বেতন স্কেল – ২০২৫ (প্রস্তাবিত) । সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, সর্বনিম্ন ২৪ হাজার!
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণার উদ্যোগ চলছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে বেতন স্কেল নিয়ে নানা প্রস্তাবনা আসছে। তবে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশের দাবি, শুধু বেতন বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর একটি খসড়া সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে, যেখানে সর্বনিম্ন গ্রেডের মূল বেতন বৃদ্ধি এবং সর্বোচ্চ গ্রেডেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত রয়েছে। একজন সচেতন নাগরিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, “যে প্রস্তাবনাগুলো দেখছি, তাতে বেতন স্কেল মোটামুটি ভালো লেগেছে। তবে বড় কথা হলো, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি করা হোক। আর তার বিনিময়ে, যদি কেউ দুর্নীতিতে জড়ায়, তবে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফা/সির ব্যবস্থা রাখা হোক।”
বেতন বৃদ্ধি: কি দুর্নীতি কমাবে?
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করেন, পর্যাপ্ত বেতন পেলে তা জীবনযাত্রার চাহিদা মেটাতে সহায়ক হয় এবং তত্ত্বগতভাবে দুর্নীতি কমার কথা। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, শুধুমাত্র বেতন বাড়ালেই দুর্নীতি রাতারাতি কমে না। কারণ দুর্নীতি কেবল প্রয়োজনের তাড়নায় হয় না, এর পেছনে অতিরিক্ত অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষাও কাজ করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মতো সংস্থার মতে, দুর্নীতি কমাতে বেতনের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করাটা অপরিহার্য।
জনগণের প্রত্যাশা: আর্থিক নিরাপত্তা ও নৈতিকতা
সাধারণ নাগরিকের এই কঠোর দাবি প্রমাণ করে যে তারা আর দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস চান না। তাদের মত, যদি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক বেতন কাঠামো নিশ্চিত করা যায়, তবে দুর্নীতির কোনো যুক্তি অবশিষ্ট থাকে না। তাই, একদিকে যেমন বেতন বৃদ্ধি করে স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করা হোক, তেমনই অন্যদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা (Zero Tolerance) নীতি বাস্তবায়ন করে উদাহরণ সৃষ্টি করার দাবি উঠছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করার পরও যারা জাতির সম্পদ লুট করবে, তাদের জন্য সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রদর্শন করা উচিত। কেবল তখনই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরভাবে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে সহায়ক হতে পারে।
এই মুহুর্তে, জাতীয় পে কমিশন বিভিন্ন পক্ষের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করছে। দেখার বিষয়, চূড়ান্ত বেতন কাঠামোতে আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি দুর্নীতি দমনে কী ধরনের কঠোর পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন স্কেল (সম্ভাব্য নবম পে স্কেল) নিয়ে সরকারের উদ্যোগের মধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা আসছে। সম্প্রতি ‘পে স্কেল – ২০২৫’ শিরোনামে একটি প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর খসড়া চার্ট আলোচনায় এসেছে, যেখানে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১৬টি গ্রেড নির্ধারণ এবং সর্বোচ্চ বেতন ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর মূল দিকগুলো:
আলোচিত খসড়া চার্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এখানে মূলত ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে ১৬টি গ্রেডে আনা হয়েছে।
| গ্রেড | পূর্বের গ্রেড | প্রস্তাবিত নতুন স্কেল (টাকা) | প্রবৃদ্ধির হার (বার্ষিক) |
| ০১ | ০১ | ১,৪৪,০০০/- (নির্ধারিত) | N/A |
| ০২ | ০২ | ১,২৪,০০০ – ১,৪২,৩২০ | ৬.৫০% |
| ১০ | ১০ | ৪২,০০০ – ১,০২,২৭০ | ৫.৫০% |
| ১৩ | ১৩ | ৩০,০০০ – ৭৮,৬৭০ | ৫.০০% |
| ১৬ | ১৭+২০ | ২৪,০০০ – ৬৬,৮২০ | ৫.০০% |
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন:
- সর্বোচ্চ স্কেল: ১ম গ্রেডে নির্ধারিত বেতন ১,৪৪,০০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
- সর্বনিম্ন স্কেল: ১৬তম গ্রেডে সর্বনিম্ন মূল বেতন ২৪,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬৬,৮২০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বর্তমান স্কেলের তুলনায় বেশ বড় বৃদ্ধি।
- গ্রেড কমানো: বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে এই প্রস্তাবে ১৬টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে (যেমন: গ্রেড ১১-১২ একত্রিত হয়ে ১১ হয়েছে, গ্রেড ১৭-২০ একত্রিত হয়ে ১৬ হয়েছে)।
- বার্ষিক প্রবৃদ্ধি: প্রথম গ্রেডে প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখ না থাকলেও, অন্যান্য গ্রেডগুলোতে ৫.০০% থেকে ৬.৫০% পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া:
এই প্রস্তাবনাটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য কমাতে এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
- স্বচ্ছলতার আশা: কর্মচারীদের বিভিন্ন ফোরাম এই বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলছে, এটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কিছুটা হলেও আর্থিক স্বস্তি দেবে।
- দুর্নীতি দমনের দাবি: তবে সাধারণ জনগণের একটি অংশ এই বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। তাদের মতে, যখন পর্যাপ্ত বেতন নিশ্চিত করা হবে, তখন দুর্নীতির জন্য কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত:
জাতীয় বেতন কমিশন বর্তমানে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞ মহলের কাছ থেকে প্রস্তাবনা সংগ্রহ করছে। এই আলোচনায় আসা প্রস্তাবগুলো কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অংশ হতে পারে। তবে চূড়ান্ত বেতন কাঠামো কী হবে, তা জানতে কমিশন কর্তৃক সুপারিশমালা সরকারের কাছে জমা দেওয়া এবং সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।



