প্রশাসন I একাউন্টস I অডিট আপত্তি

সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন ২০২৫ । সকল ক্রয়কাজ সম্পন্ন করতে হবে ই-জিপি’র মাধ্যমে?

সরকারি কেনাকাটা এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এখন থেকে সরকারের সকল প্রকার ক্রয়কাজ ‘ইলেকট্রনিক পরিচালন পদ্ধতি’ বা ই-জিপি (e-GP) পোর্টালের মাধ্যমে সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সরকারি ক্রয়ে ইলেকট্রনিক পরিচালন পদ্ধতির ব্যবহার’ সংক্রান্ত ১৫০ক বিধিতে এই নির্দেশনা স্পষ্ট করা হয়েছে।

নির্দেশনার মূল বিষয়সমূহ:

নথিতে উল্লেখিত বিধামালা অনুযায়ী সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা বাধ্যতামূলক:

  • ই-জিপি’র বাধ্যতামূলক ব্যবহার: আইনের উদ্দেশ্য পূরণে, ই-জিপি পোর্টালে প্রক্রিয়া করার যোগ্য সকল সরকারি ক্রয় কাজ সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। সনাতন বা ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিকে এখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

  • অফলাইন টেন্ডারে কড়াকড়ি: কোনো ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান যদি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে অফলাইনে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি’ (বিপিপিএ)-এর পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় প্রধানের মাধ্যমে যৌক্তিক কারণ দর্শিয়ে এই অনুমোদন নিতে হবে।

  • চুক্তি ও পেমেন্ট ব্যবস্থা ডিজিটালকরণ: শুধুমাত্র টেন্ডার জমাদান নয়, টেন্ডার পরবর্তী কার্যক্রমও ডিজিটাল করা হয়েছে।

    • চুক্তি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য ই-জিপি পোর্টালের ই-সিএমএস (e-CMS) বা ইলেকট্রনিক কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম মডিউল ব্যবহার করতে হবে।

    • ঠিকাদারদের বিল বা অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা আইবাস++ (iBAS++) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাৎ, ম্যানুয়াল চেক বা নগদে লেনদেনের সুযোগ থাকছে না।

  • আইনের প্রাধান্য: ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি প্রচলিত বিধিমালার সাথে ইলেকট্রনিক পদ্ধতির কোনো বিধানের বিরোধ (Conflict) দেখা দেয়, তবে ইলেকট্রনিক পরিচালন পদ্ধতির বিধানই প্রাধান্য পাবে।

বিশ্লেষণ: সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা কমবে এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। টেন্ডার জমাদান থেকে শুরু করে বিল পরিশোধ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি ‘আইবাস++’ এবং ‘ই-সিএমএস’-এর সাথে সংযুক্ত হওয়ায় অনিয়মের সুযোগ অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০২৫ [পিপিআর-২০২৫]

নগদ কেনা কাটা কত লক্ষ টাকা পর্যন্ত করা যাবে?

সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘নগদ কেনাকাটা’ বা সরাসরি নগদ ক্রয় (Direct Cash Purchase) পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR-2008) এবং সাম্প্রতিক আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ (Delegation of Financial Power) আদেশ অনুযায়ী এই সীমা নির্ধারণ করা হয়।

সাধারণত সরকারি দপ্তরে নগদ কেনাকাটার সীমা নিম্নরূপ:

১. সরাসরি নগদ ক্রয় (Direct Cash Purchase) – কোটেশন ছাড়া

কোনো প্রকার দরপত্র বা কোটেশন (Quotation) ছাড়া সরাসরি দোকান থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে:

  • প্রতি ক্রয়ে সর্বোচ্চ সীমা: ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা।

  • বার্ষিক সর্বোচ্চ সীমা: সাধারণত ১০ লক্ষ টাকা (এক বছরে সব মিলিয়ে)।

    • দ্রষ্টব্য: এটি পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৮১ অনুযায়ী ‘Low value goods’ বা জরুরি ছোটখাটো মেরামতের জন্য প্রযোজ্য।

২. কোটেশন পদ্ধতির মাধ্যমে ক্রয় (Request for Quotation – RFQ)

যদি ক্রয়ের পরিমাণ ২৫,০০০ টাকার বেশি হয়, তবে ‘সরাসরি নগদ’ পদ্ধতিতে কেনা যায় না। সেক্ষেত্রে RFQ বা কোটেশন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয় (যা বেশ সহজ ও দ্রুত)। এর সীমা সাধারণত:

  • পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে: প্রতি প্যাকেজে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা।

  • কার্য (Works) বা মেরামতের ক্ষেত্রে: প্রতি প্যাকেজে সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা।

    • এই সীমার মধ্যে কেনাকাটা করতে হলে অন্তত ৩টি বৈধ দরদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে দরের তুলনা (Price Quotation) করতে হয়।

সারসংক্ষেপ: আপনি যদি কোনো কোটেশন বা দাপ্তরিক জটিলতা ছাড়া তাৎক্ষণিক নগদ টাকায় কিছু কিনতে চান, তবে তার বিলের পরিমাণ ২৫,০০০ টাকার বেশি হতে পারবে না।

বিদ্র: আপনার দপ্তর বা প্রকল্পের ধরন (রাজস্ব বা উন্নয়ন) এবং সংশ্লিষ্ট কার্যালয় প্রধানের আর্থিক ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক সীমার কিছুটা তারতম্য হতে পারে, তবে প্রতি চালানে ২৫,০০০ টাকার সীমাটি সাধারণত সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সরবরাহকৃত ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০২৫’ (পিপিআর-২০২৫)-এর বিধি ৮১ এবং তফসিল-২ (সূত্র: পৃষ্ঠা ১৭৬, ক্রমিক নং ৮১) অনুযায়ী সরকারি ক্রয়ে নগদ কেনাকাটার (Direct Cash Purchase) সীমা নিচে উল্লেখ করা হলো:

সরাসরি নগদ ক্রয়ের সীমা:

  • প্রতিটি ক্রয়ে (Per Purchase): সর্বোচ্চ ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা

  • বার্ষিক সীমা (Annual Limit): একটি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১০.০০ (দশ) লক্ষ টাকা

শর্তাবলী: ১. জরুরি প্রয়োজন: শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে এবং নির্ধারিত আর্থিক সীমার মধ্যে এই পদ্ধতিতে পণ্য বা সেবা ক্রয় করা যাবে । ২. দরপত্র বা কোটেশন ছাড়া: এই সীমার মধ্যে ক্রয়ের জন্য কোনো দরপত্র (Tender) বা কোটেশন (Quotation) আহ্বানের প্রয়োজন নেই । ৩. বিভাজন নিষেধ: আর্থিক সীমা এড়ানোর জন্য কোনো প্যাকেজকে ভেঙে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা যাবে না। ২৫,০০০ টাকার বেশি মূল্যের কেনাকাটার জন্য সাধারণত কোটেশন (RFQ) বা দরপত্র (Tender) পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

PPR 2025 (New) । সরকারি ক্রয়সীমা বাড়লো: দ্রুত হবে কোটেশন প্রক্রিয়া, সুফল পাবেন উপজেলা দপ্তরগুলোও?

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *