স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হাজিরা নিয়ে নতুন নির্দেশনা ২০২৫ । সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক?
দেশের সকল সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ০৫/১০/২০২৫ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) অধ্যাপক ডাঃ মো. রুবায়েত ইবনে আলী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নির্দেশিকা/প্রবিধানমালা অনুযায়ী কর্ম ঘণ্টা অনুসরণ করে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
নির্দেশনার মূল বিষয়গুলো:
- বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক: সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবশ্যই বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে হবে।
- সকাল ৯টায় হাজিরা: সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সকাল ৯টার মধ্যে বায়োমেট্রিক মেশিনে হাজিরা প্রদান করতে হবে।
- ছুটির পূর্বে হাজিরা: সরকারি কর্ম ঘণ্টা শেষ হওয়ার পূর্বে কর্মস্থল ত্যাগের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক মেশিনে হাজিরা প্রদান করতে হবে।
- যন্ত্রপাতির সচলতা নিশ্চিতকরণ: স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধানকে নিজ উদ্যোগে বায়োমেট্রিক মেশিন সচল রাখা এবং কোনো কারণে বিকল হলে দ্রুত মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- নিয়মিত হাজিরা মনিটরিং: স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ইউনিট প্রধানগণকে নিয়মিত বায়োমেট্রিক হাজিরা পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
- ঠিক সময়ে হাজিরা না দিলে শাস্তি: যদি কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী সকাল ৯:০০ ঘটিকার পরে এবং ছুটির পূর্বে হাজিরা না দেন, তবে তাদের অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদন: হাজিরা সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে।
এই নির্দেশনার ফলে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত হবে এবং এর মাধ্যমে সেবার মান উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে অসম্পূর্ণ নির্দেশনা: শিফটিং ডিউটি কর্মীদের দুশ্চিন্তা ও অন্যান্য প্রশাসনিক জটিলতা।
সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে অসম্পূর্ণ নির্দেশনা: শিফটিং ডিউটি কর্মীদের দুশ্চিন্তা ও অন্যান্য প্রশাসনিক জটিলতা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালগুলোতে বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক করে একটি নির্দেশনা জারি করেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের অভিযোগ, নির্দেশনায় শিফটিং ডিউটিতে (পালাক্রমে দায়িত্ব পালন) কর্মরত চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীদের উপস্থিতির বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যা নতুন প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সকাল ৯টার মধ্যে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে হবে এবং কর্মঘণ্টা শেষে আবার হাজিরা দিতে হবে। কর্মীদের প্রশ্ন, এই নির্দেশনা শিফট ডিউটিতে থাকা কর্মীদের জন্য কিভাবে প্রযোজ্য হবে?
শিফট ডিউটি নিয়ে অস্পষ্টতা: “৯টার পরে এলে অনুপস্থিত?”
হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জরুরি সেবাকর্মীরা সাধারণত সকাল, বিকাল ও রাতের শিফটে কাজ করেন। একজন কর্মী তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যদি আমি রাতের শিফটে ডিউটি করি, তবে আমি কীভাবে সকাল ৯টায় উপস্থিত থাকব? অথবা যদি আমার ডিউটি বিকেলে শুরু হয়, তবে ৯টার মধ্যে হাজিরা না দিলে কি আমাকে অনুপস্থিত ধরা হবে? নির্দেশদাতারা ২০২৫ সালেও শিফট ডিউটিতে কর্মীদের হাজিরা কীভাবে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দেননি।”
কর্মীদের মতে, নতুন এই ‘কালা কানুন’-এর ফলে শিফট ডিউটির রস্টার (তালিকা) অনুযায়ী হাজিরার পদ্ধতি নিয়ে অহেতুক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
কর্মীদের দাবি:
- শিফট ডিউটির শেষে কর্মীদের দুই দিন ছুটি দিতে হবে।
- নাইট ডিউটির জন্য কর্মীদের স্বাস্থ্য ভাতা দিতে হবে।
- অপারেশন বা জরুরি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে কাজের সময় শেষ হওয়ার বিষয়টি হাজিরা পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অন্যান্য প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা ও অব্যবস্থাপনা
স্বাস্থ্যখাতে শুধু হাজিরার ক্ষেত্রেই নয়, আরও বেশ কিছু প্রশাসনিক জটিলতা বিদ্যমান। কর্মীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী:
- অন্যান্য দপ্তরে অব্যবস্থা: স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করেন, যেখানে তাদের কঠোরভাবে হাজিরা নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে, সেখানে অন্যান্য সরকারি দপ্তরে গিয়ে দেখা যায় চেয়ার ফাঁকা। একজন কর্মী না থাকলে পাশের কর্মী জানিয়ে দেন যে, তিনি ছুটিতে আছেন—যতক্ষণ না তিনি ফিরছেন, ততক্ষণ কাজ বন্ধ থাকে।
- এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন) জটিলতা: পদোন্নতি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার জন্য এসিআর আপলোড এবং প্রক্রিয়া করার ক্ষেত্রে সিভিল সার্জন, ডিরেক্টর এবং ডিজিএইচএস-এর বিভিন্ন স্তরে দীর্ঘসূত্রিতা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, অক্টোবর মাস হওয়া সত্ত্বেও এখনো ২০২৪ সালের এসিআর আপলোড করা হয়নি এবং এর কোনো সদুত্তরও পাওয়া যাচ্ছে না।
- পদোন্নতিতে অনিয়ম: কর্মীদের অভিযোগ, পদোন্নতির ক্ষেত্রেও অনেক সময় অনিয়ম হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর কোনো সুস্পষ্ট জবাব পাওয়া যায় না।
মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা মনে করেন, যেখানে স্বাস্থ্যখাতের কর্মীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়, সেখানে তাদের জন্য বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক হাজিরা পদ্ধতি চালু করা উচিত। একই সাথে, অন্যান্য দপ্তরের কর্মীদের কাজে অনুপস্থিতি এবং স্বাস্থ্যখাতের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষকে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নির্দেশনার অসম্পূর্ণতা দূর করতে হবে।