শাস্তি । সাময়িক বরখাস্ত । অপসারণ

নতুন চাকরি আইন ২০২৫ । সরকারি কর্মচারীগণ কি আর সভা সমাবেশ করতে পারবে না?

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়ের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, কথায় কথায় হয়রানি ও সভা সমাবেশের মতো সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচী ডেকেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ-নতুন চাকরি আইন ২০২৫

৭ দিনের নোটিশে চাকরি যাবে? সবাই সরকারি চাকুরীজীবির দোষ ত্রুটি ধরার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে বসে আছে। একজন সরকারি চাকুরীজীবি না হলে তিনি হয়তো লম্বা একটা স্ট্যাটাস দিতেন সরকারি চাকুরীজীবির বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, হয়রানি, অনিয়ম শুধু সরকারি চাকুরীজীবিরা করে বিষয়টি এমন নয়। আমরা রাজনৈতিক, সুশিল, আমলা, কামলা,জনগণ সবাই নিজের স্বার্থের কাছে অনিয়মকে নিয়ম করে ফেলেছি। নতুন সংশোধিত আইন যদি খারাপ বসের বা এলিট শ্রেণীর বা উর্ধতন কর্মকর্তার ঘোড়ার লাগাম হয় তাহলে নিম্নপদস্থ চাকুরীজীবি দাস প্রথায় ফিরে যাবে। উদাহরণ হিসাবে ধরলাম অনিয়ম বা অনৈতিক কাজ না করলে উচ্চপদস্থরা অনুপস্থিত দেখিয়ে ৭ দিনের নোটিশে চাকুরী খেয়ে নিবে।

অবিচার হলে আদালতে যেতে পারবেন না? না। ভুক্তভোগী আদালতের স্বরণাপূর্ণ হতেও পারবেন না। খারাপ অফিসার সিন্ডিকেট করে, রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে, নেতাদের তেল মর্দন করে ঠিকি পার পেয়ে যাবে। বলির পাঠা হবে সাধারণ চাকুরীজীবি, সত্য ন্যায়পরায়ন অফিসার, ভালো কর্মচারী যারা অন্যায় করেন না। তারা ঘন ঘন বদলী ও চাকুরীর হারা হবেন। ভবিষ্যতে একদল রাজনৈতিক লোকজন যে ভাবে হা করে আছে। সচিবালয়ের কর্মচারী সহ মন্ত্রণালয় সবকিছু গ্রাস করে ফেলবে। রাজনৈতিক মব বা জবরদখল কোন আমলা, চাকুরীজীবি, পুলিশ, প্রশাসন কারো ভালো থাকার সুযোগ নেই। পুলিশ খারাপ তারপরও পুলিশ নিয়োগে বিশাল লাইন। প্রশাসন এর আমলা খারাপ সবকাজে মাথা ভরে রাজা বাদশাদের মত লাইফ স্টাইল। বিসিএস দিয়ে কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে জবে ঢুকে। সব সরকারি চাকুরী কঠিন প্রতিযোগিতা। সরকারি চাকুরির হাহাকার অধিকাংশ লোকজন ফেসবুকে নেতিবাচক লেখা লিখছেন। সব দোষ নন্দ ঘোষ সব দোষ সরকারি চাকুরীর এদিকে ব্যবসায়ীরা লাগামহীন খাদ্য দ্রব্য ভেজাল, ফরমালিন,কোরবানির পশুকে একদল জোর করে পানি খাওয়ায়ে বড় দেখাবে।

চাকরিজীবীদের কারণে জনগণ ভূগছে? সাধারণ জনগণ ছোট ছোট কাজে নেতা ধরে ততবীর, সামান্য লাইন মেইনটেইন করে না, ভোট এলে ৫০০/১০০০ টাকায় বিক্রি হয়, রাজনৈতিক পাতি নেতা অল্প শিক্ষিত লোকজন বালিমহল, টেম্পো, বাস স্টপে ডিউটি করে কোটিপতি আর সরকারি চাকুরীরতরা মানবেতর জীবন যাপন । অধিকাংশ সাধারন লোকজন আইন মানে না। অনৈতিক ততবীর, ডাক্তারগন ডিউটি ঠিকমত করেন না, করলেও সেবা ভালো দেন না, নার্সদের ব্যবহার ভালো না আবার সাধারণ মানুষ তাদের বিরক্ত করে, পুলিশ হয়রানি করে প্রয়োজনে তাদের আবার আগে ডাকি , ভুমি অফিসে হয়রানি, আবার আমরা ভেজাল কাগজ করার জন্য যায়, আইনজীবী একেকটা জনগনকে ফকির করার কারিগর, পরিবহন সেক্টর পুরাই সিন্ডিকেট, ঢাকা শহরে চলা যায় খুন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, প্রকৌশল জগতে মাফিয়া ঠিকাদার সাথে কিছু কর্মকর্তা, গ্রাম গন্জে ভিলেজ পলিটিক্স , খাস পুকুর খাওয়ার জন্য সমিতি, সুদের ব্যবসা গলি গলি, চেয়ারম্যান মেম্বার ত্রাণ লুটপাট, ডিসি, ইউনে সর্বেসর্বা দুনিয়ায় কোন পাপ নেই তাদের, আর কত অনিয়ম।

“দূর্নীতি করলে চাকরি চলে যাবে”! এরকম একটা আইন হলে সবার আগে ৯৮℅ কর্মচারী স্বাগত জানাতো!! কারন দূর্নীতির প্রথম শিকার হতে হয় সকলের নিজ অফিসেই!!কিন্তু আইন হলো দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে চাকরি চলে যাবে!! পাবলিক বুঝলো উল্টোটা!

কালো আইনের সব থেকে বড় ভিকটিম হবে নারীরা! দুই নম্বর বড় কর্তাদের মনোরঞ্জনে ব‍্যর্থ‍ হলেই “অনানুগাত‍্যের” ধারা প্রয়োগ করে চাকুরীচ‍্যুত করা হবে!সরকারী চাকুরীজীবিদের নিয়ে যে নতুন আইন হয়েছে, তারা সেই আইনের বিরোধীতা করছে। তবে এর মধ্যে একটি মহল এই আন্দোলনের মধ্যে ফ্যাসিস্ট, আওয়ামীলীগ আর ভারতের দালাল সস লাগিয়ে, পাবলিককে সেই আন্দোলনে হামলা করার হুমকি দিচ্ছে। এতে অনেকে চিলে কান নিয়েছে, এই ধারণায় আন্দোলনের বিরুদ্ধে লেগে গেছে।

Caption: Stand for Black Act 2025

সরকারি চাকরি আইন (সংশোধিত) ২০২৫ । নতুন আইনে কর্মচারীগণ কর্মকর্তাদের দাসে পরিনত হবে?

  1. সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে;
  2. অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন;
  3. অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তাঁর কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন; এবং
  4. যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। উপরোক্ত চারটি বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ পাওয়া তাহলে; ক) অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। খ) অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাঁকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে।

সরকারি চাকরি ঘুষ দিয়ে নেয় কেন?

এই চাকুরীর জন্য মেধা দিয়ে চেস্টা করি না পারলে ঘুস দিয়ে চেস্টা করি। অবশেষে বয়স শেষ হলে বা চাকুরী না পেলে ফেসবুকে লিখি সরকারি চাকুরীজীবি রা খারাপ। আর সাধারণ জনগণ তুলসীপাতা। আইন সংশোধন এরকম হলে ভালো হতো কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম ও হয়রানি প্রমানিত হলে তদন্ত পূবর্ক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা ও অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা অভিযোগ বেশি হলে চাকুরী হতে অপসারণ করা যাবে। এছাড়া বর্তমান নতুন আইন ভালোদের দমন করার আইন, কালো আইন, ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে। নারীদের অনুপস্থিত এর ভয় দেখিয়ে ইত্যাদি। চাকুরীজীবি দের নিজ ধর্মীয় অনুশাসন এবং ভালো রাজনৈতিক লোকজন, কঠোর আইন, সচেতন জনগণ সবাইকে ভালো হতে হবে।

প্রচারণা কি উল্টো হচ্ছে? হ্যাঁ। ফেসবুক মিডিয়া যেভাবে প্রচারিত হচ্ছে যে সচিবালয় বা সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন করণে তারা আইন মানছে না তার মানে তারা দুর্নীতি করতে চায়, আসলে তো তাহাদের মন্তব্য ঠিক নয় এই আইনে দুর্নীতি নিয়ে কোন কথাই নেই মূলত সরকারি কর্মচারীদের মুখ বন্ধ করে উচ্চ পদে থাকা আমলাদের কথায় কর্মচারীদের উঠবস করানোর জন্য এবং এই সুযোগটা নেবেন রাজনীতিবিদরা বিগত দিনের চাইতেও আরো ফ্যাসিবাদী করার সুবিধার্থে ব্যবহারের জন্য ।

অনানুগত্য শব্দটি ভোগাবে? হ্যাঁ। সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে একটি নতুন আইন পাশ করেছে ইউনুস সরকার, তার কিছু নীতিমালার বিরোধীতা করছে সরকারি কর্মচারিরা। কোন কর্মচারি যদি অনানুগত্যের শামিল কিছু করে তবে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে এবং তার জন্য সে চাকুরী হতে বরখাস্ত, অপসারণ এবং বেতন কমে যাবে। এ অংশটুকু পড়ে বলুন তো- ১. এখানে আনুগত্য বলতে কার আনুগত্য ? ২. আনুগত্যতার সীমারেখা কতটুকু ? এখানে আনুগত্য বলতে বুঝানো হচ্ছে সিনিয়রদের আনুগত্য। মানে ক্যাডার কর্মকর্তাদের আনুগত্যতা করতে হবে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারিদের। যদি তাদের কোন কথায় কেউ না বলে, কিংবা কোন কারণে অপরাগতা জানায়, তবে সাথে সাথে তার চাকুরী নট করে দেয়ার ক্ষমতা থাকবে।
ধরুণ কেউ উর্ধ্বতন অফিসারের কোন কথা শুনল না, সেটা তিনি মার্ক করে রাখলেন পরে যে কোন ভুল পাইলে সেটার হিসেব নিয়ে নিতে পারবে এমন।
মানে এই আইনের মাধ্যমে উচ্চ পদে থাকা আমলাদের কর্মচারিদের উপর সুপ্রীম পাওয়ারফুল করে দেয়া হলো। ফলে তারা যখন ইচ্ছা কর্মচারিদের কানে ধরে উটবস করাতে পারবে। তাদের সকল অন্যায় আচরণে তাদের বাধ্যতামূলক ব্যবহার করতে পারবে। কেউ না বললেই সাথে সাথে চাকুরী নট। তবে এই আইন তো শুধু সচিবালয়ের জন্য না। সরকারি সকল চাকুরীজীবির জন্য। ধরেন পুলিশের উর্ধ্বতন পদ থেকে যখন মানুষের উপর গুলি চালাতে বলবে,
তখন জুনিয়র সদস্যরা সেই গুলি চালাতে বাধ্য থাকবে। না করলেই তার চাকুরী খেয়ে দেয়া হবে। এজন্য দেখবেন, এ আন্দোলন কিন্তু সিনিয়র কর্মকর্তারা (১ম থেকে ৯ম গ্রেড) করছে না। করছে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারিরা (১০-২০ গ্রেড) আন্দোলনের নেতৃত্বেই আছে ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

   
   
   

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে alaminmia.tangail@gmail.com ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *