সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

সরকারি বেতন কাঠামো ২০২৫ । অষ্টম পে স্কেলের অসঙ্গতি, নতুন স্কেলে বৈষম্য নিরসনের প্রত্যাশা কি?

২০১৫ সালে ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের (পে স্কেল) পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একাধিক অসঙ্গতি ও বৈষম্য নিয়ে আলোচনা চলছে। একদিকে যেমন এই পে স্কেল কার্যকর হওয়ায় বেতন বেড়েছে, অন্যদিকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল, গ্রেডগত পার্থক্য এবং ক্যাডার-নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। এসব অসঙ্গতি নিরসনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় সরকার এরই মধ্যে নতুন একটি পে কমিশন গঠন করেছে, যা ২০২৬ সালের শুরুতেই কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অষ্টম পে স্কেলের মূল দিক ও অসঙ্গতি

২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হয় ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ থেকে। এই পে স্কেলের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। সপ্তম পে স্কেলের (২০০৯) তুলনায় প্রথম গ্রেডের সর্বোচ্চ মূল বেতন প্রায় ১৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৳৪০,০০০ থেকে ৳৭৮,০০০ নির্ধারণ করা হয়। সর্বনিম্ন ২০তম গ্রেডের বেতনও ২০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৳৪,০০০ থেকে ৳৮,২৫০ করা হয়।

তবে এই পে স্কেলে বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয় ছিল:

১. টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল: ড. ফরাসউদ্দিন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়, যা মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ২. গ্রেডগত বৈষম্য: অষ্টম ও নবম গ্রেডসহ বিভিন্ন গ্রেডে মূল বেতনের পার্থক্য খুবই কম হওয়ায় বৈষম্যের অভিযোগ ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, ৮ম (৳২৩,০০০) এবং ৯ম (৳২২,০০০) গ্রেডের বেতনের পার্থক্য ছিল মাত্র ৳১,০০০। এছাড়া, ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীরা এই পে স্কেলের পূর্ণাঙ্গ সুফল থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ ছিল। ৩. অবসর সুবিধা সংক্রান্ত জটিলতা: বেতন স্কেল কার্যকরের তারিখের (১ জুলাই ২০১৫) আগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নতুন স্কেলে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সুবিধা (পেনশন ও গ্র্যাচুইটি) পাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করার একটি অসঙ্গতিও সেসময় আলোচনায় ছিল। ৪. ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রাখার প্রস্তাব: অর্থ বিভাগ আর্থিক বছর অনুযায়ী হিসাবের সুবিধার্থে ১ জুলাই ২০১৫ থেকে ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত এক বছরের জন্য সবার বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেছিল, যা সংশ্লিষ্ট মহল কর্তৃক ‘বেআইনি’ বলে সমালোচিত হয়।

নতুন পে স্কেলের প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা (৯ম পে স্কেল)

অষ্টম পে স্কেলের পর প্রায় দশ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এ লক্ষ্যে সরকার একটি নতুন পে কমিশন গঠন করেছে, যা আগামী ৬ মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে।

নতুন পে স্কেলে যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে:

  • বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত: কমিশনের সদস্যের মতে, মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে নতুন স্কেলে মূল বেতন দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটি হলে প্রথম গ্রেডে সর্বোচ্চ বেতন ৳১,৫৬,০০০ এবং ২০তম গ্রেডে সর্বনিম্ন বেতন ৳১৬,৫০০ হতে পারে।
  • গ্রেড কমানোর চিন্তাভাবনা: বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে গ্রেডের সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করে বৈষম্য কমানোর পরিকল্পনা করছে কমিশন। বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১, যা নতুন কাঠামোতেও ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
  • ভাতা বৃদ্ধি: চিকিৎসা ভাতা (বর্তমানে ৳১,৫০০) এবং শিক্ষা ভাতাসহ কয়েকটি ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বিশেষ করে অবসরোত্তর সময়ে চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
  • টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প: ২০১৫ সালের মতো এবারও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে পদোন্নতির প্রক্রিয়া আরও সহজ করার প্রস্তাব আসতে পারে।

সার্বিকভাবে, অষ্টম পে স্কেলের পর সৃষ্ট বেতন বৈষম্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন বেতন কাঠামো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নতুন স্কেলে যাতে কোনো নতুন বৈষম্যের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে কমিশনকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ (৮ম পে স্কেল) এর গেজেট অনুযায়ী নির্ধারিত মূল বেতন কাঠামো নিচে দেওয়া হলো। এটি ছিল কার্যকরী বেতন কাঠামো, কোনো প্রস্তাবিত কাঠামো নয়।

তবে, আপনার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে, নতুন নবম জাতীয় বেতন স্কেল (২০২৬ সালের সম্ভাব্য) এর যে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল বেতনের তথ্যও নিচে দেওয়া হলো:

জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ (৮ম পে স্কেল) এর কার্যকর কাঠামো

২০১৫ সালের বেতন স্কেলে (যা ১ জুলাই ২০১৫ থেকে কার্যকর) ২০টি গ্রেড ছিল। মূল বেতন স্কেলটি নিম্নরূপ ছিল:

গ্রেডমূল স্কেল (টাকা)
৭৮,০০০/- (নির্ধারিত)
৬৬,০০০/- থেকে শুরু
৫৬,০০০/- থেকে শুরু
৫০,০০০/- থেকে শুরু
৪৩,০০০/- থেকে শুরু
৩৫,৫০০/- থেকে শুরু
২৯,০০০/- থেকে শুরু
২৩,০০০/- থেকে শুরু
২২,০০০/- থেকে শুরু
১০১৬,০০০/- থেকে শুরু
১১১২,৫০০/- থেকে শুরু
১২১১,৩০০/- থেকে শুরু
১৩১১,০০০/- থেকে শুরু
১৪১০,২০০/- থেকে শুরু
১৫৯,৭০০/- থেকে শুরু
১৬৯,৩০০/- থেকে শুরু
১৭৯,০০০/- থেকে শুরু
১৮৮,৮০০/- থেকে শুরু
১৯৮,৫০০/- থেকে শুরু
২০৮,২৫০/- থেকে শুরু

নতুন (সম্ভাব্য ৯ম) পে স্কেলের প্রস্তাবিত ইঙ্গিত (২০২৬)

২০২৫ সালে গঠিত নতুন পে কমিশন নিয়ে যে আলোচনা ও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে মূল বেতন প্রায় দ্বিগুণ করার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও চূড়ান্ত গেজেট এখনো প্রকাশিত হয়নি, তবে আলোচনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের মূল বেতনের একটি প্রাথমিক প্রস্তাবিত হিসাব নিচে দেওয়া হলো:

গ্রেডপ্রস্তাবিত/সম্ভাব্য মূল বেতন (টাকা)
১ম গ্রেড (সর্বোচ্চ)১,৫৬,০০০/- (সম্ভাব্য)
২০তম গ্রেড (সর্বনিম্ন)১৬,৫০০/- (সম্ভাব্য)

দ্রষ্টব্য: এই সম্ভাব্য কাঠামোটি কমিশনের প্রাথমিক আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি। নতুন বেতন স্কেল গেজেট আকারে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত নয়।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *