নবম পে-স্কেল সুপারিশ ২০২৫ । সর্বোচ্চ বেতন দেড় লাখ, সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা! গ্রেড কমছে, বাড়ছে সুযোগ-সুবিধা?
ঢাকা, ২০ অক্টোবর, ২০২৫ (যুগান্তর সূত্র): সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নবম পে-স্কেলের প্রস্তাবিত কাঠামোর একটি চিত্র সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরের সূত্রে জানা গেছে। পে-কমিশন/২০২৫-এর সুপারিশে বেতন গ্রেডের সংখ্যা কমানো এবং বেতন কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সর্বোচ্চ মূল বেতন ১,৫০,০০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল বেতন ২৫,০০০ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বেতন গ্রেড ও কাঠামো (মূল বেতন):
জানা যায়, বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে কমিয়ে প্রস্তাবিত কাঠামোয় গ্রেডের সংখ্যা ১৪টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। নতুন গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতনের প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
| গ্রেড (নতুন) | গ্রেড (পূর্বের) | প্রস্তাবিত মূল বেতন (টাকা) |
| ১ম | ১ম | ১,৫০,০০০ ৳ |
| ২য় | ২য় | ১,৩৫,০০০ ৳ |
| ৩য় | ৩য়+৪র্থ | ১,১৫,০০০ ৳ |
| ৪র্থ | ৫ম+৬ষ্ঠ | ১,০৮,০০০ ৳ |
| ৫ম | ৭ম | ৯২,০০০ ৳ |
| ৬ষ্ঠ | ৮ম | ৮৪,০০০ ৳ |
| ৭ম | ৯ম | ৭৮,০০০ ৳ |
| ৮ম | ১০ম | ৬২,০০০ ৳ |
| ৯ম | ১১তম | ৫১,০০০ ৳ |
| ১০ম | ১২তম | ৪৩,০০০ ৳ |
| ১১তম | ১৩তম | ৩৯,০০০ ৳ |
| ১২তম | ১৪তম+১৫তম | ৩৫,০০০ ৳ |
| ১৩তম | ১৬তম+১৭তম | ৩১,০০০ ৳ |
| ১৪তম | ১৮তম+১৯তম+২০তম | ২৫,০০০ ৳ |
দ্রষ্টব্য: এই কাঠামোতে ১৯তম ও ২০তম গ্রেডের সর্বনিম্ন বেতন ২৫,০০০ টাকা ধরে মোট ১৪টি গ্রেড গণনা করা হয়েছে।
অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা:
মূল বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য ভাতা ও সুবিধার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
- ইনক্রিমেন্ট: বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫% বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
- বাড়িভাড়া: মূল বেতনের ৪৫% হারে বাড়িভাড়া প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
- চিকিৎসা ভাতা: মাসিক চিকিৎসা ভাতা ২,০০০ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
- শিক্ষাভাতা: দুই সন্তানের জন্য মাসিক ১,৫০০ টাকা এবং এক সন্তানের জন্য মাসিক ৭৫০ টাকা শিক্ষাভাতা প্রদানের প্রস্তাব রয়েছে।
- টিফিন ভাতা: মাসিক টিফিন ভাতা ৫০০ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
- যাতায়াত ভাতা: মাসিক যাতায়াত ভাতা ৫০০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট:
দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পে-কমিশন/২০২৫-এর এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে সরকারি কর্মীদের আর্থিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে, সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ২৫,০০০ টাকা করার প্রস্তাবটি নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। অন্যদিকে, গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে আনা হলে বেতন বৈষম্য কিছুটা হলেও কমতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই নতুন পে-স্কেল গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হতে পারে এবং এটি ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সুপারিশে কিছু সুবিধা বাতিল করে ‘সাকুল্য বেতন’ বা ‘পারিশ্রমিক’ নামে বিকল্প বেতন কাঠামো চালুর বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। পে-কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে বলে জানা গেছে।
বৈষম্য কি আরও বাড়ছে নাকি কমছে?
বেতন গ্রেডগুলোর মধ্যে টাকার অঙ্কে বৈষম্য আরও বাড়ছে, কিন্তু অনুপাতের (Ratio) দিক থেকে বৈষম্য কমার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি গ্রেড সংখ্যা কমানো হয়।
এখানে আপনার প্রদত্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
১. টাকার অঙ্কে বৈষম্যের বিশ্লেষণ
| বিষয় | বিদ্যমান পে-স্কেল/২০১৫ (সর্বোচ্চ:সর্বনিম্ন) | প্রস্তাবিত ৯ম পে-স্কেল/২০২৫ (সর্বোচ্চ:সর্বনিম্ন) | পরিবর্তন |
| সর্বোচ্চ মূল বেতন | ৭৮,০০০ ৳ | ১,৫০,০০০ ৳ | +৭২,০০০ ৳ বৃদ্ধি |
| সর্বনিম্ন মূল বেতন | ৮,২৫০ ৳ | ২৫,০০০ ৳ | +১৬,৭৫০ ৳ বৃদ্ধি |
| বেতনের ব্যবধান | ৬৯,৭৫০ ৳ (৭৮,০০০ – ৮,২৫০) | ১,২৫,০০০ ৳ (১,৫০,০০০ – ২৫,০০০) | +৫৫,২৫০ ৳ বৃদ্ধি |
সিদ্ধান্ত:
টাকার অঙ্কে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের ব্যবধান (Difference) আপনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৫৫,২৫০ টাকা বেড়েছে। এর মানে হলো, উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তা এবং নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর মধ্যে মাসিক বেতনের পার্থক্য আরও বেশি হবে।
২. বেতন অনুপাতের (Ratio) মাধ্যমে বৈষম্যের বিশ্লেষণ
বেতন বৈষম্য পরিমাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত (Ratio)।
| পে-স্কেল | অনুপাত (সর্বোচ্চ:সর্বনিম্ন) | গাণিতিক হিসাব |
| পে-স্কেল/২০১৫ | প্রায় ১:৯.৪৫ | ৭৮,০০০ ৳ ৮,২৫০ ৳ ৯.৪৫ |
| প্রস্তাবিত ৯ম পে-স্কেল | ১:৬.০ | ১,৫০,০০০ ৳ ২৫,০০০ ৳ ৬.০ |
সিদ্ধান্ত:
পে-স্কেল/২০১৫ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ছিল প্রায় ১:৯.৪৫। আপনার দেওয়া প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী এই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ১:৬.০।
- যেহেতু অনুপাতের মান ৯.৪৫ থেকে কমে ৬.০ হয়েছে, সেহেতু শতাংশের হিসাবে বৈষম্য কমছে। অনুপাত যত কম হবে, বৈষম্য তত কম বলে বিবেচিত হবে।
সারসংক্ষেপ
- টাকার অঙ্কে (Difference): বৈষম্য বাড়ছে (কারণ বেতনের ব্যবধান ৫৫,২৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে)।
- অনুপাতের দিক থেকে (Ratio): বৈষম্য কমছে (কারণ অনুপাত ১:৯.৪৫ থেকে কমে ১:৬.০ হয়েছে)।
সাধারণত পে-স্কেলের বৈষম্য পরিমাপ করা হয় এই অনুপাতের ভিত্তিতেই। তাই নীতিগতভাবে, নবম পে-স্কেলের প্রস্তাবটি অনুপাতের দিক থেকে বৈষম্য কমানোর ইঙ্গিত দেয়, যা একটি ইতিবাচক দিক। তবে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ২৫,০০০ টাকার মূল বেতন এবং আনুষঙ্গিক ভাতা পর্যাপ্ত কিনা, তা একটি আলোচনার বিষয় হতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আপনার দেওয়া তথ্যমতে গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমে ১৪ হয়েছে। গ্রেড সংখ্যা কমালে গ্রেডগুলোর মধ্যে উল্লম্ব (Vertical) বৈষম্যও কিছুটা কমে আসার সুযোগ থাকে।



