বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

৯ম পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা সহ ৭ দফা দাবি ২০২৫ । সরকারি কর্মচারীদের ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ও স্মারকলিপি কর্মসূচী?

৯ম পে-স্কেল মূলত সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো এবং বিভিন্ন ভাতার মান পুন:নির্ধারণ ও বৈষম্য দূরীকরণের জন্য চাওয়া হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, এবং বিভিন্ন গ্রেডের মধ্যে বেতন বৈষম্যের কারণে সরকারি কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেলের দাবি করে– আগামীকাল ১২মে থেকে ১৫মে পর্যন্ত শুরু হচ্ছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি-৯ম পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা সহ ৭ দফা দাবি ২০২৫

বেতন কাঠামো সংস্কার চায়? হ্যাঁ। বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো ৬ষ্ঠ পে-স্কেল অনুযায়ী। ৯ম পে-স্কেল এর মাধ্যমে এই কাঠামোকে আধুনিকীকরণ এবং কর্মচারীদের বেতন ও ভাতার মান বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে তাল রাখতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করার জন্য নতুন পে-স্কেল প্রয়োজন।বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য ৯ম পে-স্কেলের মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক বেতন কাঠামো তৈরি করা যায়। সরকারি কর্মচারীরা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য এবং ন্যায্য বেতন পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ৯ম পে-স্কেলের দাবি করে। সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং ফোরাম তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের একটি প্রধান লক্ষ্য হলো নতুন পে-স্কেল ও বেতন বৈষম্য নিরসন। নবম পে-স্কেল সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং তাদের বেতন বৈষম্য দূর করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সারা দেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা কত? সারা দেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। এই হিসাবটি “স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস ২০২১” প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে নারী প্রায় ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ জন, যা মোট সরকারি চাকরিজীবীর প্রায় ২৬ শতাংশ। এছাড়াও, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন। সুতরাং, সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেলেও, সাধারণভাবে সারা দেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ বলা যেতে পারে।

সরকারি কর্মচারীদের কোথায় বৈষম্যের শিকার হয়েছে? সরকারি কর্মচারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। এর মধ্যে বেতন ও পদমর্যাদার বৈষম্য অন্যতম। একই ধরনের কাজের জন্য বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন ভিন্ন হয়, যা বৈষম্যের সৃষ্টি করে। এছাড়া, কর্মচারীদের মধ্যে পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা এবং বিশেষাধিকারের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতন গ্রেডের পার্থক্য বিদ্যমান, যা তাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা তাদের বেতন দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খায়। বিভিন্ন অধিদপ্তর ও দপ্তরে উচ্চমান সহকারী, হিসাবরক্ষক, এবং অন্যান্য কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা অন্যান্য পদে উন্নীত করা হয়েছে, যা তাদের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন সুবিধা ও অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান। যেমন, কেউ এমপিও শিক্ষক, কেউ নন-এমপিও শিক্ষক, তাদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায়। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কোরবানি বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়। মহার্ঘ ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়, যা অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

৯ম পে স্কেল ২০২৫ এর সর্বশেষ খবর । বৈষম্য দূরীকরণ ও পে স্কেল ঘোষণার জন্য সরকার এখনও কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন রেশিও কি ঠিক নাই? না। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন রেশিও নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয় এবং এটি নিয়ে অসন্তোষও দেখা যায়। বিশেষ করে নিম্ন বেতন স্কেলের কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধি ও বৈষম্য দূরীকরণের জন্য আন্দোলন করেন। সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন গ্রেডে বেতন স্কেলের মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা যায়। কিছু গ্রেডে বেতন অনেক বেশি, যেখানে কিছু গ্রেডে বেতন খুবই কম। এই বৈষম্য নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সরকার মাঝে মাঝে নতুন পে স্কেল ঘোষণা করে, যেখানে বিভিন্ন গ্রেডের বেতন কাঠামো পরিবর্তন করা দরকার। সরকারি কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধি, বৈষম্য দূরীকরণ, এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য দাবি জানান। বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছেন। এই সকল বিষয় থেকে বোঝা যায় যে, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন রেশিও নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও অসন্তোষ তৈরি হয়, এবং সরকারও এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবী আদায় ঐক্য পরিষদ

সরকারি কর্মচারীদের ৭ দফা দাবী ২০২৫ । ০৭ দফা দাবীনামা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে।

  1. বৈষম্যমুক্ত ১ম পে-স্কেল প্রদানের লক্ষ্যে পে-কমিশন গঠন করতে হবে। পে-স্কেল বস্তুবায়নের পূর্ব পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে ৫০% মহার্ঘ ভাতা (১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীর জন্য) জানুয়ারী ২০২৫ থেকে কার্যকর করতে হবে।
  2. যে সকল কর্মচারিদের মূল বেতন শেষ ধাপে উন্নীত হয়েছে, তাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ- পে-কমিশনে কর্মচারি প্রতিনিধি রাখতে হবে।
  3. সচিবালয়ের ন্যায় সকল সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের কর্মচারিদের পদ ও পদবী পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করে বৈষম্য দূর করতে হবে।
  4. ২০১৫ সালে পে-স্কেলে হরণকৃত ৩ টি টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, দক্ষতাজনিত ২টি ইনক্রিমেন্ট ও বেতন জৈষ্ঠতা পূর্ণবহাল এবং সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্র্যাচুইটির পাশাপাশি পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্র্যাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর ভুলে ১০০% ও পেনশন গ্র্যাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
  5. ব্লক পদে কর্মরত কর্মচারিসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে এবং টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারিদের টেকনিক্যাল পদ মর্যাদা দিতে হবে। আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মচারিদের নিয়োগ প্রথা বাতিল করতে হবে।
  6. বাজারমূল্যের ক্রমাগত উর্দ্ধগতি, জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ। ১১-২০ মেড কর্মচারিদের রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে।
  7. উন্নয়নখাত হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারিদের প্রকল্পের চাকুরীকাল গণনা করে টাইম ভেল এবং সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা যাবে না মর্মে নং-অম্ল/আবি (বাস্ত-৪) /বিবিধ-২০ (উঃল্কে- লা/০৭/৪৭ তারিখ ২৪-০৩-২০০১ ১৭ যোগে অর্থ মন্ত্রণালয় হতে জারীকৃত বৈষম্যমূলক আদেশ বাতিল করতে হবে।

সরকারি কর্মচারীগণের বৃদ্ধি কি যথেষ্ট হচ্ছে না?

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি বর্তমানে যথেষ্ট কিনা, তা বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত। কিছু কর্মচারীর মতে, বেতন বৃদ্ধি দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মেলাতে পারছে না, ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, সরকার বলছে যে তারা নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি করে যাচ্ছে এবং মহার্ঘ ভাতা প্রদানের বিষয়ে চিন্তা করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। সরকারি কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা উচিত। সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। সরকার নিয়মিতভাবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে। সরকার বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদান করে। নতুন পে-স্কেল গঠনের প্রস্তাবনা রয়েছে, যা কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারে। এছাড়াও, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির উপর সরকারের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যেমন- বাজেট এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত বিষয়। বিভিন্ন কারণে সরকারি কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন, এবং সরকারও বেতন বৃদ্ধি ও মহার্ঘ ভাতার মাধ্যমে কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করছে।

   
   
   

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *