TIN ধারীদের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক ২০২৫ । টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে?
TIN থাকলেই কি রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে, আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, কাদের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। আপনি যদি সেই বাধ্যতামূলক তালিকার অন্তর্ভুক্ত হন তো আপনাকে ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে-TINধারীদের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক ২০২৫
টিন থাকলেই কি কর দিতে হবে? না। যাদের TIN আছে, তাদের করযোগ্য আয় না থাকলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, আপনার যদি কর দেওয়ার মতো আয় না-ও থাকে, তবুও আপনাকে বছরে একবার “জিরো রিটার্ন” (Zero Return) দিতে হবে। এই রিটার্নে আপনি শুধু দেখাবেন যে আপনার আয় করসীমার নিচে। এটিই হচ্ছে সরকারের কাছে নিয়মমাফিক হিসাব দেওয়ার অংশ। যারা রিটার্ন জমা দেন না, অথচ তাদের TIN আছে—তাদের বিরুদ্ধে: জরিমানা হতে পারে, ভবিষ্যতে জমি কেনা, গাড়ি নিবন্ধন, পাসপোর্ট রিনিউয়াল, কিংবা ব্যাংক ঋণ নিতেও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
যাদের জন্য রিটার্ণ দাখিল বাধ্যতামূলক
আয়কর আইন অনুযায়ী যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে অথবা গত তিন করবর্ষে যারা রিটার্ন দাখিল করেছেন তাদের জন্য রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৭৫(১) ধারা অনুযায়ী নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণে;
- কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পনসর শেয়ারহোল্ডার হতে হলে;
- আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ গ্রহণ অথবা নবায়ন করতে;
- সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে;
- সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার লাইসেন্স নবায়ন করতে;
- সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে;
- চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, একচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ নবায়ন করতে;
- মুসলিম ম্যারেজ অ্যান্ড ডিভোর্স (রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট, ১৯৪৭ এর অধীন নিকাহ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২ এর অধীন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক ও স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ এর অধীন রেজিস্ট্রার হিসেবে লাইসেন্স প্রাপ্তি অথবা নবায়ন করতে;
- ট্রেড বডি বা কোনো বাণিজ্যিক সংগঠনের সদস্যপদ প্রাপ্তি অথবা নবায়ন করতে;
- স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডার বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নবায়নে;
- ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স, বন্ডেড ওয়াটারহাউস লাইসেন্স, কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্স, ফ্রেট ফরওয়ার্ডিং লাইসেন্স ও বায়িং হাউস নিবন্ধন গ্রহণ ও নবায়নে;
- যেকোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে:
- সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস–সংযোগ প্রাপ্তিতে;
- সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ প্রাপ্তিতে:
- লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো, কোস্টার, ডাম্ব-বার্জসহ যেকোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট গ্রহণ ও নবায়নে;
- পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ইট উৎপাদনের অনুমতি গ্রহণ ও নবায়নে;
- সিটি করপোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে:
- কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ গ্রহণে ও নবায়নে;
- আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণে ও নবায়নে;
- আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়;
- ১০ লাখের অধিক টাকার মেয়াদি আমানত খোলায় ও বহাল রাখতে:
- ১০ লাখের অধিক টাকার সঞ্চয়পত্র কেনায়;
- পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে;
- ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানকারী পদমর্যাদায় কর্মরত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে:
- দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সরকারি কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে:
- স্বাভাবিক ব্যক্তি ব্যতীত অন্য করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে;
- কোনো নিবাসী করদাতা কর্তৃক অ্যাডভাইজরি বা কনসালটেন্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ, নিরাপত্তাসেবা সরবরাহ বাবদ কোনো কোম্পানি হতে অর্থ প্রাপ্তিতে;
- বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণ ও নবায়নে;
- দ্বিচক্র বা ত্রিচক্র মোটরযান ব্যতীত অন্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে;
- এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি হতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড় করতে;
- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স নবায়নে;
- কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এবং সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০–এর অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ ও নবায়নে:
- কোনো নিবাসী করদাতা কর্তৃক পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দেশ্যে দরপত্র দলিলাদি দাখিলকালে;
- পণ্য আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিলকালে;
- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক গঠিত অনুরূপ কর্তৃপক্ষ অথবা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার অন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুমোদনের নিমিত্ত ভবন নির্মাণের নকশা দাখিলকালে;
- কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ প্রদানকালে:
- আয়কর আইনে নির্দিষ্ট করা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট পণ্য বা সেবা সরবরাহকালে;
- হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নে:
- সামাজিক অনুষ্ঠান, করপোরেট প্রোগ্রাম, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণসহ সমজাতীয় যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা সমজাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ভাড়া বা অন্য যেকোনো সেবা গ্রহণকালে;
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৭৫(২) ধারা অনুযায়ী নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়।
(১) সরকারের এমপিও এর অধীনে সুবিধাপ্রাপ্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান;
(২) কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়;
(৩) কোন ফান্ড;
(৪) কোন যাদেরকে অফিসিয়াল গেজেটে আদেশ জারীর মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল থেকে বোর্ড অব্যাহতি প্রদান করেছেন;
(৫) ১৮৪ এ ধারা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি করদাতা যার কোন করযোগ্য আয় নাই কিন্তু তাকে জমি বিক্রির জন্য ১২ ডিজিটের টিআইএন (TIN) নিতে হবে।
(৬) ১৮৪ এ ধারা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি করদাতা যার কোন করযোগ্য আয় নাই কিন্তু তাকে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য ১২ ডিজিটের টিআইএন (TIN নিতে হবে।
বি:দ্র: আপনার দৈনন্দিক অনেক কাজেই এ টিন সার্টিফিকেট কাজে লাগতে পারে। আপনি যদি একজন বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই e-tin সার্টিফিকেট করে নিতে হবে। আপনি যদি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে চান তাহলে অবশ্যই এই সার্টিফিকেট অত্যন্ত জরুরী। তাই হুট করে টিআইএন বাতিল করবেন না। প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। আপনার যদি একটি নিবন্ধনকৃত টিন সার্টিফিকেট থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতিবছর ট্যাক্স দিতে বাধ্য। এবং আপনি যদি পরপর তিন বছর কোন ট্যাক্স প্রদান না করে থাকেন তাহলে আপনি অসুবিধায় পড়তে পারেন। আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট করে থাকেন তবে আপনাকে অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।
TIN থাকলেও যাদের রিটার্ণ দাখিল করতে হবে না। TIN থাকলেই রিটার্ণ দাখিল বাধ্যতামূলক কিনা জেনে নেয়া যাক।
TIN Certificate Cancelation Rules । টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার দরখাস্ত কিভাবে লিখবেন?