আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারিতে কড়াকড়ি ২০২৫ । মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য অর্থ বিভাগের পরামর্শ বাধ্যতামূলক, নিয়ম না মানায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা?
দেশের টেকসই বাজেট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এমন যেকোনো প্রজ্ঞাপন, বিধি বা বিশেষ আদেশ (Statutory Regulatory Order – SRO) জারির আগে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে অর্থ বিভাগের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে এই বাধ্যবাধকতার কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’-এর বিধি-১৩ স্মরণ:
অর্থ বিভাগ তার প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ সরকারের ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’ এর ১৩ বিধি অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি, কর, শুল্ক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের মতামত নেওয়া আবশ্যিক। সরকারের বিধি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির ক্ষেত্রে এই নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণীয়।
বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা:
অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কর-বহির্ভূত রাজস্ব (Non-Tax Revenue – NTR) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত (Non-NBR) কর রাজস্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন রেইট বা ফি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন গ্রহণ করছে না। এই ধরনের আর্থিক বিষয়ে অনুমোদন না নেওয়ার প্রবণতা সামগ্রিক রাজস্ব আহরণ ও বাজেট বাস্তবায়নে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে অর্থ বিভাগ মনে করছে।
কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ:
এই পরিস্থিতিতে, টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং সুনির্দিষ্ট রাজস্ব নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’-এর বিধি-১৩ অনুযায়ী আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে অর্থ বিভাগের পরামর্শ বা মতামত গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হলো।

অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়া কি আর্থিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না?
সাধারণত না, বিশেষ করে যখন সিদ্ধান্তটি আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, বিধি, বা নীতি নির্ধারণ বিষয়ক হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের পরামর্শ বা সম্মতি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
তবে, এর কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে:
১. আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারিতে বাধ্যবাধকতা
মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক আর্থিক সংশ্লেষ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন (Notification), বিধি বা বিশেষ আদেশ (Statutory Regulatory Order – SRO) জারির ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
- আইনগত ভিত্তি: বাংলাদেশ সরকারের ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’ এর বিধি-১৩ অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি, কর, শুল্ক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অবশ্যই অর্থ বিভাগের মতামত নিতে হয়।
- উদ্দেশ্য: এই বাধ্যবাধকতার মূল লক্ষ্য হলো আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলার মান বজায় রাখা এবং দেশের বাজেট ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, কর-বহির্ভূত রাজস্ব বা ফি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির ক্ষেত্রে নিয়ম না মানায় অর্থ বিভাগ পুনরায় এই নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে।
২. অর্পিত আর্থিক ক্ষমতার আওতাভুক্ত সিদ্ধান্ত
মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহ তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং অর্পিত আর্থিক ক্ষমতার (Delegated Financial Power) আওতাভুক্ত বিষয়ে অর্থ বিভাগের সরাসরি সম্মতি ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অর্থ মঞ্জুরির আদেশ জারি করতে পারে।
- উদাহরণ: সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী এবং বিভিন্ন আর্থিক নিয়মা (যেমন জেনারেল ফিন্যান্সিয়াল রুলস) বলে, মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহকে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ব্যয়ের ক্ষমতা অর্পণ করা আছে। এই ক্ষমতার আওতাভুক্ত এবং অনুমোদিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ থাকলে, তারা নিজেরা মঞ্জুরি আদেশ জারি করতে পারে।
পার্থক্য: এটি সাধারণত নিয়মিত ব্যয় বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত যা বিদ্যমান নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়। কিন্তু যখন কোনো নতুন আর্থিক নীতি, কর হার বা ফি নির্ধারণ করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করতে হয়, তখনই অর্থ বিভাগের সম্মতি নেওয়া আবশ্যক।



