এমপিও শিক্ষকদের ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন ২০২৫ । প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা?
বেশিরভাগ শিক্ষকই পাবেন সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা, যা প্রত্যাখ্যান করে ২০ শতাংশের দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা)-শিক্ষক-কর্মচারীদের টানা আন্দোলনের মুখে অবশেষে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে, তবে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা মাসিক বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে সরকার ঘোষিত এই নতুন প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁরা পূর্বঘোষিত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দাবি করেছেন, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না।
প্রজ্ঞাপনের বিস্তারিত:
রোববার (১৯ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই বর্ধিত ভাতা আগামী নভেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে। এতদিন শিক্ষকরা মাসিক ১৫০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষক ও কর্মচারীই ৫ শতাংশ হারে গণনার চেয়ে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন।
৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) কাঠামো:
| পদবি | গ্রেড | মূল বেতন (টাকা) | ৫% হারে (টাকা) | প্রাপ্ত বাড়িভাড়া (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকাসহ) |
| অধ্যক্ষ | ৪ | ৫০,০০০ | ২,৫০০ | ২,৫০০ |
| উপাধ্যক্ষ | ৫ | ৪৩,০০০ | ২,১৫০ | ২,১৫০ |
| সহকারী অধ্যাপক (গ্রেড ৬/৮), প্রভাষক (গ্রেড ৯), প্রধান শিক্ষক (গ্রেড ৭), সহকারী প্রধান শিক্ষক (গ্রেড ৮), সিনিয়র শিক্ষক (গ্রেড ৯), সহকারী শিক্ষক (গ্রেড ১০/১১) | ৬-১১ | — | — | ২,০০০ (সর্বনিম্ন) |
| কর্মচারী | ১৬/২০ | — | — | ২,০০০ (সর্বনিম্ন) |
শিক্ষকদের প্রত্যাখ্যান ও আন্দোলনের ঘোষণা:
সরকারের এই প্রজ্ঞাপনের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দিয়েছেন, এই সামান্য বৃদ্ধি তাঁদের ন্যায্য দাবির পরিপন্থী।
আন্দোলনকারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, মাসিক ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার দাবিতে অনড় রয়েছেন। তাঁদের জোটের এক নেতা বলেন, “৫ শতাংশ বাড়িভাড়া শিক্ষক সমাজ মানে না। ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সকল কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”
জানা যায়, প্রজ্ঞাপন জারির পরও আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের অনশন ও অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষকগণ সরকারি সিদ্ধান্ত কেন মেনে নিচ্ছে না?
শিক্ষকরা সরকারি সিদ্ধান্ত (বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ, সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) মেনে নিচ্ছেন না বা প্রত্যাখ্যান করেছেন তার প্রধান কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. দাবির তুলনায় কম: শিক্ষকদের মূল দাবি হলো বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা। সেখানে সরকার ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দিয়েছে, যা শিক্ষকদের দাবির তুলনায় অনেক কম। এই সামান্য বৃদ্ধিকে তারা তাদের অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করছেন।
২. আর্থিক অপ্রতুলতা: শিক্ষকরা মনে করেন, বিশেষ করে শহর বা শহরতলির মতো স্থানে বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং বাড়িভাড়া বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাসিক ২০০০ টাকা বা মূল বেতনের ৫ শতাংশ (যা বেশিরভাগ শিক্ষকের জন্য ২০০০ টাকাই হবে) যথেষ্ট নয়। এটি তাদের প্রকৃত আবাসন ব্যয় মেটানোর জন্য অপর্যাপ্ত।
৩. অন্যান্য দাবি উপেক্ষিত: শিক্ষকদের শুধু বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিই নয়, তাদের আরও দুটি প্রধান দাবি ছিল: * চিকিৎসা ভাতা: মাসিক ১৫০০ টাকা করা। * উৎসব ভাতা: মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ করা। সরকারের নতুন প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র বাড়িভাড়া ভাতার আংশিক বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলা হয়েছে, ফলে শিক্ষকদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দাবিগুলো (যেমন চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা) উপেক্ষিত হয়েছে।
৪. কম বেতনের জন্য অসন্তোষ: এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় কম সুবিধা পান। মূল বেতনের ৫ শতাংশ হার শুধুমাত্র উচ্চ গ্রেডের (অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ) শিক্ষকদের জন্য কিছুটা বাড়তি সুবিধা দিলেও, বেশিরভাগ শিক্ষক (সহকারী অধ্যাপক থেকে সহকারী শিক্ষক পর্যন্ত) ৫ শতাংশ হারে গণনার চেয়ে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা পাবেন। এটি নিয়ে নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে, কারণ তারা তাদের প্রাপ্তিতে বড় কোনো পার্থক্য দেখছেন না।
৫. আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়: শিক্ষকরা মনে করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনের মুখে দেওয়া একটি ‘প্রাথমিক পদক্ষেপ’ মাত্র, চূড়ান্ত সমাধান নয়। তাই তারা তাদের ন্যায্য ও পূর্ণাঙ্গ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বদ্ধপরিকর। মোটকথা, শিক্ষকরা মনে করছেন সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা দূর করতে বা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে যথেষ্ট নয়। তাই তারা পূর্ণাঙ্গ দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।



