নতুন পে-স্কেল নিয়ে তোড়জোড় ২০২৫ । সচিবদের সাথে কমিশনের বৈঠক, কর্মচারীদের আল্টিমেটাম?
নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে জাতীয় পে কমিশনের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও এই আলোচনাকে ফলপ্রসূ বলে আখ্যায়িত করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান, কিন্তু সব সচিবের অনুপস্থিতি আবারও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
ফলপ্রসূ আলোচনা, তবে আবারও বৈঠক
আজ সোমবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে জাতীয় পে কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান সাংবাদিকদের জানান, আলোচনাটি ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে, যেহেতু সব সচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, তাই পরবর্তীতে তাদের নিয়ে পুনরায় আলোচনা করা হবে।
চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, আলোচনা শেষ হলেই দ্রুত সময়ের মধ্যেই কমিশন তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে সক্ষম হবে।
কর্মচারীদের আল্টিমেটাম ও বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
এদিকে, নতুন বেতন স্কেল দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মচারী নেতাদের পক্ষ থেকে পে কমিশনের ওপর চাপ বাড়ছে। কর্মচারী নেতারা কমিশনকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির বলেন, “৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সুপারিশ জমা দেওয়া সম্ভব। যদি দাবি পূরণ না হয়, তবে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি কর্মচারীরা আগামী ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মতামত সংগ্রহ ও ভুয়া সুপারিশপত্র নিয়ে বিভ্রান্তি
উল্লেখ্য, পে কমিশন এর আগে ১ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণ নাগরিক, সরকারি কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে অনলাইনে প্রশ্নমালার মাধ্যমে তাদের মতামত সংগ্রহ করেছে, যা কমিশনের সুপারিশ প্রণয়নে সহায়ক হবে।
এ মাসের শুরুর দিকে, পে-স্কেল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ১৫ পৃষ্ঠার ভুয়া সুপারিশপত্রকে কমিশন ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ বলে আখ্যায়িত করে এবং দ্রুত রিপোর্ট তৈরির আশ্বাস দেয়।
সবমিলিয়ে, কমিশনের পক্ষ থেকে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার আশ্বাস এবং কর্মচারীদের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি — এই দুইয়ের মাঝে নতুন বেতন কাঠামোর চূড়ান্ত সুপারিশ দ্রুত সরকারের কাছে পৌঁছানোর প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
২৪ নভেম্বরের (সোমবার) বৈঠকের পর পে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়া নিয়ে সর্বশেষ তথ্যগুলো কি?
📅 সুপারিশ জমা দেওয়ার সম্ভাব্য সময়
দ্রুত রিপোর্ট জমা: কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান জানিয়েছেন, সচিবদের সাথে পুনরায় আলোচনা শেষ হলে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিতে পারবেন বলে আশা করছেন।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ: বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, পে কমিশন চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিতে পারে।
৫০% কাজ সমাপ্ত: কমিশন ইতিমধ্যে সুপারিশ তৈরির প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে।
⚠️ কর্মচারীদের আল্টিমেটাম এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
৩০ নভেম্বরের আল্টিমেটাম: কর্মচারী নেতারা কমিশনকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা (আল্টিমেটাম) দিয়েছেন।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশ জমা না হলে ৫ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর ও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছে কর্মচারী সংগঠনগুলো।
❌ ভুয়া সুপারিশ নিয়ে সতর্কতা
ভুয়া নথি: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন পে-স্কেল সংক্রান্ত ১৫ পৃষ্ঠার একটি ভুয়া সুপারিশপত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। কমিশন এটিকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যায়িত করেছে।
কমিশনের বক্তব্য: কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেতন স্কেলের খসড়া সুপারিশ এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবং ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যে বিভিন্ন গ্রেডের বেতন বৃদ্ধির যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা কমিশনের অনুমোদিত কোনো নথি নয়।
💡 অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাস্তবায়ন: অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকার এলে এটি বাস্তবায়ন করবে।
কমিশনের মেয়াদ: গত জুলাইয়ের শেষ দিকে গঠিত এই ২৩ সদস্যের কমিশনের প্রজ্ঞাপনে প্রথম সভার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল। সেই হিসাবে, কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।
অর্থাৎ, একদিকে কর্মচারীদের চাপ আছে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার, অন্যদিকে কমিশন সচিবদের সাথে পুনরায় বৈঠক সেরে ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারিতে তা জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
পে কমিশনের পরবর্তী বৈঠক এবং সুপারিশ জমা দেওয়ার তারিখের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলে আমি আপনাকে জানিয়ে দেব।



