নতুন চাকরি আইন (২য় সংশোধন) ২০২৫ । চাকুরী হইতে অপসারণের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান?
হ্যাঁ, নতুন চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) ২০২৫ আইনে সরকারি চাকরি থেকে অপসারণের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান রাখা হয়েছে। এই সংশোধনে, অসদাচরণের জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারণের পরিবর্তে, পেনশন সহ আর্থিক সুবিধা দিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে যে কাউকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিধান করা হয়েছে-নতুন চাকরি আইন (২য় সংশোধন) ২০২৫
এখন কি আর কালো আইন বলা যাবে না? না। সংশোধিত আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে, “সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ” হিসেবে সরকারের বৈধ আদেশ অমান্য করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিন ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের কথা বলা হয়েছে, যেখানে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান রাখা হয়েছে। পূর্বে, কিছু ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই কেবল কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করার বিধান ছিল, যা এখন পরিবর্তন করে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান করা হয়েছে। এই সংশোধনে কর্মচারী সংগঠনগুলোর আপত্তি ছিল, তবে এখন তারা সংশোধনে সম্মত হয়েছে। বরখাস্ত বা অপসারণের ফলে কোনো কর্মচারী অবসর সুবিধা পেতেন না, কিন্তু বাধ্যতামূলক অবসরে গেলে তিনি পেনশনের সুবিধা পাবেন। এই পরিবর্তন সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটি নতুন ধারা যুক্ত করেছে এবং এটি সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অনানুগত্য শব্দটি বাতিল, অপসারণ এর পরিবর্তে অবসর, নারী সদস্য অনুর্ভূক্তসহ আরও ৭ দিন বিবেচনাপূর্বক বৃদ্ধি ইত্যাদি তথ্যাদি সংযোজন/পরিমার্জন করা হয়েছে।
অবিচার হলে আদালতে যেতে পারবেন না? না। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত যেতে পারবেন। তবে কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ৩৪। ধারা ৩২ এর অধীন প্রদত্ত আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ কোনো কর্মচারী, উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে, এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের নিকট আপিল করিতে পারিবেন এবং আপিল কর্তৃপক্ষ উক্ত আদেশ বহাল রাখিতে, বাতিল বা পরিবর্তন করিতে পারিবে। কর্মকর্তােদর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাইবে না, তবে এইরূপ ক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৩৬ অনুযায়ী উক্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার (review) জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করিতে পারিবেন এবং রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবেন, সেইরূপ আদেশ প্রদান করিবেন। (১২) উপ-ধারা (১০) ও (১১) এর অধীন, যথাক্রমে, আপিল ও রিভিউ এ প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।”।
কর্মস্থলে কর্মবিরতিতে যাওয়া যাবে না? না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা উহার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এই সকল কার্যে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, অথবা (খ) ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ব্যতীত অন্যান্য কর্মচারীদের সহিত সমবেতভাবে নিজ কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন, অথবা যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহা হইলে উহা হইবে সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যেকোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কর্মের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে নিম্নবর্ণিত যেকোনো দণ্ড প্রদান করা যাইবে, যথা:—(ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ; (খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; এবং
(গ) চাকরি হইতে বরখাস্ত।
অনানুগত্য শব্দটি নিয়েই বেশি আপত্তি ছিল এবং বৈধ আদেশ মানতে হবে এমন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে
Caption: সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫
সরকারি চাকরি আইন (২য় সংশোধিত) ২০২৫ । অন্যান্য কর্মচারীদের উসকানি শব্দটি নেই তবে সমবেতভাবে অনুপস্থিত বা বিরত থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে
- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা উহার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এই সকল কার্যে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, অথবা
- ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ব্যতীত অন্যান্য কর্মচারীদের সহিত সমবেতভাবে নিজ কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন, অথবা
- যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহা হইলে উহা হইবে সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যেকোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
- উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কর্মের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে নিম্নবর্ণিত যেকোনো দণ্ড প্রদান করা যাইবে, যথা:— (ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ; (খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; এবং (গ) চাকরি হইতে বরখাস্ত।
ঘুষ নেওয়া কি অসদাচরণ?
অবশ্যই। হ্যাঁ, ঘুষ নেওয়া অবশ্যই অসদাচরণ। এটি শুধু নৈতিকভাবে ভুল নয়, বরং আইনতও একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ঘুষ নেওয়া মানে নিজের দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতিত্ব করা, যা সৎ ও ন্যায়ের পরিপন্থী। এটি বিশ্বস্ততা, নিরপেক্ষতা ও মানবিক মূল্যবোধকে লঙ্ঘন করে। আইনগত বিচারে ঘুষ নেওয়া বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি প্রশাসনিক অসদাচরণ (misconduct) এবং চাকরি থেকেও বরখাস্ত হতে পারেন। ঘুষ সমাজে বৈষম্য তৈরি করে। সেবা প্রাপ্তি জটিল হয়, দরিদ্র মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসনে অবিশ্বাস তৈরি হয় এবং উন্নয়ন ব্যাহত হয়। ✅ ঘুষ নেওয়া = অসদাচরণ + অপরাধ + নৈতিক পতন।
অসদাচরণ বলতে কি কি কাজকে বোঝানো হয়? অসদাচরণ বলতে সাধারণত অনৈতিক, বেআইনি, অথবা নিয়ম-বহির্ভূত আচরণকে বোঝায় যা কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বা অন্য যেকোনো পরিবেশে ঘটতে পারে। এটি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত উভয়ই হতে পারে এবং সাধারণত ব্যক্তির কর্মক্ষমতা, খ্যাতি, বা অন্যদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চুরি: কর্মস্থল থেকে জিনিসপত্র চুরি করা বা অন্য কারো জিনিস আত্মসাৎ করা। | মারামারি বা সহিংসতা: কর্মক্ষেত্রে বা অন্য কোনো স্থানে মারামারি বা শারীরিক সহিংসতায় লিপ্ত হওয়া। | হয়রানি: সহকর্মী বা অন্যদের হয়রানি করা, যা যৌন হয়রানি বা অন্য কোনো রূপে হতে পারে। |
অবজ্ঞা বা অবাধ্যতা: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করা বা তাদের নির্দেশ পালনে অবহেলা করা। | জালিয়াতি: মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা জাল কাগজপত্র তৈরি করা। | মাদক দ্রব্য সেবন: কর্মক্ষেত্রে বা অন্য কোনো স্থানে মাদক দ্রব্য সেবন করা। |
নৈতিক স্খলন: নৈতিকতা বিরোধী বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো কাজ করা। | পেশাগত অসদাচরণ: শিক্ষক বা অন্যান্য পেশাদার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা অনৈতিক আচরণ করা। | গবেষণায় অসদাচরণ: গবেষণার ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়া, তথ্য জাল করা বা চৌর্যবৃত্তি করা। |
উপরিল্লিখিত বিষয়গুলির বাইরেও, যেকোনো ধরনের অনৈতিক বা নিয়ম-বিরোধী কাজ যা প্রতিষ্ঠানের নিয়মাবলী ভঙ্গ করে, তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।