সরকারি কর্মচারীদের জন্য ছুটির বিধিমালা: জেনে নিন কোন ছুটি কত দিনের জন্য প্রাপ্য?
দেশের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯’ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি আদেশ দ্বারা বিভিন্ন প্রকার ছুটির বিধান রাখা হয়েছে। এই ছুটিগুলো কর্মচারীদের কাজের উদ্দীপনা বজায় রাখা এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যকর করা হয়েছে। নিচে প্রধান প্রধান ছুটির প্রকারভেদ ও তাদের মেয়াদ তুলে ধরা হলো:
১. অর্জিত ছুটি (Earned Leave)
- পূর্ণ বেতনে অর্জিত ছুটি (Full Pay Leave):
- অর্জন: একজন কর্মচারী দায়িত্ব পালনে অতিবাহিত প্রতি ১১ কার্যদিবসের জন্য ১ দিন হারে পূর্ণ বেতনে ছুটি অর্জন করেন।
- এককালীন ভোগের সীমা: একবারে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে সর্বোচ্চ ৪ মাস পর্যন্ত পূর্ণ বেতনে ছুটি ভোগ করা যায়। তবে, ডাক্তারি সার্টিফিকেট সাপেক্ষে অথবা ধর্মীয় সফর, অধ্যয়ন বা চিত্তবিনোদনের জন্য এই সীমা ৬ মাস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
- অর্ধ বেতনে অর্জিত ছুটি (Half Pay Leave):
- অর্জন: দায়িত্ব পালনে অতিবাহিত প্রতি ১২ কার্যদিবসের জন্য ১ দিন হারে অর্ধ বেতনে ছুটি অর্জিত হয়।
- জমা হওয়ার সীমা: এই ছুটি জমা হওয়ার কোনো সীমা নেই।
- রূপান্তর: ডাক্তারি সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে, প্রতি দুই দিন অর্ধ বেতনে ছুটির পরিবর্তে এক দিন পূর্ণ বেতনে ছুটিতে রূপান্তরিত করে সর্বাধিক ১২ মাস পর্যন্ত পূর্ণ বেতনে ছুটি ভোগ করা যেতে পারে।
২. প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি (Leave not Due) – (শুধুমাত্র স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য)
- কারণ: ছুটি পাওনা না থাকা সত্ত্বেও বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এটি ভবিষ্যতে অর্জিত ছুটি থেকে সমন্বয় করা হয়।
- মেয়াদ:
- চিকিৎসা সনদ দ্বারা সমর্থিত হলে: সমগ্র চাকুরি জীবনে সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত।
- অন্য কোনো কারণে হলে: সমগ্র চাকুরি জীবনে সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত।
৩. অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave) – (বিনা বেতনে)
- শর্ত: যখন কোনো কর্মচারীর অন্য কোনো ছুটি পাওনা থাকে না অথবা তিনি অন্য ছুটি প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও লিখিতভাবে অসাধারণ ছুটির জন্য আবেদন করেন।
- মেয়াদ:
- সাধারণত একবারে ৩ মাসের অধিক হয় না।
- তবে, বিদেশ প্রশিক্ষণ বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার মতো বিশেষ ক্ষেত্রে এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৪. প্রসূতি ছুটি (Maternity Leave)
- মেয়াদ: সরকারি আদেশ অনুযায়ী বর্তমানে এর মেয়াদ ৬ মাস।
৫. নৈমিত্তিক ছুটি (Casual Leave)
- মেয়াদ: সরকার সময় সময় যে কয়দিন নির্ধারণ করে, সাধারণত প্রতি পঞ্জিকা বছরে ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি প্রাপ্য হন। এটি অন্য ছুটির সাথে যুক্ত করা যায় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ছুটির এই নিয়মাবলী প্রধানত ‘নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯’ এবং সরকারের জারি করা সময়োপযোগী আদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ছুটি মঞ্জুরের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন।

এক বছর ছুটি দরকার হলে কোন ছুটি নিতে হবে?
এক বছর (১২ মাস) ধরে ছুটির প্রয়োজন হলে সরকারি কর্মচারীকে সাধারণত অর্ধ বেতনে অর্জিত ছুটি (Half Pay Leave) অথবা প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি (Leave Not Due) এবং তার সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave) নিতে হতে পারে। পূর্ণ বেতনের অর্জিত ছুটি একবারে ১২ মাস নেওয়া সম্ভব নয়, তাই দীর্ঘমেয়াদী ছুটির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়:
১. 🩺 চিকিৎসার কারণে এক বছর ছুটি
দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার কারণে ছুটির প্রয়োজন হলে আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- অর্ধ বেতনে ছুটিকে পূর্ণ বেতনে রূপান্তর:
- ডাক্তারি সার্টিফিকেট (Medical Certificate) দাখিল সাপেক্ষে, আপনার অর্জিত অর্ধ বেতনের ছুটি-কে সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত পূর্ণ বেতনের ছুটিতে (Full Pay Leave) রূপান্তর করে ভোগ করা যেতে পারে।
- এই রূপান্তরের হার হলো প্রতি ২ দিন অর্ধ বেতনের ছুটির পরিবর্তে ১ দিন পূর্ণ বেতনের ছুটি।
২. 📉 ছুটি পাওনা না থাকলে
যদি আপনার ছুটির হিসাবে অর্জিত ছুটি যথেষ্ট পরিমাণে জমা না থাকে, তাহলে আপনি নিতে পারেন:
- প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি (Leave Not Due):
- স্থায়ী কর্মচারীর ক্ষেত্রে, মেডিকেল সার্টিফিকেট দ্বারা সমর্থিত হলে, সমগ্র চাকরিজীবনে সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত অর্ধ বেতনে এই ছুটি মঞ্জুর করা যেতে পারে। এই ছুটি ভবিষ্যতের অর্জিত ছুটি থেকে কেটে নেওয়া হবে।
৩. 💰 বকেয়া ছুটি শেষ হয়ে গেলে
উপরে উল্লেখিত সব ছুটি শেষ হয়ে গেলে বা কোনো ছুটি পাওনা না থাকলে, দীর্ঘমেয়াদী ছুটির জন্য অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave) মঞ্জুর করা যেতে পারে।
- অসাধারণ ছুটি (বিনা বেতনে):
- এই ছুটি বিনা বেতনে ভোগ করতে হয়।
- সাধারণত এর মেয়াদ একবারে ৩ মাসের বেশি হয় না, তবে চিকিৎসা বা প্রশিক্ষণের মতো বিশেষ কারণে এই মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।
⚠️ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- দীর্ঘমেয়াদী ছুটির জন্য অবশ্যই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ছুটি মঞ্জুর হবে।
মেডিকেল গ্রাউন্ডে ১২ মাস ছুটি নেওয়ার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ বাধ্যতামূলক।



