পেনশন । লাম্পগ্র্যান্ট I পিআরএল

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন দিগন্ত ২০২৫ । অর্জিত ছুটির নগদায়নে ১৮ মাসের সীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব?

সরকারি কর্মচারীদের অর্জিত ছুটির আর্থিক সুবিধা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে অবসর-উত্তর ছুটি (পিআরএল) ও ছুটি নগদায়ন মিলিয়ে একজন কর্মচারী সর্বোচ্চ ৩০ মাসের (১২ মাস পিআরএল + ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন) ছুটি আর্থিক সুবিধা হিসেবে পেয়ে থাকেন। তবে প্রস্তাব উঠেছে, এই ১৮ মাসের নির্দিষ্ট সীমা তুলে দিয়ে কর্মচারীর হাতে থাকা অবশিষ্ট সব অর্জিত ছুটিরই যেন নগদায়ন করা হয়। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে অবসরের পর কর্মচারীরা আর্থিকভাবে আরও বেশি সুরক্ষিত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।– সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন দিগন্ত ২০২৫

এখন কত মাসের ছুটি বিক্রি করা যায়? বর্তমান নিয়মানুসারে, একজন সরকারি কর্মচারী চাকরি জীবনে অর্জিত ছুটির মধ্যে অর্ধেক গড় বেতনের ছুটিগুলো গড় বেতনে রূপান্তর করার পর প্রায়শই দেখেন যে তার মোট অর্জিত ছুটির পরিমাণ ৩০ মাসের বেশি হয়ে গেছে। এই অতিরিক্ত ছুটিগুলো অব্যবহৃত থেকে যায় এবং এর কোনো আর্থিক মূল্য থাকে না। এতে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সেবা করা একজন কর্মচারী তার প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই অনর্থক ক্ষতি রোধ করতে এবং কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ছুটি নগদায়নের ক্ষেত্রে ১৮ মাসের সীমা বাতিল করা হোক। এর বদলে, একজন কর্মচারীর হাতে ১৯, ২০, ২১ বা তারও বেশি মাস ছুটি অবশিষ্ট থাকলে, তিনি যেন সম্পূর্ণ ছুটিরই নগদায়ন সুবিধা পান।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রস্তাবটি বাস্তবসম্মত এবং এর একাধিক ইতিবাচক দিক রয়েছে। প্রথমত, এটি কর্মচারীদের মধ্যে ছুটি ভোগ করার প্রবণতা কমাবে, কারণ তারা জানবেন যে অব্যবহৃত ছুটিরও আর্থিক মূল্য রয়েছে। এতে দাপ্তরিক কাজকর্মে ধারাবাহিকতা বাড়বে। দ্বিতীয়ত, এটি সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার একটি যথাযথ স্বীকৃতি হবে। অবসরের পর এই বর্ধিত আর্থিক সুবিধা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রস্তাবটি যদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিবেচিত হয় এবং নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তবে এটি সরকারি চাকরিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে এবং কর্মচারীদের মধ্যে কর্মোদ্যোগ বাড়াতেও সহায়ক হবে।

লাম্প গ্র্যান্ট (Lump Grant) হলো সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধা, যা সাধারণত অবসরের সময় বা তার কিছু আগে প্রদান করা হয়। এটি মূলত একজন কর্মচারীর অর্জিত ছুটির (Earned Leave) বিপরীতে নগদ অর্থ প্রদান। এটি “ছুটি নগদায়ন” নামেও পরিচিত। একজন সরকারি কর্মচারী যখন অবসর-উত্তর ছুটিতে (Post Retirement Leave – PRL) যান, তখন তার চাকরি জীবনে যদি কিছু অর্জিত ছুটি জমা থাকে, সেই ছুটির বিনিময়ে এককালীন যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, তাকেই লাম্প গ্র্যান্ট বা ছুটি নগদায়ন বলে। বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মচারী তার অর্জিত ছুটির সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ লাম্প গ্র্যান্ট হিসেবে পেতে পারেন। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য কর্মচারীকে অবশ্যই PRL-এ যেতে হবে।

সরকারি ছুটি নগদায়ন প্রজ্ঞাপন ২০২৫ । লাম্পগ্র্যান্ট কখন পাবে না?

লাম্প গ্র্যান্ট কাদের জন্য প্রযোজ্য নয়? যদি কোনো সরকারি কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসর দেওয়া হয়, তবে তিনি এই সুবিধা পাবেন না, কারণ এটি এক ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং এই ধরনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয় না। যদি কোনো কর্মচারী স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন, তবে তিনি সাধারণত লাম্প গ্র্যান্ট পান না। বিশেষ পরিস্থিতি (মৃত কর্মচারীর পরিবার) যদি কোনো সরকারি কর্মচারী কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তবে তার পরিবার বা মনোনীত উত্তরাধিকারী পাওনা সাপেক্ষে ১৮ মাসের ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ (লাম্প গ্র্যান্ট) প্রাপ্য হবেন। সংক্ষেপে: লাম্প গ্র্যান্ট হলো সরকারি কর্মচারীদের জন্য এককালীন একটি আর্থিক অনুদান, যা তাদের অর্জিত ছুটির বিনিময়ে প্রদান করা হয়। এটি অবসর জীবনের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Caption: Lump Grant Bangladesh

ছুটি নগদায় ২০২৫ । হিসাব পদ্ধতি: লাম্প গ্র্যান্টের পরিমাণ হিসাব করা হয় কর্মচারীর সর্বশেষ মূল বেতনের ভিত্তিতে

  1. সূত্র: লাম্প গ্র্যান্ট = (সর্বশেষ মূল বেতন) x (নগদায়নকৃত ছুটির মাস)
  2. উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন কর্মচারীর সর্বশেষ মূল বেতন হয় ৩০,০০০ টাকা এবং তিনি ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন সুবিধা পান, তবে তার লাম্প গ্র্যান্টের পরিমাণ হবে: ৩০,০০০ x ১৮ = ৫,৪০,০০০ টাকা।
  3. প্রদান প্রক্রিয়া: সাধারণত, কর্মচারী PRL-এ যাওয়ার আগে লাম্প গ্র্যান্টের জন্য আবেদন করেন। হিসাবরক্ষণ অফিস কর্মচারীর ছুটি এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই করে লাম্প গ্র্যান্ট মঞ্জুরি আদেশ জারি করে। অবশেষে, PRL শুরু হওয়ার আগে বা পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই অর্থ কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পিআরএল-এ গমনের ২ মাস আগে পোস্ট-ডেটেড চেক প্রদান করা হয়।

লাম্পগ্র্যান্ট কখন পাবে না?

সরকারি কর্মচারীরা সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে লাম্প গ্র্যান্ট বা ছুটি নগদায়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ (Voluntary Resignation) যদি কোনো কর্মচারী নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন, তাহলে তিনি লাম্প গ্র্যান্ট সুবিধা পাবেন না। কারণ, এটি অবসরের সময়ের একটি বিশেষ সুবিধা। চাকরি থেকে বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর (Dismissal or Compulsory Retirement) যদি কোনো কর্মচারী চাকরি জীবনের কোনো অনিয়ম বা অসদাচরণের জন্য শাস্তিস্বরূপ চাকরি থেকে বরখাস্ত হন বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়, তবে তিনি লাম্প গ্র্যান্ট বা কোনো ধরনের অবসরকালীন আর্থিক সুবিধা (পেনশন, আনুতোষিক ইত্যাদি) পাবেন না। এটি সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী একটি গুরুতর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। পুনঃনিয়োগ (Re-employment) যদি কোনো কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর পুনরায় চুক্তিভিত্তিক বা অন্য কোনো পদে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পান, তবে এই নতুন চাকরির মেয়াদকালে তিনি লাম্প গ্র্যান্ট সুবিধা পাবেন না। কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু কর্মচারী যদি কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তার পরিবার লাম্প গ্র্যান্ট পাবে। তবে যদি তিনি কোনো কারণে বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসরে না গিয়ে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তার মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারীরা এই সুবিধা পাবেন। সাধারণভাবে, লাম্প গ্র্যান্টের মূল ভিত্তি হলো একজন কর্মচারীর পিআরএল (Post-Retirement Leave) বা অবসর-উত্তর ছুটিতে যাওয়া। যেসব ক্ষেত্রে এই পিআরএল মঞ্জুর হয় না, সেসব ক্ষেত্রে লাম্প গ্র্যান্টও প্রাপ্য হয় না।

 

ছুটি নগদায়ন প্রজ্ঞাপনছুটি নগদায়ন হিসাবছুটি নগদায়ন নীতিমালা
ছুটি নগদায়ন কিলাম্পগ্র্যান্ট কখন পাবে না১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন
নগদায়ন অর্থ কিলাম্পগ্রান্ট বিল ফরম

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

2 thoughts on “সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন দিগন্ত ২০২৫ । অর্জিত ছুটির নগদায়নে ১৮ মাসের সীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব?

  • Md Abdul Goni Bhuiyan Flight Sergeant Rtd. ( Warrant Officer) Bangladesh Air Force

    আমি বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট ( ওয়ারেন্ট অফিসার) ২০০০ সালে অবসরে এসেছি। প্রায় পঁচিশ বছর অবসরজীবন চলছে আমার মূল মাসিক পেনশন হচ্ছে ৪৪২২ ( চার হাজার চারশত বাইশ টাকা) বর্তমান জামানায় একজন প্রথমশ্রেণীর কর্মকর্তার পক্ষে এই সামান্য টাকার পেনশনার হয়ে সুস্থ ধারার জীবনাচার কি করে চলে? আমি এখন ষাটোর্ধ্ব সিনিয়র সিটিজেন আমার এখন নানান ধরণের শারীরিক মানষিক অসামর্থ্য সৃষ্টি হয়েছে, আমার অনেক ক্ষেত্রে সেবার প্রয়োজন হয়। এসব দেখবাল করতে আর্থিক সচ্ছলতা প্রয়োজন। সবিনয়ে অনুরোধ করছি আমার এই পেনশন বৃদ্ধি করতে বর্তমান আর্থসামাজিক সূচকের বৈষম্য থেকে আমাকে সুস্থ সামাজিক আর্থিক সচ্ছলত জীবনযাপনের মতো একটা পেনশন ধার্য করা হোক, পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার সামরিক বাহিনীর মতো One Rank One pension চালু করে পেনশন বৈষম্য দূর করে আমাদের মতো প্রবীণ পেনশারদের প্রতি রাষ্ট্রের দয়া প্রদর্শন করুন।

  • ধন্যবাদ এ বিষয়ে একটি নিউজ করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *