নৈমিত্তিক । অর্জিত । মাতৃত্বকালীন

ছুটির নিয়ম কানুন ২০২৫ । সরকারি চাকরিতে কত ধরনের ছুটি নেয়া যায়?

সরকারি কর্মচারীরা বিভিন্ন ধরনের ছুটি ভোগ করার সুযোগ পান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছুটিগুলো হলো অর্জিত ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি, অসাধারণ ছুটি, অধ্যয়ন ছুটি, সংগনিরোধ ছুটি, প্রসূতি ছুটি, চিকিৎসালয় ছুটি, এবং বিশেষ অসুস্থতাজনিত ছুটি রয়েছে-ছুটির নিয়ম কানুন ২০২৫

ছুটি বলতে কি অর্জিত ছুটিকে নির্দেশ করে? হ্যাঁ। নৈমিত্তিক ছুটিকে ছুটিকালীন সময় ধরা হয় না। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ছুটির নিয়মাবলী ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এবং এর অধীনে প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত হয়। ছুটি একজন কর্মচারীর অধিকার হলেও, তা মঞ্জুর করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে। অর্জিত ছুটি (Earned Leave)- এটি সবচেয়ে সাধারণ ছুটি। একজন কর্মচারী প্রতি ১১ দিন কাজ করার বিনিময়ে ১ দিন করে অর্জিত ছুটি জমা করেন। জমা হওয়ার হার প্রতি ১১ দিন কাজে ১ দিন ছুটি। সর্বোচ্চ জমা একজন কর্মচারী তার চাকরির মেয়াদে সর্বোচ্চ ১৮ মাস (৫৪০ দিন) পর্যন্ত অর্জিত ছুটি জমা রাখতে পারেন। এর অতিরিক্ত ছুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। একসঙ্গে ছুটি- সাধারণত একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের অর্জিত ছুটি নেওয়া যায়। চিকিৎসাজনিত কারণে আবেদন করলে চিকিৎসকের সনদপত্র সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন (৬ মাস) পর্যন্ত ছুটি নেওয়া যায়। বেতন এই ছুটি পূর্ণ বেতনে মঞ্জুর করা হয়। ছুটি নগদায়ন অবসরের সময় একজন কর্মচারী তার জমাকৃত অর্জিত ছুটি (সর্বোচ্চ ১৮ মাস বা ৫৪০ দিন পর্যন্ত) নগদায়ন করতে পারেন।

অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি (Half-Pay Leave) কি মেডিকেল ছুটি? হ্যাঁ। যদি কোনো কর্মচারীর অর্জিত ছুটি জমা না থাকে বা অন্য কোনো কারণে এই ছুটির প্রয়োজন হয়, তবে তিনি অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি নিতে পারেন। জমা হওয়ার হার প্রতি ২২ দিন কাজ করার বিনিময়ে ১ দিন ছুটি জমা হয়। বেতন এই ছুটির সময় কর্মচারী তার মূল বেতনের অর্ধেক পান। মেয়াদ চিকিৎসকের সনদপত্র সাপেক্ষে এই ছুটি মঞ্জুর করা হয় এবং এর কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত এটি প্রাপ্য থাকে।

অসাধারণ ছুটি বিনা বেতনে হয়? হ্যাঁ। এই ছুটি সাধারণত বিনা বেতনে মঞ্জুর করা হয়, যখন কর্মচারীর অন্য কোনো ছুটি প্রাপ্য থাকে না। শর্ত এই ছুটি কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন: উচ্চশিক্ষা বা ব্যক্তিগত জরুরি প্রয়োজনে) মঞ্জুর করা হয়। বেতন এই ছুটির সময় কোনো বেতন বা ভাতা দেওয়া হয় না। Extraordinary Leave মানেই বিনা বেতনে ছুটি।

ছুটির আবেদন ও মঞ্জুর প্রক্রিয়া ২০২৫ । কর্মচারীকে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ছুটির জন্য আবেদন করতে হয়। পূর্ব মঞ্জুরী ব্যতীত ছুটি না কাটানোই ভাল এক্ষেত্রে কর্মস্থলে বিশৃঙ্খলার দায় এড়ানো যায় না।

কোন কোন ছুটি হিসাব হতে বিয়োগ হয় না? বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কিছু ছুটি আছে যা চাকরির হিসাব থেকে বিয়োগ হয় না। এর অর্থ হলো, এই ছুটির সময়গুলো কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ বা ইনক্রিমেন্টের জন্য গণনা করা হয়। একজন নারী কর্মচারী যখন মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন, তখন এই পুরো সময়টি তার চাকরির মেয়াদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই ছুটির কারণে তার ইনক্রিমেন্ট বা চাকরির অন্যান্য সুবিধা প্রভাবিত হয় না। যদি কোনো কর্মচারী চিকিৎসকের সুপারিশে পূর্ণ বেতনে ছুটি নেন, তবে এই ছুটির সময়টি চাকরির মেয়াদ থেকে বিয়োগ হয় না। এটি তার চাকরির ধারাবাহিকতা হিসেবেই গণ্য হয়। এছাড়া, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত আরও কিছু ছুটি রয়েছে, যা বিশেষ পরিস্থিতিতে দেওয়া হয় এবং চাকরির ধারাবাহিকতা থেকে বিয়োগ করা হয় না।

Caption: ছুটি বিধিমালা ২০২৫

সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন প্রকার ছুটি ২০২৫ । ১৮ রকমের ছুটির মধ্যে যেসব ছুটি সচারাচর নেয়া হয়

  1. অর্জিত ছুটি (Earned Leave): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর্মচারীর প্রাপ্য ছুটি, যা সাধারণত চাকরি জীবনে অর্জিত হয়। এই ছুটি অসুস্থতা বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  2. নৈমিত্তিক ছুটি (Casual Leave): এটি সাধারণত জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য নেয়া হয়। সরকারি কর্মচারীরা বছরে সর্বোচ্চ ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করতে পারেন এবং একসাথে সর্বোচ্চ ১০ দিন ছুটি নিতে পারেন।
  3. অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave): এটি অর্জিত ছুটি বা অন্য কোনো ছুটি প্রাপ্য না থাকলে, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে মঞ্জুর করা হয়।
  4. অধ্যয়ন ছুটি (Study Leave): সরকারি কর্মচারী যদি উচ্চতর শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ যেতে চান, তবে এই ছুটি মঞ্জুর করা হতে পারে।
  5. সংগনিরোধ ছুটি (Quarantine Leave): সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকলে এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
  6. প্রসূতি ছুটি (Maternity Leave): মহিলা কর্মচারীরা মাতৃত্বকালীন সুবিধার জন্য এই ছুটি পান।
  7. চিকিৎসালয় ছুটি (Medical Leave): অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হলে বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
  8. বিশেষ অসুস্থতাজনিত ছুটি (Special Sick Leave): গুরুতর অসুস্থতার জন্য এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়, যা সাধারণত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশক্রমে হয়ে থাকে।

এছাড়াও, সরকারি কর্মচারীরা শ্রান্তি বিনোদন ছুটি, মৃত্তিকাভঙ্গ ছুটি (Study Leave) ইত্যাদিও ভোগ করতে পারেন, যা তাদের কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাপ্য।

চিকিৎসা জনিত ছুটি কি?

চিকিৎসাজনিত ছুটি (Medical Leave) এটি কোনো একক ছুটি নয়, বরং অর্জিত ছুটি বা অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি নেওয়ার একটি কারণ। মেয়াদ কোনো কর্মচারী অসুস্থ হলে চিকিৎসকের সনদপত্র সাপেক্ষে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত ছুটি পেতে পারেন। এর মধ্যে প্রথম ১৮ মাস পূর্ণ বেতনে (যদি অর্জিত ছুটি জমা থাকে) এবং বাকি ৬ মাস অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি পাবেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি (Maternity Leave) নারী কর্মচারীদের জন্য এই ছুটি প্রযোজ্য। মেয়াদ একজন নারী কর্মচারী প্রসবের আগে বা পরে মোট ছয় মাস (১৮০ দিন) পূর্ণ বেতনে এই ছুটি পান। শর্ত এই ছুটি একজন কর্মচারী তার কর্মজীবনে সর্বোচ্চ দুইবার নিতে পারেন।

যাতায়াত ছুটি (Journey Leave) বা ট্রানজিট ছুটি কি? কর্মচারী বদলি, অবসর, বা অন্য কোনো কারণে কর্মস্থল পরিবর্তন করলে এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়। মেয়াদ যাতায়াত ছুটি সাধারণত স্থান পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের ওপর নির্ভর করে হিসাব করা হয়। এটি সাধারণত ৭ দিন হয়ে থাকে।

ছুটির আবেদন ও মঞ্জুর প্রক্রিয়া: আবেদন: কর্মচারীকে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ছুটির জন্য আবেদন করতে হয়।মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ: বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ছুটি মঞ্জুরের ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে।শর্তাবলী: কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে যেকোনো ছুটির আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।
সংক্ষেপে, ছুটির নিয়মাবলী একটি সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক ব্যবস্থার অংশ, যা কর্মচারীদের কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *