ভূমির শ্রেণির সংখ্যা কমালো ভূমি মন্ত্রণালয়: খতিয়ানে যুক্ত হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
দেশের ভূমি জরিপ কার্যক্রমে দীর্ঘদিনের জটিলতা কমাতে এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা সহজ করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় । বিপুল সংখ্যক দুর্বোধ্য ও অবাস্তব ভূমির শ্রেণিকে সহজবোধ্য ১৬টি শ্রেণিতে রূপান্তর করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে । এই পরিবর্তনের পাশাপাশি জমির মালিকদের সুরক্ষার জন্য সংশোধিত খতিয়ান ফরমে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর যুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ।
প্রধান পরিবর্তনসমূহ
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় , বিদ্যমান জরিপ কার্যক্রমে ভূমির শ্রেণির সংখ্যা ছিল প্রায় ১,১২৪টি পর্যন্ত , যা বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন নামে পরিচিত ও সাধারণ জনগণের নিকট দুর্বোধ্য ছিল । এই জটিলতা নিরসনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত National Committee for Monitoring Implementation of Doing Business Reforms (NCMID)-এর নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে ।
একটি কর্মশালার মাধ্যমে বিদ্যমান শ্রেণিগুলো পর্যালোচনা করে সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সহজবোধ্য ১৬টি শ্রেণিতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশোধিত ১৬টি প্রধান ভূমি শ্রেণি:
নতুন ১৬টি প্রধান শ্রেণি নিম্নরূপভাবে বিদ্যমান অসংখ্য শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করবে:
বন (বন, জংগল, শাল বন, সুন্দর বন ইত্যাদি)
পাহাড় (পাহাড়, টিলা, পর্বত)
নদী (নদী, নদ, খাল, সিকস্তি)
জলাভূমি (হাওড়, বাওর, পুকুর, বিল, দিঘী, ডোবা ইত্যাদি)
রাস্তা (সড়ক, রেলপথ, হালট, পথ, বাঁধ, সেতু ইত্যাদি)
টার্মিনাল (বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, ফেরি ঘাট, হেলিপ্যাড ইত্যাদি)
বন্দর (নৌ বন্দর, বিমান বন্দর, স্থল বন্দর, রানওয়ে ইত্যাদি)
আবাদি (ধানী জমি, বাগান, বীজতলা, পতিত, নাল, ভিটি, চালা ইত্যাদি আবাদি ভূমি)
আবাসিক (বাড়ি ভিটা, গুচ্ছ গ্রাম, আশ্রয় কেন্দ্র, কলোনী, বাস্ত ইত্যাদি আবাসস্থল)
অফিস (আদালত, থানা, হাসপাতাল, ব্যাংক, কালেক্টরেট, সেনানিবাস, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি অফিস)
বাণিজ্যিক (বাজার, শপিংমল, হোটেল, পেট্রল পাম্প, হিমাগার, দোকান ইত্যাদি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমি)
শিল্প (কারখানা, ফ্যাক্টরি, ইপিজেড, রাইস মিল, চা বাগান ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠান)
বিনোদন কেন্দ্র (পার্ক, স্টেডিয়াম, সিনেমা হল, কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব ইত্যাদি)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসা, পাঠাগার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি)
স্মৃতিস্তম্ভ (শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, কেল্লা, ম্যুরাল ইত্যাদি)
ধর্মীয় স্থান (মসজিদ, মন্দির, শ্মশান, গির্জা, কবরস্থান, ঈদগাহ, মাজার ইত্যাদি)
খতিয়ান ফরমে সংশোধন
ভূমির মালিকানা সুরক্ষিত করতে এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে খতিয়ান ফরম সংশোধন করা হয়েছে । সংশোধিত ফরমে যেসব বিষয় সংযোজন করা হয়েছে:
মালিকের তথ্য: ব্যক্তি ভূমি মালিকের ক্ষেত্রে মালিকের নাম, পিতা/স্বামীর নাম, মাতার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র / জন্ম নিবন্ধন নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) যুক্ত করতে হবে ।
জরিপের নাম: খতিয়ানে জরিপের নাম (যেমন আর.এস.-১, আর.এস.-২ ইত্যাদি) উল্লেখ করতে হবে ।
সিট নম্বর: মৌজার সিট নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) উল্লেখ করতে হবে ।
জমির শ্রেণি কলাম: জমির শ্রেণির কলামে বিদ্যমান ‘কৃষি’ (৪-ক) ও ‘অকৃষি’ (৪-খ) সাব-কলামের সাথে ‘স্থানীয় নাম’ (৪-গ) শিরোনামে আরও একটি সাব-কলাম যুক্ত করতে হবে ।
বিয়োজন: খতিয়ান ফরম থেকে বর্তমানে ব্যবহৃত না হওয়া রেভিনিউ সার্ভে নম্বর বাদ দিতে হবে ।
পরিপত্র অনুযায়ী, যে সকল মৌজার মাঠ-কাজ (Fieldwork) এখনও শুরু হয়নি, কেবল সেই সকল মৌজার জরিপের ক্ষেত্রে নতুন শ্রেণিবিভাগ প্রযোজ্য হবে । ইতঃপূর্বে সম্পাদিত ও গেজেটে প্রকাশিত সকল শ্রেণিবিভাগ সঠিক গণ্য হবে । এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ।

ভূমির শ্রেণির সংখ্যা কমালো ভূমি মন্ত্রণালয়
জমির শ্রেণী কি তাহলে কমিয়ে আনা হলো?
হ্যাঁ, জমির শ্রেণিকে কমিয়ে আনা হয়েছে । বিদ্যমান বিপুল সংখ্যক জমির শ্রেণিকে সহজবোধ্য, বাস্তবোপযোগী ও স্বল্পসংখ্যক শ্রেণিতে রূপান্তর করা হয়েছে ।
পূর্বের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গিয়েছিল যে, বর্তমানে প্রায় ১,১২৪টি শ্রেণির অস্তিত্ব রয়েছে ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি কর্মশালার পর এই বিদ্যমান শ্রেণিসমূহকে সর্বসাধারণের নিকট গ্রহণযোগ্য, সহজবোধ্য ও যুগোপযোগী করে ১৬টি শ্রেণিতে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।



