১লা জুলাই সকল গ্রেডের কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হয়ে গেল। দক্ষতা হোক নিম্নগামী বা উর্ধ্বগামী ইনক্রিমেন্ট পাবেই ২০ তম গ্রেডের কর্মচারী থেকে শুরু করে ১ম গ্রেডের কর্মকর্তা পর্যন্ত। তবে সিলিং এ পৌছে থাকলে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী আর কোন ইনক্রিমেন্ট সুবিধা পান না।
অর্থাৎ তার কোন বেতন বৃদ্ধি হয় না। আজ আমরা দেখবো একজন ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী আসলে কিভাবে নামে মাত্র ইনক্রিমেন্ট পেয়ে দিনের পর দিন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন বৃদ্ধি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আসুন একটি উদাহরণের সাহায্যে ১-১০ তম গ্রেড কর্মকর্তা এবং ১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১১-২০ গ্রেড: জনাব হিকমত আলী, নিরাপত্তা প্রহরী ২০তম গ্রেডে সরকারি চাকরি করেন। তার মূল বেতন দাড়িয়েছে ৮২৫০ টাকায়। তিনি সরকারি বাসায় বসাবাস করেন। এখন ১ম বছর শেষে তার মুল বেতন ১লা জুলাই/২০২০ এ দাড়াবে ৮৬৭০ টাকায়। বছর শেষে তার মূল বেতন বৃদ্ধি ৮৬৭০-৮২৫০ = ৪২০ টাকা (৮২৫০ টাকার ৫% বেতন বৃদ্ধি হলে ৪১২ টাকা বেতন বৃদ্ধি হয়, সেক্ষেত্রে রাউন্ড ৪২০ টাকা)।
০১-১০ গ্রেড: জনাব রহমত আলী, সহকারী প্রকৌশলী ৯ম গ্রেডে চাকরি করেন। তার মূল বেতন ২২০০০ টাকা। তিনি সরকারী বাসায় বসবাস করেন। এখন বছর শেষে তার মূল বেতন ১লা জুলাই/২০২০ এ দাড়িয়েছে ২৩,১০০ টাকা। বছর শেষে তার মূল বেতন বৃদ্ধি ২৩১০০-২২০০০ = ১১০০ টাকা (২৮১০০ টাকার ৫% বেতন বৃদ্ধি হলে ১১০০ টাকা বেতন বৃদ্ধি হয়)। আপাত দৃষ্টিতে কোন বৈষম্যই ধরা পড়ে না। আসুন একটি সমন্বিত হিসাব করি তাহলেই বুঝতে পারবেন বৈষম্যটা কোথায়।
কর্মচারীদের গ্রেড ব্যবধানে বেতন বৃদ্ধি? সরকারি ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারী মূল বেতনের ১০টি গ্রেডের যোগফল দেখে নিই ১২৫০০ +১১৩০০ +১১০০০+ ১০২০০+ ৯৭০০+ ৯৩০০+ ৯০০০+ ৮৮০০+ ৮৫০০ +৮২৫০ = ৯৮,৫৫০ টাকা মাত্র এবং ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারী মূল বেতনের ১০টি গ্রেডের বেতন বৃদ্ধি জনিত যোগফল দেখে নিই ১৩১৩০+ ১১৮৭০+ ১১৫৫০+ ১০৭১০+ ১০১৯০+ ৯৭৭০+ ৯৪৫০+ ৯২৪০+ ৮৯৩০+ ৮৬৭০ = ১,০৩,৫১০ টাকা মাত্র। ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় বেতনের সাথে পার্থক্য ১,০৩,৫১০-৯৮,৫৫০ = ৪,৯৬০ টাকা মাত্র। যা মূল বেতনের ৫.০৩% ।
কর্মকর্তাদের গ্রেড ব্যবধানে বেতন বৃদ্ধি কত? ০১-১০ গ্রেডের ৫ম বছরের সকল কর্মকর্তাদের মূল বেতনের ১০টি গ্রেডের যোগফল দেখে নিই ৭৮০০০+ ৬৬০০০+ ৫৬৬০০+ ৫০০০০+ ৪৩০০০+ ৩৫৫০০+ ২৯০০০+ ২৩০০০+ ২২০০০= ৪,০৩,১০০ টাকা মাত্র এবং ০১-১০ গ্রেডের ৬ষ্ঠ বছরের সকল কর্মকর্তাদের ১০টি গ্রেডের মূল বেতনের যোগফল দেখে নিই ৭৮০০০ + ৬৮৪৮০+ ৫৮৭৬০+ ৫২০০০+ ৪৪৯৪০+ ৩৭২৮০+ ৩০৪৫০+ ২৪১৫০+ ২৩১০০+ ১৬৮০০= ৪,৩৩,৯৬০ টাকা মাত্র। ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় গত বছরের বেতনের সাথে পার্থক্য ৪,৩৩,৯৬০-৪,০৩,১০০ = ৩০৮৬০ টাকা মাত্র। যা মূল বেতনের ৭.৬৫% বেতন বৃদ্ধি । যেখানে ৭.৬৫-৫.০৩ = ২.৬২% বৈষম্য করা হয়েছে।
ইনক্রিমেন্টের ক্ষেত্রেও বৈষম্য রাখা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে মূল বেতনের ৫% হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ধরা হয়েছে।
কিন্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, কর্মচারীদের ৫% বৃদ্ধি পেলেও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ৭.৬৫% বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে।এবার আসুন যদি কর্মচারীদের বেতনের প্রতিটি ধাপের দূরত্ব কর্মকর্তাদের বেতনের ধাপের দূরত্ব সমান হয় তবে কর্মচারীরা কতটুকু লাভবান হতেন? আমি বলবো হ্যাঁ লাভবান হতেন, শুধুমাত্র বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি নয়, পদোন্নতির ক্ষেত্রেও আর্থিক বৈষম্য দূর হত।
শতাংশে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় বৈষম্যটা কোথায়? কর্মকর্তাদের জন্য ১২৫০০ থেকে ৭৮ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১ম -১০ গ্রেড পর্যন্ত প্রতিটি গ্রেডে (এক গ্রেড থেকে অন্য গ্রেডে) ২০.৪ শতাংশ ব্যবধান রাখা হয়েছে।
গ্রেড ব্যবধান বেশি থাকায় বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি
কর্মচারীদের জন্য ৮২৫০ থেকে ১২০০০ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১১তম -২০তম গ্রেডে গড়ে ৩-৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মকর্তাদের ধাপ ব্যবধানের সাথে কর্মচারীদের ব্যবধান তুলনা করলে প্রায় ১৬-১৭% কম ধরে পে স্কেল সাজানো হয়েছে।
কর্মচারীদের গ্রেড ব্যবধান কম থাকায় বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কম
উপরের চিত্রটি দেখুন গ্রেড ব্যবধান ৩ থেকে ৪% হওয়ায় বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি এবং পদোন্নতিতে কর্মচারীগণ খুব কমই বেনিফিট পেয়ে থাকেন। অন্য দিকে যারা বাড়ি ভাড়া পান তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কর্মকর্তা ও কর্মচারী মূল বেতন ৮২৫০: ৭৮০০০ অর্থাৎ ৮২:৭৮০ অর্থাৎ ১: ১০.৫ বা ১০.৫% গুন। এই পে স্কেলটিতে এভাবে ব্যাপক একটি বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
দেখুন যদি কর্মচারীদের গ্রেড ব্যবধান কর্মকর্তাদের গ্রেড ব্যবধান সমান হত অর্থাৎ ২০% হত তাহলে কিভাবে সবাই বার্ষিক বেতন বৃদ্ধিতে লাভবান হতো! আসুন ২০% ব্যবধান রেখে কর্মচারীদের বেতন কাঠামো দাড় করাই।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বেতন কাঠামো বৈষম্য দূর হলে যা হবে? উপরের চিত্রটি দেখুন যেভাবে প্রতিটি গ্রেডে ২০% ব্যবধান রাখা হয়েছে তাই বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি এবং পদোন্নতিতেও কর্মকর্তারা লাভবান হয়ে থাকেন।
৪২৫৬৮, ৩৫৪৭৩, ২৯৫৬১, ২৪৬৩৪, ২০৫২৯, ১৭১০৭, ১৪২৫৬, ১১৮৮০, ৯৯০০, ৮২৫০ = ২,১৪,১৫৮ টাকা মাত্র। এখানে যদি এ কথা বলি যে তাহলে তো বেতন কাঠামো অনেক বড় বাজেটের হয়ে যাবে। এখানে আমার উত্তর থাকবে তাহলে ১১-২০ গ্রেডে যদি ৩-৪% গড় গ্রেড ব্যবধান হয় তবে ১-১০ গ্রেডেও গ্রেড ব্যবধান ৩-৪% হওয়াই কি উচিৎ নয়? আরও একটি পথ আমাদের সামনে খোলা ছিল আমরা গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারতাম। চলুন এক বছর শেষে বৈষম্যহীন কাঠামোতে বেতন বৃদ্ধি দেখে নিই।
৪৪৬৯৬, ৩৭২৪৭, ৩১০৩৯, ২৫৮৬৬, ২১৫৫৫, ১৭৯৬২, ১৪৯৬৯, ১২৪৭৪, ১০৩৯৫, ৮৬৬৩ = ২,২৪,৮৬৬ টাকা মাত্র। এখন যদি আমরা গ্রেডগুলো বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বের করি তাহলে ২,২৪,৮৬৬-২,১৪,১৫৮ = ১০,৭০৮ টাকা। এতে করে বেতন বৃদ্ধির হার দাড়ায় ৫.০৩% এবং প্রতিটি কর্মচারী একটি বৈষম্যহীন বেতন বৃদ্ধি উপভোগ করতে পারতো। ফলে একজন সর্বোচ্চ গ্রেডের কর্মচারীর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ১২৫০০*৫% = ৬২৫ টাকা না হয়ে ৪২,৫৬৮*৫% = ২,১২৮ টাকা হতো!
কর্মকর্তা মানেই যোগদান করেই সর্বনিম্ন ৯ম গ্রেডে ১১০০ টাকা বাড়বে অন্য দিকে কর্মচারীদের সর্বোচ্চ গ্রেড ১১ এ চাকরি করলে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হবে ৬২৫ টাকা!
উপরোক্ত আলোচনাগুলো থেকে একটি বিষয় পরিস্কার যে, ১-১০ নম্বর গ্রেড ব্যবধান এবং ১১-২০ নম্বর গ্রেড গুলোর ব্যবধান ঠিক করা অতীব জরুরী হয়েছে পড়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এই অসম পে স্কেল ২০১৫ বাস্তবায়িত থাকতে পারে না। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জাতীয় পে স্কেলের গ্রেড বৈষম্য দূর হতেই পারে।
Ibas++ ar madhdhome bill korte giye samossay pare gelam,samossa halo,,ID, Password deyer pare login karar age,,akta keyboard capca asto,,ja akhon asse na,,kivabe thik korbo,p
browser change korun
This is great blog