সোনালী ব্যাংকে সঞ্চয়ে মিলছে আকর্ষণীয় মুনাফা: ৩, ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি ডিপিএসের বিস্তারিত
ভবিষ্যতের নিরাপত্তা এবং নিশ্চিত মুনাফার আশায় যারা টাকা সঞ্চয় করতে চান, তাদের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক নিয়ে এসেছে আকর্ষণীয় ডিপিএস (Deposit Pension Scheme) সুবিধা। বর্তমানে ব্যাংকটি ৩ বছর, ৫ বছর এবং ১০ বছর মেয়াদি সঞ্চয় স্কিমে ৯% থেকে শুরু করে ১০% পর্যন্ত বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি মুনাফা প্রদান করছে।
মেয়াদ ও মুনাফার হার
সোনালী ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মেয়াদে মুনাফার হার নিম্নরূপ:
৩ বছর মেয়াদি: ৯% (বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি মুনাফা)
৫ বছর মেয়াদি: ৯.৫% (বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি মুনাফা)
১০ বছর মেয়াদি: ১০% (বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি মুনাফা)
কিস্তি ও ম্যাচিউরিটি শেষে প্রাপ্ত টাকার হিসাব
গ্রাহক তার সামর্থ্য অনুযায়ী মাসিক ১,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা (বা তার বেশি) কিস্তিতে এই সঞ্চয় শুরু করতে পারেন। বিশ্লেষণ অনুযায়ী কিছু উল্লেখযোগ্য কিস্তির হিসাব নিচে দেওয়া হলো:
| মাসিক কিস্তি (টাকা) | ৩ বছর শেষে (৯%) | ৫ বছর শেষে (৯.৫%) | ১০ বছর শেষে (১০%) |
| ১,০০০/- | ৪২,২৯৫/- | ৭৭,২৬৮/- | ২,০২,৬০৮/- |
| ২,০০০/- | ৮৪,৫৯০/- | ১,৫৪,৫৩৬/- | ৪,০৫,২১৬/- |
| ৫,০০০/- | ২,১১,২৭৫/- | ৩,৮৬,৩৪০/- | ১০,১৩,০৪০/- |
| ১০,০০০/- | ৪,২২,৫৫০/- | ৭,৭২,৬৮০/- | ২০,২৬,০৮০/- |
(দ্রষ্টব্য: উল্লিখিত টাকা থেকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উৎস কর ও আবগারি শুল্ক কর্তন করা হতে পারে।)
বোনাস সুবিধা
এই স্কিমের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো প্রদেয় বোনাস। ৩ বছর মেয়াদি স্কিমে ম্যাচিউরিটির সময় এককালীন কিস্তির সমপরিমাণ টাকা বোনাস হিসেবে পাওয়া যায়। যেমন—কেউ যদি মাসে ৫,০০০ টাকা জমা করেন, তবে মেয়াদ শেষে তিনি মুনাফার পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫,০০০ টাকা বোনাস পাবেন।
কেন সোনালী ব্যাংকে সঞ্চয় করবেন?
১. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা: সরকারি ব্যাংক হওয়ায় আমানত শতভাগ নিরাপদ।
২. চক্রবৃদ্ধি মুনাফা: সাধারণ মুনাফার চেয়ে চক্রবৃদ্ধি মুনাফায় সঞ্চিত অর্থ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৩. ঋণ সুবিধা: জমাকৃত টাকার বিপরীতে ৯০% পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের সুবিধা রয়েছে।
৪. সহজ প্রক্রিয়া: যেকোনো নিকটস্থ শাখা থেকে সহজেই এই হিসাব খোলা যায়।
মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীদের জন্য ছোট ছোট জমানো টাকা দিয়ে বড় একটি তহবিল গঠনে সোনালী ব্যাংকের এই ডিপিএস স্কিমগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

প্রবাসী বন্ধন প্রকল্পে কি দেশে আসা প্রবাসী ডিপিএস করতে পারবেন?
হ্যাঁ, সোনালী ব্যাংকের ‘প্রবাসী বন্ধন’ প্রকল্পে যারা বর্তমানে ছুটিতে দেশে এসেছেন অথবা যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন, তারাও ডিপিএস (DPS) হিসাব খুলতে পারবেন। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে।
নিচে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
কারা এই হিসাব খুলতে পারবেন?
বিদেশে কর্মরত প্রবাসী: যারা বর্তমানে প্রবাসে আছেন এবং বৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন।
ছুটিতে থাকা প্রবাসী: যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন কিন্তু পুনরায় ফিরে যাবেন।
বিদেশ ফেরত প্রবাসী: যারা স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসেছেন, তারাও তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার প্রমাণপত্র (যেমন: পাসপোর্ট বা ভিসার কপি) দেখিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটি খুলতে পারেন।
হিসাব খোলার প্রয়োজনীয় শর্ত ও নথিপত্র:
১. পাসপোর্টের কপি: পাসপোর্টের প্রথম পাতা এবং ভিসার পাতার ফটোকপি (যেখানে প্রবাসে থাকার প্রমাণ আছে)। ২. ছবি: আবেদনকারীর ৩ কপি এবং নমিনির ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। ৩. আয়কর সনদ (যদি থাকে): কিস্তির পরিমাণ বড় হলে টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতে পারে। ৪. আয়ের উৎস: প্রবাসী আয়ের (Remittance) বৈধ প্রমাণ বা আগের জমানো টাকার উৎস দেখাতে হয়।
সুবিধাসমূহ:
বেশি মুনাফা: সাধারণ ডিপিএসের তুলনায় এই প্রকল্পে মুনাফার হার কিছুটা বেশি হয়।
মেয়াদ: ৩, ৫ বা ১০ বছর মেয়াদে এই সঞ্চয় করা যায়।
টাকা উত্তোলন: মেয়াদ শেষে সঞ্চিত টাকা এবং মুনাফা এককালীন উত্তোলন করা যায়।
একটি বিশেষ পরামর্শ: আপনি যদি বর্তমানে বাংলাদেশে থাকেন, তবে আপনার পাসপোর্টের কপি এবং প্রয়োজনীয় ছবি নিয়ে নিকটস্থ সোনালী ব্যাংক শাখায় গেলেই তারা আপনার নামে হিসাবটি খুলে দিবে।


