্রস্তুত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ফলে, যে তারিখ থেকে তার নতুন বেতন প্রাপ্য, সেই তারিখ থেকে বিল প্রস্তুত হওয়ার তারিখ পর্যন্ত অতিরিক্ত যে বেতন তার পাওনা হয়, সেটি এরিয়ার বেতন হিসেবে দেওয়া হয়। | ভুল বা প্রশাসনিক বিলম্ব: কখনো কখনো প্রশাসনিক ভুলের কারণে অথবা বিল দাখিল ও অনুমোদনে বিলম্ব হলে কোনো মাসের বেতন বা ভাতা কম দেওয়া হতে পারে। পরবর্তীতে যখন সেই ভুল সংশোধন করা হয়, তখন প্রাপ্য বকেয়া অর্থ এরিয়ার বেতন হিসেবে পরিশোধ করা হয়। |



