বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

বিশ্বের সরকারি বেতন স্কেল ২০২৫ । পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বেতন কাঠামো কি সবচেয়ে নিম্নমানের?

২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী সরকারি বেতন কাঠামো নির্ধারণের কোনো একক পদ্ধতি নেই, কারণ প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক অবস্থা, জাতীয় নীতি এবং জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী বেতন কাঠামো তৈরি করে থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সরকারি বেতন কাঠামো সাধারণত সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে, যা মূলত মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার কারণে এমন মনে করা হয়-বিশ্বের সরকারি বেতন স্কেল ২০২৫

২০২৫ সালে বাংলাদেশের বেতন কাঠামোতে কি পরিবর্তন আসতে পারে? মূল বেতন বৃদ্ধি ২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি আশা করা যেতে পারে। এটি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। নতুন বেতন কাঠামো প্রবর্তিত হলে, গ্রেড সংখ্যা বা স্কেল বিন্যাসে পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক সময় এটি আগের কাঠামোর চেয়ে উন্নত এবং সুবিন্যস্ত হয়। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। নতুন বেতন কাঠামোতে মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে মূল বেতন এবং বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই, বেতন এমন হওয়া উচিত যাতে সরকারি কর্মচারীরা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো সহজে পূরণ করতে পারেন এবং একটি সম্মানের জীবনযাপন করতে পারেন।

ভাতার হার বৃদ্ধি হবে কি? হ্যাঁ। বাড়ি ভাড়া ভাতা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা সহ বড় শহরগুলোতে বাড়ি ভাড়ার হার অনেক বেশি। বর্তমান হারে (যেমন – মূল বেতনের ৫০%) বাড়ি ভাড়া ভাতা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে। তাই, এই হার বৃদ্ধি এবং শহর ভেদে পার্থক্য আরও বাস্তবসম্মত করার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা ভাতা বর্তমানে চিকিৎসা ভাতা তুলনামূলকভাবে কম। এটি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন যাতে সরকারি কর্মচারীরা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন। যাতায়াত ভাতা পরিবহন খরচ বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে যাতায়াত ভাতাও বৃদ্ধি করা হতে পারে। অন্যান্য ভাতা সন্তানের শিক্ষা, উৎসব ভাতা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভাতাগুলোও মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় করা হতে পারে। অনেক দেশেই এখন কর্মক্ষমতা-ভিত্তিক বেতন কাঠামো (Performance-Based Pay) চালু হচ্ছে। বাংলাদেশেও সরকারি সেবার মান বৃদ্ধি এবং দক্ষতা বাড়াতে এমন কিছু প্রণোদনা বা বোনাসের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

পদোন্নতি ও গ্রেডিং সিস্টেম কি হবে? বেতন কাঠামোয় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সঠিক পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। পদোন্নতির সাথে সাথে বেতনের উল্লম্ফন (jump) যেন ন্যায্য হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। নতুন গ্রেডিং সিস্টেম অনেক সময় নতুন বেতন কাঠামোয় গ্রেড সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হয়। এটি কাজের ধরণ, দায়িত্ব এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আরও যৌক্তিক বিন্যাস তৈরি করতে পারে।

সরকারি বেতন কাঠামোর তুলনামূলক টেবিল ২০২৫ । বিভিন্ন দেশের সরকারি বেতন কাঠামো একটি জটিল বিষয়, কারণ এটি প্রায়ই পুনর্বিবেচিত হয় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ক্যাডারের জন্য ভিন্ন ভাতা কাঠামো থাকে। নিম্নে একটি তুলনামূলক সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হলো। এই তথ্যগুলো ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রযোজ্য এবং স্থানীয় মুদ্রায় দেওয়া হলো। ভাতার হার সাধারণত বেস বেতনের একটি শতকরা হার হিসেবে গণনা করা হয়েছে।

ভাতা প্রদানের পদ্ধতি ও হারের বিস্তারিত

১. বাংলাদেশ

  • বাড়ি ভাড়া ভাতা: বেস বেতনের একটি শতকরা হার হিসেবে দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাজধানীতে ৫০% থেকে ১১০% পর্যন্ত।
  • চিকিৎসা ভাতা: একটি স্থির মাসিক amount, যেমন ৳ ৫০০, ৳ ৭৫০, বা ৳ ১,৫০০।
  • মহানগর ভাতা: বেস বেতনের ৩০০ (বড় শহর) থেকে ৩০০ (রাজধানী)।

২. ভারত

  • House Rent Allowance (HRA): বেসিক বেতন + ডিয়ারনেস অ্যালাউন্সের উপর X1, X2, বা X3 শহর শ্রেণিভেদে ৮%, ১৬%, বা ২৪% হারে দেওয়া হয়।
  • Dearness Allowance (DA): এটি মুদ্রাস্ফীতির সাথে সংযুক্ত এবং ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সংশোধিত হয়। বর্তমানে এটি বেস বেতনের ৫০%।
  • Travel Allowance (TA): কর্মচারীর গ্রেড এবং শহর অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট Amount দেওয়া হয়।

৩. পাকিস্তান

  • House Rent: বেস বেতনের ৩০% থেকে ৪৫% পর্যন্ত।
  • Medical Allowance: একটি স্থির Amount, BPS গ্রেড অনুযায়ী ১,৫০০ রুপি থেকে ৭,৫০০ রুপি পর্যন্ত।
  • Adhoc Relief Allowance: বেতন বৃদ্ধির জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত একটি স্থির Amount যা নিয়মিত ভাতার সাথে যোগ হয়।

৪. নেপাল

  • ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স: এটি মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (বর্তমানে ১৭.৬%) হিসেবে গণনা করা হয় যাতে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব প্রশমিত হয়।
  • চিকিৎসা ভাতা: একটি স্থির amount (রূ ১,০০০ – ২,০০০)।
  • বাড়ি ভাড়া ভাতা: বেস বেতনের ১০% থেকে ৩০% পর্যন্ত।

৫. জাপান

  • Dependent Allowance: কর্মচারীর উপর নির্ভরশীল সদস্য (সন্তান, জীবনসঙ্গী) এর সংখ্যা অনুপাতে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়।
  • Housing Allowance: কর্মচারীর প্রকৃত বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়, তবে একটি মাসিক সর্বোচ্চ সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
  • Commuting Allowance: কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার জন্য প্রকৃত গণপরিবহন খরচ (বা তার সমতুল্য) reimbursed করা হয়।

উপরের তথ্যগুলো একটি সাধারণীকৃত চিত্র প্রদান করে। প্রকৃত বেতন ও ভাতা একজন কর্মচারীর নির্দিষ্ট পদ, গ্রেড, কর্মস্থলের অবস্থান এবং পরিষেবার দৈর্ঘ্য এর উপর নির্ভর করে এবং প্রায়ই সরকারি notification দ্বারা পরিবর্তিত হয়। সর্বশেষ এবং সবচেয়ে সঠিক তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি কর্মকমিশনের (Public Service Commission) অফিসিয়াল website পরীক্ষা করা উচিত।

প্রস্তাবিত্য বেতন স্কেল (উদাহরণ) ২০২৫ ।  ধরা যাক, নতুন বেতন স্কেল গ্রেড-২০ থেকে শুরু হয়ে গ্রেড-১ পর্যন্ত।

  • গ্রেড-২০ (সর্বনিম্ন): ২০১৫ সালে সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৳৮,২৫০। ২০২৫ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৳২৫,০০০ – ৳৩০,০০০ বা তার বেশি হওয়া যুক্তিসঙ্গত হতে পারে, যা জীবনযাত্রার ন্যূনতম ব্যয় মেটাতে সক্ষম।
  • গ্রেড-১ (সর্বোচ্চ): ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ বেতন ছিল ৳৭৮,০০০। নতুন কাঠামোতে এটি ৳১,০০,০০০ – ৳১,২০,০০০ বা তার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
  • বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি: বার্ষিক ৫% বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে, অথবা এটি মুদ্রাস্ফীতি ও জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে।
  • ভাতার হার (সম্ভাব্য পরিবর্তন) যেমন বাড়ি ভাড়া: মূল বেতনের ৬০% – ৭০% (মহানগর) এবং ৫০% – ৬০% (অন্যান্য শহর)।
  • চিকিৎসা ভাতা: ৳২,০০০ – ৳৩,০০০ বা তার বেশি করা যেতে পারে।
  • যাতায়াত ভাতা: ৳১,৫০০ – ৳২,০০০ বা তার বেশি করা যেতে পারে।
  • ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বেতন কাঠামোয় অবশ্যই ২০১৫ সালের তুলনায় একটি বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে বেতন ও ভাতার হার বৃদ্ধি করা হবে, এটাই প্রত্যাশা। তবে, চূড়ান্ত কাঠামোটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত বেতন ও ভাতাদি কমিটি বা কমিশনের সুপারিশ এবং সরকারের সিদ্ধান্তের উপর।

কোন দেশে “সবচেয়ে ভালো” বেতন-ভাতাদি?

এটি নির্দিষ্টভাবে বলা বেশ কঠিন, কারণ এটি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। যেমন: জীবনযাত্রার ব্যয় যে দেশে বেতন বেশি, কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় (যেমন – বাসা ভাড়া, খাবার, পরিবহন) ও বেশি, সেখানে প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কম হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি বেতনের প্রকৃত মূল্য কমিয়ে দেয়। করের হার বিভিন্ন দেশে আয়করের হার ভিন্ন। উচ্চ করের হার হাতে পাওয়া বেতন কমিয়ে দেয়। সুবিধাদি কিছু দেশে সরাসরি বেতন বেশি না হলেও, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পেনশন বা অন্যান্য সামাজিক সুবিধা অনেক বেশি থাকতে পারে, যা আর্থিক সাশ্রয় করে। বেতন বৃদ্ধির হার কিছু দেশে বেতন বৃদ্ধির হার (যেমন – বাৎসরিক ৫%) তুলনামূলকভাবে বেশি। দেশের অর্থনীতি: শক্তিশালী অর্থনীতি সম্পন্ন দেশে বেতন-ভাতাদি সাধারণত উন্নত হয়। তবে, প্রদত্ত তথ্য এবং সাধারণ ধারণার ভিত্তিতে একটি আনুমানিক ধারণা দেওয়া যেতে পারে:

তুলনামূলক বিশ্লেষণ (আনুমানিক)

দেশবেতন স্কেল (সাধারণ)জীবনযাত্রার ব্যয় (তুলনামূলক)মন্তব্য
জাপানউচ্চখুব বেশিবেতন বেশি হলেও জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেশি। তবে, উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং কাজের পরিবেশ এটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
চীনমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যম থেকে বেশিদ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং শহরাঞ্চলে বেতন ভালো, তবে অঞ্চলভেদে পার্থক্য অনেক।
ভারতমধ্যমমধ্যমবেতনের পরিমাণ অনেক হলেও, জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা ভালো হতে পারে, বিশেষ করে ছোট শহরগুলোতে।
বাংলাদেশনিম্ন থেকে মধ্যমমধ্যমবেতন তুলনামূলকভাবে কম হলেও, জীবনযাত্রার ব্যয় ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে। বাড়ি ভাড়া ভাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পাকিস্তাননিম্ন থেকে মধ্যমমধ্যমবেতন ও জীবনযাত্রার ব্যয় সাধারণত বাংলাদেশের কাছাকাছি বা কিছুটা কম হতে পারে।
শ্রীলংকামধ্যমমধ্যমঅর্থনীতির উপর নির্ভরশীল, তবে সরকারি বেতন-ভাতাদি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
নেপালনিম্নমধ্যমসাধারণত এই দেশগুলোতে সরকারি বেতন-ভাতাদি তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

সেরা দেশ: উপরের তালিকা এবং সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে, জাপান এবং চীন তাদের উচ্চতর বেতন কাঠামোর জন্য এগিয়ে থাকতে পারে।

  • জাপান: উন্নত জীবনযাত্রা, প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী অর্থনীতি এটিকে এগিয়ে রাখে, যদিও জীবনযাত্রার ব্যয় এখানে অনেক বেশি।
  • চীন: দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শহরাঞ্চলে উচ্চ বেতনের কারণে এটি একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে।

তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে “ভালো” বেতন-ভাতাদি সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তির নিজস্ব চাহিদা, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে। একজন ব্যক্তি হয়তো কম বেতন নিয়ে শান্ত ও স্থিতিশীল জীবন পছন্দ করতে পারেন, আবার অন্যজন উচ্চ বেতন এবং চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ পছন্দ করতে পারেন।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *