বৈষম্য দূরীকরণে কমিশনের জোর ২০২৫ । নতুন পে স্কেলে ‘গ্রেড’ কমছে, বাড়ছে বেতন?
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে নতুন স্কেলের সুপারিশ করার কথা থাকলেও, কমিশন এবার বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যমান গ্রেড কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য দূর করতে ২০টি গ্রেডকে পুনর্বিন্যাস করে সংখ্যা কমানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জাতীয় বেতন কমিশন বর্তমানে সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকরিজীবী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতির কাছ থেকে নতুন বেতন কাঠামো সম্পর্কে উন্মুক্ত মতামত নিচ্ছে। এই মতামতে, বিশেষ করে গ্রেড পুনর্বিন্যাস এবং পছন্দের গ্রেড সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে যে অংশগ্রহণকারীরা ২০ গ্রেডের বেতন কাঠামোর পক্ষে কিনা এবং তাদের পছন্দের গ্রেড সংখ্যা কত। একইসাথে, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত কেমন হওয়া উচিত এবং বিদ্যমান কাঠামোয় কী ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে, সে বিষয়েও মতামত চাওয়া হয়েছে।
পে কমিশনের একজন সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে এনে গ্রেডভিত্তিক বৈষম্য দূর করা কমিশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে পুনর্বিন্যাস করে মোট গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। চার ক্যাটাগরিতে মতামত নেওয়ার পর কমিশন বিভিন্ন কমিটি ও সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে এবং এরপর যাচাই-বাছাই করে গ্রেড পুনর্বিন্যাসের সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০১৫ সালের পে স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে কয়েকটি গ্রেডের মধ্যে বেতনের ব্যবধান অত্যন্ত কম। উদাহরণস্বরূপ, ৮ম (২২ হাজার টাকা) এবং ৯ম গ্রেডে (২৩ হাজার টাকা) বেতনের ব্যবধান মাত্র ১০০০ টাকা। একইভাবে, ২০তম ও ১৯তম গ্রেডের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ২৫০ টাকা, ১৭তম (৯০০০ টাকা) ও ১৮তম গ্রেডের (৮৮০০ টাকা) মধ্যে ২০০ টাকা, এবং ১২তম ও ১৩তম গ্রেডের মধ্যে ৩০০ টাকা। কমিশন মনে করছে, কম ব্যবধান থাকা এই গ্রেডগুলোকে ভেঙে সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব, যা একটি যৌক্তিক ও সুষম বেতন কাঠামো তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমানো এবং গ্রেড পুনর্বিন্যাস করা অত্যন্ত জরুরি। এটি না করা হলে নিচের গ্রেডগুলোতে কর্মরত চাকরিজীবীদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়বে এবং তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে।
এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ অনুসরণ করার আলোচনাও রয়েছে, যেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গ্রুপ-সি, গ্রুপ-বি এবং গ্রুপ-এ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৮টি লেভেলের স্কেল রয়েছে। সেখানে লেভেল-১ সর্বনিম্ন এবং লেভেল-১৮ সর্বোচ্চ ধরা হয়।
নতুন বেতন কমিশন আশা করছে, গ্রেড পুনর্বিন্যাস এবং বেতন কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস পাবে এবং একটি ন্যায্য ও টেকসই বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠা হবে।
জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ (যা বর্তমানে কার্যকর) অনুযায়ী, ২০টি গ্রেডের মধ্যে প্রতিটি গ্রেডের প্রারম্ভিক মূল বেতনের পার্থক্য নির্দিষ্ট নয়। এটি গ্রেডভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং নিম্নোক্ত সারণীতে তা তুলে ধরা হলো।
গ্রেডের ব্যবধান বলতে সাধারণত একটি গ্রেডের প্রারম্ভিক মূল বেতন (Starting Basic Pay) থেকে তার ঠিক উপরের গ্রেডের প্রারম্ভিক মূল বেতনের পার্থক্য বোঝায়। ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের ২০টি গ্রেডের প্রারম্ভিক মূল বেতন এবং তাদের ব্যবধানের তালিকা নিচে দেওয়া হলো: