বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতার দাবী ২০২৫ । বিভিন্ন দাবি আদায়ে ১ মে হতে প্রেসক্লাবে গণ জমায়েতের ঘোষণা?

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ২০১৫ সালের পে-স্কেল ছিলো বৈষম্যমূলক দাবী করা হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের সাথে কর্মচারীদের বড় বৈষম্য বিরাজমান-গত সাত বছরে পে-স্কেল সংস্কারের দাবি করা হলেও তা করা হয়নি-পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতার দাবী ২০২৫

পে স্কেল ২০১৫ তে বৈষম্য গুলো কি কি? ২০১৫ সালের পে স্কেলে কিছু বৈষম্য ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: উচ্চ ও নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে বেতনের পার্থক্য। সরকারের উচ্চ ও নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে বেতনের ব্যবধান বেশি ছিল, যা বৈষম্য তৈরি করে। বেতন স্কেলের অনুক্রমিক বৃদ্ধি। বেতন স্কেলের অনুক্রমিক বৃদ্ধি তেমন ছিল না, যা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। নতুন বেতন স্কেলে পুরাতন বেতনধারীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য। পুরনো বেতন স্কেলে যারা ছিলেন, তাদের নতুন বেতন স্কেলে বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য দেখা যায়। এছাড়াও, কিছু কর্মচারী মনে করেন যে বেতন স্কেলে তাদের কাজের সাথে বেতন স্কেলের একটি সম্পর্ক থাকতে দরকার, যা ২০১৫ সালের পে স্কেলে তেমনভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

সরকারি কর্মচারীদের দাবী দাওয়া কি কি? সরকারি কর্মচারীদের প্রধান দাবিগুলো হলো বেতন বৃদ্ধি, বৈষম্যহীন পে-স্কেল বাস্তবায়ন, এবং মহার্ঘ ভাতা (DA) বৃদ্ধি। এছাড়াও, পদোন্নতি, টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড, পেনশনের সুযোগ সুবিধা, এবং চাকরির শর্তাবলী নিয়েও তাদের দাবি রয়েছে।  বৈষম্যহীন নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন এবং পে-স্কেল বাস্তবায়নের আগে ৫০% মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবি রয়েছে। বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার হার বৃদ্ধি এবং সকলের জন্য সমান হার নিশ্চিত করার দাবি রয়েছে। ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সব পদের জন্য পদোন্নতি এবং উচ্চতর গ্রেড প্রদানের দাবি রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের জন্য টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড নিশ্চিত করার দাবি রয়েছে। চাকরির প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণের দাবি রয়েছে। বর্তমান বেতন কাঠামোতে বৈষম্য দূর করার জন্য পে-কমিশন গঠনের দাবি রয়েছে। পেনশনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং পেনশনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা দূর করার দাবি রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদোন্নতি, টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড ইত্যাদি বিষয়েও দাবি রয়েছে। এই দাবিগুলো বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠন কর্তৃক উত্থাপিত হয়েছে এবং তারা সরকারের কাছে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলন ও কর্মসূচি পালন করে।

নিম্ন গ্রেডের সরকারি কর্মচারীগণ এখন কিভাবে সংসার চালাচ্ছে? নিম্ন গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের সংসার চালানো বর্তমানে বেশ কঠিন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় তাদের জীবনযাত্রার মান বেশ খারাপ। অনেক কর্মচারী অতিরিক্ত কাজ বা অন্য উপার্জনের পথ খুঁজে দেখেন। কিছু কর্মচারী সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যমেও আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় তাদের আয় তাদের জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে যথেষ্ট নয়। বেতন কম থাকায় তাদের জীবনযাত্রার মান খারাপ। তারা খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছু কর্মচারী তাদের আয় বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কাজ করে, যেমন: বিভিন্ন ধরনের আউটসোর্সিং বা অন্য কোনো ব্যবসা। কিছু কর্মচারী সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে, যেমন: শেয়ার বাজার বা অন্য কোনো বিনিয়োগ ক্ষেত্র। কিছু কর্মচারী তাদের পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করে বা অন্যান্য উপার্জনের পথ খুঁজে দেখে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য সম্প্রতি মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা তাদের বেতন বাড়াতে সাহায্য করবে।

নিম্নগ্রেডে সাকুল্য বেতন ১৪-১৫ হাজার টাকা দিয়ে বর্তমান বেতনে বাড়ি ভাড়াও দেওয়া যাচ্ছে না ফলে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন-কর্মকর্তাদের সাথে কর্মচারীদের বেতন ভাতার ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে যা নিরসন করা হচ্ছে না / ব্যক্তিগত ঋণ, জিপিএফ হতে টাকা উত্তোলন করেও কেউ কেউ সরকার চালাচ্ছে

বাংলাদেশের পে স্কেল কেন বৈষম্যমূলক? পে-স্কেলে গ্রেডগুলোর মধ্যে বেতন ব্যবধান বেশি, ফলে উচ্চ গ্রেডের কর্মচারীদের তুলনায় নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা অনেক কম বেতন পান। পে-স্কেলে বেতন বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম, যা কর্মচারীদের হতাশ করে। পে-স্কেলে মহার্ঘ ভাতার (dearness allowance) পরিমাণও অনেক কম, যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানকে আরও কঠিন করে তোলে। জ্যেষ্ঠ কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়, বিশেষ করে জাতীয় বেতন স্কেল ৯১-এর পূর্বে যারা উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) পেয়েছিলেন, তাদের তুলনায় পরে যারা পেয়েছেন, তাদের বেতন কম। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য দেখা যায়, যেমন – বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীদের বেতন কাঠামো এবং সুযোগ সুবিধার মধ্যে পার্থক্য।

Caption: Sova

বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষে স্থায়ী পে-কমিশন গঠন, টাইম স্কেল, , সিলেকশন গ্রেড পুন:বহাল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের মধ্যে সৃষ্ট পদ এবং বেতন স্কেল বৈষম্য নিরসনের জন্য সচিবালয়ের ন্যায়, সচিবালয়ের বাইরের সকল কর্মচারিদের এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়নের লক্ষ্যে

  1. দাবীনামা-০১: বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল প্রদানের লক্ষে পে-কমিশন গঠন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত অন্তবর্তী সময়ে ৫০% মহার্ঘ ভাতা (১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের জন্য) জানুয়ারী ২০২৫ থেকে কার্যকর করতে হবে।
  2. দাবীনামা ০২: যে সকল-কর্মচারিদের মূল বেতন শেষ ধাপে উন্নীত হয়েছে, তাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারি প্রতিনিধি রাখতে হবে ।
  3. দাবীনামা ০৩: সচিবালয়ের ন্যায় সকল সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের কর্মচারিদের পদ ও পদবী পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করে বৈষম্য দূর করতে হবে।
  4. দাবীনামা ০৪: ২০১৫ সালে পে-স্কেলে হরণকৃত ৩টি টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, দক্ষতাজনিত ২টি ইনক্রিমেন্ট ও বেতন জ্যৈষ্ঠতা পূর্ণর্বহাল এবং সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাচুইটির পাশাপাশি পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
  5. দাবীনামা ০৫: ব্লক পদে কর্মরত কর্মচারিসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে এবং টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারিদের টেকনিক্যাল পদ মর্যাদা দিতে হবে। আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মচারি নিয়োগ প্রথা বাতিল করতে হবে।
  6. দাবীনামা ০৬: বাজারমূল্যের ক্রমাগত উর্দ্ধগতি, জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফতির বিষয়টি বিবেচনা করে সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ। ১১-২০ গ্রেড কর্মচারিদের রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে ।
  7. দাবীনামা ০৭: উন্নয়নখাত হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারিদের প্রকল্পের চাকুরীকাল গণনা করে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা যাবে না মর্মে নং: অম/আবি(বাস্ত-৪)/বিবিধ-২০(উঃস্কেলঃ/০৭/৪৭ তারিখঃ ২৪-০৩-২০০৮ খ্রিঃ যোগে অর্থ মন্ত্রণালয় হতে জারীকৃত বৈষম্যমূলক আদেশ বাতিল করতে হবে।

কেন মহার্ঘ ভাতা দেওয়া উচিত?

মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) দেওয়া উচিত, কারণ এটি মুদ্রাস্ফীতির (inflation) কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিকে সামাল দিতে সাহায্য করে। এটি সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং পেনশনের সাথে যুক্ত একটি অতিরিক্ত ভাতা, যা মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হিসেবে দেওয়া হয়। মহার্ঘ ভাতা মুদ্রাস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।এটি সরকারি কর্মচারীদের তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সাহায্য করে, যাতে তারা তাদের কাজ ভালোভাবে করতে পারে। মহার্ঘ ভাতা কর্মচারীদের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত করে, কারণ এটি তাদের বেতনের সাথে যুক্ত। সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমে যাওয়ায় তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, কারণ তারা তাদের কাজ ভালোভাবে করতে পারে। মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য হ্রাস করতে সাহায্য করে। সুতরাং, মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

   
   
   

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *