ইত্যাদি । বিবিধ । ক্যাটাগরী বিহীন তথ্য

সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন দেশে বয়স ২০২৫ । সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ কেন হয়েছে?

আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নির্ধারিত। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করা যাবে, ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে একজন শিক্ষার্থী যত মেধাবী আর উচ্চশিক্ষিতই হোক না কেন, সরকারি চাকরিতে তার আর আবেদন করারই যোগ্যতা নেই! যুগের পর যুগ ধরে চালু থাকা-সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন দেশে বয়স ২০২৫

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ কেন হয়েছে? সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে. এই অধ্যাদেশটি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণের জন্য জারি করা হয়েছে. এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিভিল সার্ভিসের সকল ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর এবং সিভিল সার্ভিসের আওতা বহির্ভূত সকল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং এটি সরকারি চাকরির জন্য প্রার্থীদের সুযোগ তৈরি করবে. এই পদক্ষেপটি দেশের বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য প্রার্থীদের সুযোগ বাড়াবে, এবং এতে করে তরুণ প্রজন্মের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়াও, এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা আগে বয়সসীমার কারণে সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি হবে. এই নতুন বয়সসীমা নির্ধারণের ফলে সরকারি চাকরির জন্য আরও বেশি সংখ্যক প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন, যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, এই সিদ্ধান্তের কিছু সমালোচনাও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এই বয়সসীমা বাড়ানো উচিত ছিল না, কারণ এতে করে চাকরির জন্য যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ কমে যাবে. কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বয়সসীমা বাড়ানোর ফলে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরির সুযোগ কমে যাবে এবং এতে করে সরকারি চাকরির মানও কমে যেতে পারে।

সব মিলিয়ে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্তটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা সরকারি চাকরির জন্য প্রার্থীদের সুযোগ বাড়াবে এবং দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ নিয়ম পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষ নানারকমভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন’ কোনো ফল হচ্ছে না। কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা তাদের যৌক্তিক দাবিকে। কেন? ৩০ বছর বয়স হয়ে গেলেই কি একজন মানুষের চাকরি করার সব কর্মশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়?

 

৩০ বছর বয়স হয়ে গেলেই কি মানুষ চাকরি করার সব যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে? যদি তা-ই হয়, তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, ৩০ বছরের বেশি বয়সী যারা চাকরি করে, তারা কোন যোগ্যতায় চাকরি করে? ৩০ বছর বয়স হয়ে গেলে যদি মানুষ চাকরি করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে ৩০ বছর বয়সের আগেই, বয়স কম থাকতে থাকতে সবাই চাকরিতে প্রবেশ করে ৩০ বছর পূর্ণ হওয়া মাত্রই চাকরি থেকে অবসরে চলে যাওয়া উচিত! একজন মানুষ যদি ৩৭ বছর বয়স পর্যনত্ম কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় টিকতে না পেরে ৩৭ বছর বয়স হবার পর কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় টিকে যায়, তাহলে তাকে চাকরি দিতে বাধা কোথায়!

৩৭-৩৮ বছর বয়সে কি কেউ আমাদের দেশে সরকারি চাকরি করে না?! শুধু ৩৭-৩৮ বছর বয়সে নয়, ৫৯ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও আমাদের দেশের অনেক সরকারী উচ্চপদস’ কর্মকর্তাকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নতুন করে চাকরি নিতে দেখা যায়। ৫৯ বছর বয়স হয়ে গেলেও, চাকরি না করলেও চলে, এমন অসংখ্য মানুষ যে দেশে নতুন কোনো চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে, সে দেশে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হওয়া একজন উচ্চশিক্ষিত বেকারের, যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে ভালো একটা চাকরির স্বপ্নে, তার জন্য শুধু ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়ার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে!

যার চাকরি ৩০ এ হয়নি ৫ বছর বাড়ালেও তার হবে না? এটি একপেশে বক্তব্য এবং তারা হয়তো গভীরভাবে না ভেবেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে এমন কথা বলছে। সেশান জট, নানারকম অবাঞ্চিত ছুটি, হরতাল, রাজনৈতিক অসি’রতা, অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভার্সিটি বন্ধ, যে কোনো অযুহাতে পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন যে দেশে নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা, সে দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমিত করার মানে যে মেধাবী বা উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদেরকে চাকরি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, কথাটি বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ দাবী কিন্তু সরকার কেন ৩২ বৎসর বয়স নির্ধারণ করতে চাচ্ছে?

সরকারি চাকরির বেধে দেওয়া বয়স কি বেসরকারিতেও প্রভাব ফেলছে? “অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীরা জানেই না ‘সেশান জট’ কাকে বলে, ‘অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা’ বলতে কী বোঝায় বা কিভাবে করতে হয় ‘পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন’।” কথাগুলো অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রদীপ দেব নামক একজন বাংলাদেশীর লেখা ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’ নামক একটি বই থেকে [মীরা প্রকাশন, পৃ-৮৪] নেয়া। অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোনো উন্নত দেশ, যেখানে ২৫-২৬ বছর বয়সে অনেকে শুধু মাস্টার্স নয়, পিএইচডিও সম্পন্ন করে ফেলে, সেসব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০-এর মধ্যে সীমিত করলে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত চাকরিতে প্রবেশে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না। কিন’ বাংলাদেশে অনেকের স্নাতকোত্তর শেষ হতে না হতে বয়স ৩০-এর কাছাকাছি চলে যায়। তাই অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী হাতে থাকা দু’এক বছরে ভালো কোনো চাকরি না পেয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকে তার জন্য অভিশাপ মনে করে। অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করে। অনেকে বিদেশ চলে যায়। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের মেধা।

শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই বয়স বেধে দেওয়া হয় কেন? মালেশিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনে ৯২ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহাথির মোহাম্মদ নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প ৭০ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ৬০ বছর বয়সে বিশ্বের একটি উন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে বাধাগ্রস’ হননি। আমাদের দেশেও অনেক এমপি-মন্ত্রী আছেন, যারা ৬০-৭০ বা তার চেয়েও বেশি বয়সে এসব পদে নির্বাচিত হয়েছেন। কী অসুবিধা? কোনো অসুবিধা যদি না থাকে, তাহলে একজন শিক্ষিত তরুণ বেকার তার ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য একটি চাকরি নিতে বয়সের বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি হবে কেন? যতদিন মানুষের কর্মশক্তি থাকে, ততদিন মানুষ কাজ করবে, এটাই হওয়া উচিত নিয়ম। কিন’ অল্প বয়সেই মানুষকে অকর্মণ্য, অযোগ্য, আনফিট গণ্য করে মানুষের জীবনকে হতাশাগ্রস’ করার কী প্রয়োজন আছে! এতে তো হাতে ধরে দেশে বেকার সংখ্যা বাড়ানো হয়। ৩০ বছর বয়সী একজন তরুণকে চাকরিতে প্রবেশের আগেই অযোগ্যের কাতারে ফেলে দেয়াটা কতটুকু সঠিক, কতটুকু মানবিক, তা গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। তার সামনে লম্বা ভবিষ্যৎ। এ অল্প বয়সেই তাকে বেকারের তালিকায় ফেলে দেয়া কোনোভাবেই সমুচিত নয়।

আমাদের দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ৩০ বছর বয়সের পরও চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ থাকে। অন্য সব প্রতিষ্ঠানে যখন সম্ভব, সরকারি চাকরিতে আরো বেশি সম্ভব হওয়া দরকার। কারণ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ একটি সরকারি চাকরি। যদি লম্বা শিক্ষাজীবন শেষে শুধু বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরিতে আবেদনেরই সুযোগ না থাকে, তাহলে উচ্চশিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ অবশ্যই কমে যাবে।

বিশ্বের অনেক দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। কানাডিয়ান সিভিল সার্ভিসে প্রবেশের বয়স ২০ থেকে ৬০ বছর, শ্রীলংকায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২০ থেকে ৫৯ বছর। বিশ্বের আরো অনেক দেশে এরকম চাকরিতে প্রবেশের পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সংবাদগুলো অবশ্যই অবাক করার মতো, কিন’ প্রকৃতপক্ষে চাকরিতে প্রবেশের এ অবাধ সুযোগই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক।

হ্যাঁ, চাকরিশেষের বয়সটা নির্দিষ্ট হতে পারে। কারণ চাকরির যে সক্ষমতা, তা একটা বয়সে এসে কমে যায় বা ফুরিয়ে যায়। এজন্য যে কেউ যেই বয়সেই চাকরি আরম্ভ করুক, একটা নির্দিষ্ট বয়সে এসে তাকে চাকরি ছেড়ে দেয়া উচিত। ভিন্ন ভিন্ন বয়সে মানুষ চাকরি আরম্ভ করতে পারে, কিন’ চাকরি শেষ করবে সবাই নির্দিষ্ট একটা বয়সে পৌঁছলেই। চাকরি সমাপ্তির এ নির্দিষ্ট বয়সের ঠিক আগের বছরও একজন যোগ্য প্রার্থীর জন্য চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ থাকা উচিত। এতে আমাদের বেকার সমস্যা যেমন কমে যাবে, উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহও অনেক বৃদ্ধি পাবে; কমে যাবে মেধা পাচারও। জানি না, বাংলাদেশে আমরা কখন থেকে কর্মের এই অবাধ অধিকার পাবো!

নূর আহমদ : শিক্ষক
nurahmad786@gmail.com
নূর আহমদ
শিক্ষক, রোকনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বশিকপুর, সদর, লক্ষ্মীপুর।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *