সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ । নতুন নিয়মে প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের কোটা ২০% এবং পদোন্নতির মাধ্যমে ৮০% করা হয়েছে?
২৮ আগস্ট, ২০২৫: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নতুন রূপ দিতে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে । এই বিধিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে । প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত এই গেজেটে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি, যোগ্যতা, বয়সসীমা, এবং কোটা সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে -সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫
নিয়োগ পদ্ধতি ও যোগ্যতা কি হবে? নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক পদে শুধু সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হবে । অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক পদের ৮০% পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ২০% সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে । প্রধান শিক্ষক সরাসরি নিয়োগের জন্য কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে । সহকারী শিক্ষক কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারবেন । সহকারী শিক্ষক (সঙ্গীত) সঙ্গীত বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অথবা স্নাতক ডিগ্রিসহ সঙ্গীতে এক বছরের ডিগ্রি থাকতে হবে । সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞানে স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অথবা সাধারণ স্নাতক ডিগ্রিসহ ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) ডিগ্রি থাকতে হবে ।
পরীক্ষা পদ্ধতি ও বয়সসীমা হবে? লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও দৈনন্দিন বিজ্ঞান, এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে মোট ৯০ নম্বরের পরীক্ষা হবে, যেখানে উত্তীর্ণ হতে ৫০% নম্বর পেতে হবে । লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবেন, যেখানেও ন্যূনতম ৫০% নম্বর পেতে হবে । আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে । তবে, সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য বিবেচিত হতে হলে প্রার্থীদের বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং এমন কোনো ব্যক্তিকে বিবাহ করা যাবে না যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন ।
কোটা ও অন্যান্য বিধান কি? নতুন বিধিমালায় শিক্ষক নিয়োগে কোটা বণ্টন স্পষ্ট করা হয়েছে । সরাসরি নিয়োগযোগ্য ৯৩% পদ মেধাভিত্তিক প্রার্থী দিয়ে পূরণ করা হবে, যার মধ্যে ২০% বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং ৮০% অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত । এছাড়াও, কোটাভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫% । ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রার্থীদের জন্য ১% । শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য ১% । যদি কোনো কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায়, তবে সেই শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাভিত্তিক প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করা হবে । গেজেটে আরও বলা হয়েছে যে, উপজেলা বা ক্ষেত্রবিশেষে থানাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা হবে ।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫ জারি করা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫ কেন জারি করা হলো? নতুন বিধিমালায় শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মান বাড়ানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয় পদের জন্যই ন্যূনতম স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেখানে কোনো স্তরে তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের জিপিএ/সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য নয়। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা এবং শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করা। আগের বিধিমালার জটিল কোটা পদ্ধতি পরিবর্তন করে নতুন নিয়মে একটি সরল ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা আনা হয়েছে। নারী কোটা বাতিল করা হয়েছে এবং মোট ৯৩% পদ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করার বিধান করা হয়েছে। কোটার বাকি ৭% এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এতে করে শিক্ষক নিয়োগে মেধার প্রাধান্য বাড়বে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫ গেজেট
প্রাথমিকে নিয়োগের প্রধান পরিবর্তনসমূহ । সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫, এ বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে । নিচে প্রধান পরিবর্তনগুলো উল্লেখ করা হলো
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: নতুন বিধিমালায় শিক্ষক পদে আবেদনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মান বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক উভয় পদের জন্যই কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক । পূর্বের বিধিমালার মতো যেকোনো বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই হবে না, বরং শিক্ষাজীবনে কোনো স্তরে তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের জিপিএ বা সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে না ।
- নিয়োগ পদ্ধতি ও পদোন্নতি: নতুন নিয়মে প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের কোটা ২০% এবং পদোন্নতির মাধ্যমে ৮০% করা হয়েছে । এর আগে এই কোটা ছিল ৬৫% সরাসরি এবং ৩৫% পদোন্নতি। এটি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের একটি বড় পরিবর্তন। অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষক পদে শুধুমাত্র সরাসরি নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে ।
- বয়সসীমা: প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক উভয় পদের জন্যই সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে ।
- কোটা পদ্ধতি: নতুন বিধিমালায় কোটার ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট পদের ৯৩% মেধাভিত্তিক প্রার্থী দিয়ে পূরণ করা হবে, যার মধ্যে ২০% বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং ৮০% অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত । এছাড়াও, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১% এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য ১% কোটা রাখা হয়েছে । কোটার কোনো পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে পদগুলো উপজেলা/থানার সাধারণ মেধাভিত্তিক প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে ।
- মৌলিক প্রশিক্ষণ: সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চাকরিতে যোগদানের পর ৪ বছরের মধ্যে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । তবে, ৫০ বছর বয়সে পদার্পণ করলে এবং সন্তোষজনক চাকরি থাকলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এই বাধ্যবাধকতা শিথিল করতে পারবে ।
নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া কি?
সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য ২ বছরের শিক্ষানবিশি স্তর থাকবে, যা প্রয়োজনে আরও ২ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে । পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশি কাল হবে ১ বছর । সরাসরি নিয়োগের পর ৪ বছরের মধ্যে মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা আবশ্যক । তবে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এই প্রশিক্ষণের বাধ্যবাধকতা শিথিল করতে পারবে । ২০১৯ সালের বিধিমালা রহিত করে এই নতুন বিধিমালা কার্যকর করা হয়েছে । তবে, পূর্বের বিধিমালায় নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ শর্ত প্রযোজ্য হবে ।
নতুন পদের সৃষ্টি 🎼🤸 শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য নতুন বিধিমালায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে: সহকারী শিক্ষক (সঙ্গীত) এবং সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা)। এর ফলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীত এবং শারীরিক শিক্ষায় বিশেষায়িত শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সঠিক নির্দেশনা পাবে।
| পদোন্নতির সুযোগ ও স্বচ্ছতা 📈 নতুন বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির কোটা বাড়িয়ে ৮০% করা হয়েছে, যা সহকারী শিক্ষকদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। এতে করে দীর্ঘ সময় ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত যোগ্য ব্যক্তিরা পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন, যা চাকরির প্রতি তাদের আগ্রহ এবং নিষ্ঠা বাড়াতে সাহায্য করবে। | নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ ✅ বিধিমালার লক্ষ্য হলো নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও সুশৃঙ্খল ও দ্রুত করা। উপজেলা বা ক্ষেত্রবিশেষে থানাভিত্তিক নিয়োগের বিধানের ফলে স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষক সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে। |