পে-কমিশনের কাজে গতি ২০২৫। বৈষম্য দূর করে গ্রহণযোগ্য স্কেল প্রণয়নে সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে?
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পে-কমিশন, ২০২৫ তাদের কাজে গতি এনেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আজ ০৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে কমিশন সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় এবং বিকেল ২:০০ ঘটিকায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে পারে। একদিনে একাধিক সভার এই উদ্যোগ কমিশনের কার্যক্রমের গতিশীলতা ও দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে তাদের অঙ্গীকারকেই তুলে ধরে।
গত ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে নবম পে-কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকেই বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার বিষয়ে সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিজনিত কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন বেতন স্কেল এখন সময়ের দাবি।
গতিশীলতা ও প্রত্যাশা
পে-কমিশনের এমন ঘন ঘন বৈঠক ইঙ্গিত দেয় যে তারা নির্দিষ্ট সময়ের (৬ মাস) মধ্যেই সরকারের কাছে তাদের সুপারিশমালা জমা দিতে বদ্ধপরিকর। কমিশনের কাজ ইতোমধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের বেতন কাঠামো পর্যালোচনা, বিদ্যমান গ্রেড সংখ্যা কমানোর চিন্তা এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাতের সামঞ্জস্য রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা এগিয়েছে। অর্থ উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে নতুন পে স্কেল অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেট আকারে বাস্তবায়িত হতে পারে।
তথ্য ও বৈষম্য তুলে ধরার আহ্বান
যেহেতু কমিশন তাদের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে, এই মুহূর্তে সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে তাদের দাবি, তথ্য-উপাত্ত এবং বেতন-ভাতার বিদ্যমান বৈষম্যগুলো কমিশনের কাছে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা। সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য কমিশনের পক্ষে একটি যৌক্তিক, ন্যায্য এবং সবার জন্য গ্রহণযোগ্য বেতন স্কেল প্রণয়নে সহায়ক হবে। বিশেষ করে, বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতা এবং সর্বনিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক সুপারিশ প্রণয়নের জন্য তথ্যবহুল প্রস্তাবনা জরুরি।
পে-কমিশনের কার্যক্রমে এই গতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এখন প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও সুচিন্তিত মতামত, যা পে-কমিশনকে একটি টেকসই ও বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো সুপারিশ করতে সাহায্য করবে।
গতিশীলতা ধরে রেখে নতুন পে-স্কেল প্রণয়নের জরুরি তাগিদ: বৈষম্য দূর করার লক্ষ্য
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নবম পে-কমিশন, ২০২৫-এর চলমান কার্যক্রমে যে গতি এসেছে, তা সরকারি মহলে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের মেয়াদেই নতুন বেতন স্কেল গেজেট আকারে বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী হওয়ায়, কমিশনকে এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি যুগোপযোগী ও গ্রহণযোগ্য প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এই দ্রুততা বজায় রেখে কাজ করার পাশাপাশি, মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দীর্ঘদিনের বেতন বৈষম্য দূর করা এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি-কে গুরুত্ব দিয়ে একটি টেকসই কাঠামো তৈরি করা।
বৈষম্যহীন বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা: ১২টি গ্রেড ও ১:৪ অনুপাত
বিভিন্ন মহল থেকে পে-কমিশনের প্রতি জোরালো দাবি উঠেছে, তা হলো গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত যৌক্তিক করা। বর্তমানে থাকা ২০টি গ্রেডকে পুনর্বিন্যাস করে ১২টি গ্রেডে নামিয়ে আনা এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪-এ নির্ধারণ করা সময়ের দাবি। এই অনুপাতটি বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সর্বনিম্ন বেতনের প্রত্যাশা: মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়
কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে মূল বেতনের পরিমাণ নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু সর্বশেষ পে-স্কেল (২০১৫) ঘোষণার পর প্রায় ১০ বছর কেটে গেছে এবং এই সময়ে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই বর্তমান ৮,২৫০ টাকা সর্বনিম্ন মূল বেতন-কে তিনগুণের বেশি বাড়িয়ে ন্যূনতম ৩৫,০০০ টাকা করার দাবি উঠেছে। এই দাবিটি যৌক্তিক, কারণ:
- বাজার পরিস্থিতি: ১০ বছরে জীবনযাত্রার ব্যয়, বিশেষ করে খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসা খরচ বহুগুণ বেড়েছে।
- আগের স্কেলের প্রতিফলন: ২০১৫ সালের স্কেলে ২০তম গ্রেডের সর্বনিম্ন বেতন (৮,২৫০ টাকা) ছিল আগের স্কেলের (৪,১০০ টাকা) দ্বিগুণেরও বেশি। সেই হিসাবে, এবার ১০ বছরের মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে সর্বনিম্ন বেতন তিন গুণের বেশি হওয়া উচিত, যা প্রায় ২৫,০০০ টাকা থেকে ৩৫,০০০ টাকার কাছাকাছি দাঁড়ায়।
কমিশনের প্রতি আহ্বান
পে-কমিশনের প্রতি সকলের প্রত্যাশা, তারা যেন দ্রুততার সঙ্গে কাজ করলেও, কেবল সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়াকেই একমাত্র লক্ষ্য না করে। বরং, উপরে উল্লিখিত ১:৪ অনুপাত, ১২টি গ্রেড এবং বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সর্বনিম্ন বেতন-কে ভিত্তি ধরে এমন একটি সুপারিশমালা তৈরি করা উচিত, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে এবং দীর্ঘদিনের আর্থিক বৈষম্য ও অসন্তোষ দূর করে সরকারের কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করবে।